আবার চার বছর পরে!
ফুটফুটে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে তাকে কোলে নিয়ে আনিচা পরভিন বলে উঠলেন, ‘‘সত্যিই ‘ইউনিক’ ব্যাপার! তাই না মা!’’
নাতির জন্য দোয়া করার পরে আনিচার মা জহুরা বেগম জানালেন, তিনি খুশি হলেও দারুণ চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন। কারণ, তার নাতির জন্মদিন হবে চার বছর অন্তর। জহুরা বেগম বললেন, ‘‘একেবারেই অন্য রকম লাগছে। ফুটফুটে বাচ্চাটার দ্বিতীয় জন্মদিন যখন পালন করব, তখন ওর ৪ বছর হয়ে যাবে। কী করা!’’ পাশ থেকে পাড়াতুতো এক আত্মীয় ফুট কাটলেন, ‘‘কিন্তু, ফি বছরের জন্মদিনের উপহার বাবদ খরচটা যে বেঁচে যাবে সেটা ভাবছেন না কেন!’’
ঘটনা হল লিপ ইয়ার। চার বছর পর পর ২৯ ফেব্রুয়ারি আসে। সে দিন কারও জন্ম হলেই এমন একটা ব্যাপার হয়ে যায়। যেমন হল শিলিগুড়ির বর্ধমান রোডের আনিচা পারভিনের। শুধু আনিচা নন, শিলিগুড়ির আশ্রমপাডা়র নিউ রামকৃষ্ণ নার্সিংহোমে সারা দিনে ৩টি শিশুর জন্ম হয়েছে। তা নিয়ে দিনভর সরগরম ছিল ওই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। সেখানকার স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ তথা কর্ণধার গোষ্ঠবিহারি দাস সংক্ষেপে জিবি দাস বললেন, ‘‘এটা একটা অন্যরকম ব্যাপার! সে জন্যই সকলের মধ্যে ভিন্ন মাত্রার অনুভূতি। চার বছর পর পর ওই সদ্যোজাতদের আমরাও নার্সিংহোমের তরফে জন্মদিনের কার্ড ও উপহার পাঠাব।’’
শিলিগুড়িতে এ দিন নার্সিংহোম ও হাসপাতাল মিলিয়ে অন্তত ৫০ টি শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছে। শুধু শিলিগুড়ি হাসপাতালেই ১৬টি শিশুর জন্ম হয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও শহরের ২৮ টি নার্সিংহোমেও কম বেশি ‘লিপ ইয়ার চাইল্ড’য়ের ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর রয়েছে। কয়েকজন অভিভাবক তো নিজেরাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘এমন তো সচরাচর হয় না। তাই একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।’’ লিপ ইয়ারেই জন্মেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই, ধ্রুপদি নৃত্যশিল্পী রুক্মিনীদেবী ও অরুণ ডালে।
কোচবিহারের শীতলখুচি থেকে শিলিগুড়ির আশ্রমপাড়ায় জিবি দাসের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন মান্তি সাহা। দুপুরেই তাঁর সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। সন্ধ্যায় সদ্যোজাতকে আদরের ফাঁকে মান্তি বললেন, ‘‘আমি তো প্রত্যেক বছরই ফেব্রুয়ারির শেষে জন্মদিন পালেনর কথা ভাবব। দেখা যাক কী হয়!’’
শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে দুই সদ্যোজাতকে নিয়ে তাদের লিপ ইয়ার জননীরা। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
দার্জিলিঙের গরুবাতান থেকে স্বস্তিকা ভূজেল দু’দিন আগেই ভর্তি হয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানে। সকালের দিকেই তাঁরও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব করানো হয়েছেন। তবে শিশুর সামান্য অসুস্থতার কারণে তাকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। স্বস্তিকা বললেন, ‘‘সত্যিই তো এটা আগে ভাবিনি। চার বছর পর পর জন্মদিন পালন করতে হবে! কোনও উপায় আছে কি না খুঁজে বার করতে হবে।’’
উপায় আবার কী! বছরের বাকি দিনগুলো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মেনে চললেও ১ বৈশাখ, ২৫ বৈশাখের মতো সন্তানের জন্মদিনেও না হয় বঙ্গাব্দ মেনে চলতে হবে। ১৬ ফাল্গুন তো প্রতি বছরেই আসবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy