দার্জিলিঙের একটি চা বাগানে। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলে চলে যাওয়া চা শ্রমিক পরিবারের ভোট উদ্ধারে ঘাসফুলের পথেই পা ফেলতে চলেছে পদ্ম? ঘুরছে এই প্রশ্ন। আগামী রবিবার সাম্প্রতিক কালের মধ্যে প্রথম বার বিজেপি চা শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করেছে। সমাবেশে চা শ্রমিকদের পাট্টা এবং আবাস দেওয়ার মতো দাবিকে সামনে রাখা হয়েছে। বিজেপি না করলেও গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে তৃণমূল বারবার চা শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করেছে এবং সেখানে উপস্থিত থেকেছেন দলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পাট্টা-সহ নানা বিষয়ের আশ্বাস দিয়েছেন এবং রাজ্য সরকার সেগুলির কিছু রূপায়িতও করেছে। চা শ্রমিকদের পাট্টা এবং আবাসের আশ্বাসেই পঞ্চায়েত ভোট এবং ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে তৃণমূল চা-বলয়ে বাজিমাত করেছে বলে বিজেপির একাংশ মনে করে। এ বার চা শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন এবং পাট্টা-আবাসের দাবি তোলায় চা-মহল্লার রাজনীতিতে চর্চা শুরু হয়েছে, বিজেপি কি তৃণমূলের দেখানো পথেই এগোতে চাইছে?
কেন হঠাৎ চা শ্রমিক সমাবেশ বিজেপির? তাও রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তথা সাংসদ স্মৃতি ইরানির মতো নেতা-নেত্রীদের এনে? সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত এবং উপনির্বাচনে চা-বলয়ের গেরুয়া ভোটের ক্ষয় দেখে আগামী লোকসভা ভোটের আগে সিঁদুরে মেঘ দেখেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। এত দিন বিজেপির হয়ে চা-বলয়ের তৃণমূলূস্তরে গিয়ে ভোট জোগাড় করত সঙ্ঘের বিভিন্ন শাখা। বর্তমান পরিস্থিতিতে সঙ্ঘের মূল্যায়ন— যে ভাবে তৃণমূল তথা রাজ্য সরকার পাট্টা এবং আবাসন নিয়ে তেড়েফুঁড়ে নেমেছে, তাতে একা সঙ্ঘের পক্ষে চা-বলয় রক্ষা করা সম্ভব নয়। আদিবাসী এলাকায় সঙ্ঘের বিদ্যালয় এবং আরও কয়েকটি শাখা সংগঠন চলে। সেগুলির প্রভাবও দিন দিন কমছে বলে সূত্রের দাবি। সঙ্ঘের দাবি, বিজেপি নেতারা চা-বলয়ের দাবি নিয়ে যথেষ্ট সক্রিয় নন।
সঙ্ঘের উত্তরবঙ্গের সম্পাদক তরুণ পণ্ডিত বলেন, ‘‘সঙ্ঘের একশো বছর পূর্তির আয়োজন নিয়ে সমন্বয় বৈঠক হবে। চা বাগানের শ্রমিকেরা নানা সমস্যায় জর্জরিত। আশ্বাস ছাড়া সে ভাবে কিছুই পাচ্ছেন না।’’ সঙ্ঘের তরফে শীর্ষস্তরে জানানো হয়, এই মুহূর্তে বিজেপি নেতারা চা-বলয় পুনরুদ্ধারে না নামলে আগামী লোকসভা ভোটে সমস্যা হবে। তার পরেই সাম্প্রতিক কালের মধ্যে প্রথম বার বিজেপি শুধুমাত্র চা শ্রমিকদের নিয়ে সমাবেশের আয়োজন করেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে চা শ্রমিকদের সমাবেশের আগের দিন, ৩০ সেপ্টেম্বর, শিলিগুড়িতেই সঙ্ঘের সমন্বয় বৈঠক। সেখানে সঙ্ঘের কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যস্তরের নেতাদের থাকার কথা। বিজেপিকে নিয়ে সঙ্ঘের আরও ৩১টি শাখা সংগঠন সেই বৈঠকে থাকবে বলে সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে।
বিজেপির প্রস্তুতি বৈঠকে স্থির হয়েছে, রাজ্য সরকার যে পরিমাণ জমি পাট্টা দেবে বলেছে, তা দ্বিগুণ করা হোক এবং সব চা শ্রমিককে আবাসন দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে ন্যূনতম মজুরি ৫০০ টাকা করার দাবিও রয়েছে। তবে যে দাবিগুলি তৃণমূল পূরণ করে চা-বলয়ে ভোট টানছে, সেই দাবিগুলিকেই বাড়িয়ে বলা হলে আখেরে বিজেপির লাভ কতটা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তাই সঙ্ঘের তরফে চা শ্রমিকদের জন্য কেন্দ্রীয় স্তরের কোনও ঘোষণাও রাখার কথা বলা হয়েছে। সে কথা বলতেই স্মৃতি ইরানির মতো কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে আনা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
জেলা তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি রাজেশ লাকড়া বলেন, ‘‘আগামী লোকসভা ভোটে বিপদের কথা বুঝেই হঠা সমাবেশ করে বিজেপি নেতারা চোখের জল ফেলবেন। কিন্তু চা-মহল্লা জানে, তৃণমূল সরকারই জমি দেবে, বাড়ি দেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy