ফাইল চিত্র।
২০০৪ সালের কোনও এক হেমন্তের সন্ধ্যা। আমার তখন গরুমারায় পোস্টিং। সরকারি কাজে লাটাগুড়ির প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্রে গিয়েছি। পর্যটকদের টিকিট দিতেন মানব। আফসোস করে বললেন, “সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এসেছিলেন। টিকিট দিতে পারলাম না। উনি দেরি করে এসেছেন।’’
আমি বললাম, “সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এসেছিলেন গরুমারা দেখবেন বলে, আর দেখতে যেতে পারলেন না! আমাকে তো খবরটি দিতে পারতে।’’ মানব একটু ভয় পেয়ে বলেন, ‘‘উনি তো সময় দিলেন না। যাওয়ার সময় শেষ হয়ে গিয়েছে শুনে গাড়িতে উঠে চলে গেলেন।’’
আমার মন খুব খারাপ হয়ে যায়। ভাবতে থাকি, কখন কী ভাবে দেখা করা যায়। মনে পড়ে, ১৯৭৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ দেখার অনুভূতি। ঠিক সেই সময় একটা ফোন আসে। মেটেলি থানার ওসি, ভ্রাতৃসম অনুপমের ফোন। বলেন, “দাদা, আগামী কাল সকালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় গরুমারা যেতে চান। কী করব?” আমি রোমাঞ্চিত হয়ে বলি, “ঠিক আছে, নিয়ে এসো।’’ আমার অবস্থা হাতে স্বর্গ পাওয়ার মতো। যথাস্থানে কথা বলে সকালে ওঁর যাওয়ার ব্যবস্থা পাকা করে ফেললাম। ঘোরের মধ্যে রাত কেটে গেল।
সকালে গরুমারা চেকপোস্টে ওঁকে নিয়ে আসে অনুপম। আমরা ওঁকে নিয়ে যাই সোজা যাত্রাপ্রসাদ নজর মিনারে। দেখলাম, গাড়ি থেকে নেমে আসছেন সৌম্য লম্বা ঋজু এক ব্যক্তি। আমার কৈশোরের ফেলুদা। অনুপম পরিচয় করিয়ে দিলেন। মনে হল, ওঁর মগজাস্ত্র দিয়ে ঘ্যাচাং করে আমার মনের মধ্যে ঢুকে সব কথা বুঝে ফেলছেন। আমার সবাই তখন রোমাঞ্চিত, উত্তেজিত। উনি আস্তে আস্তে এগিয়ে আসেন টাওয়ারে মঞ্চের উপর। জঙ্গল সম্বন্ধে নানা জিজ্ঞাসার উত্তর খোঁজেন আমার কাছে। কথায় কথায় বলেন, ‘‘এখানে বাঘ আছে?’’ বললাম, ‘‘না। হ্যাবিট্যাট ফ্র্যাগমেন্টেট হয়ে গেছে।’’ দেখলাম ওঁর চোখ দুটি চিক চিক করে উঠল। তবে হতাশ হলেন না। দূরবীন চোখে দেখলেন চিতল, গন্ডার, ভারতীয় বাইসন। অনুপম বললেন, ‘‘এখানে হাতিও দেখা যায়।’’ উনি বলেন, “বনে আসাটাই বড়। কী দেখলাম সেটা বড় নয়।’’ উনি চার পাশ দেখছিলেন। বললেন, “জঙ্গল কী সুন্দর। আমরা তার কতটুকু জানি।”
(বর্তমানে সহকারী বন সংরক্ষক, মহানন্দা অভয়ারণ্য)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy