ওদলাবাড়ি স্টেশনে, কাপুরুষ-এর শুটিংয়ে।
১৯৬৪ সাল। ডুয়ার্সের ওদলাবাড়ি তখন নামগোত্রহীন এক রেল স্টেশন। তার প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে এক মনে সিগারেট খাচ্ছেন ছয় ফুট লম্বা এক সৌম্যকান্তি যুবক। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর আগে এ ভাবেই নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতেন তিনি। পাশেই সত্যজিৎ রায়। এর পর ‘লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন’ বলবেন তিনি। শুরু হবে ‘কাপুরুষ’-এর শুটিং। সে দিনের সেই দৃশ্য এখনও স্মৃতিতে টাটকা হয়ে রয়ে গিয়েছে ওদলাবাড়ির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রশান্ত শিকদারের। তিনি বলেন ‘‘সৌমিত্রের অবসান যেন আমার কিশোর বেলাকে ছিঁড়ে নিয়ে গেল।’’
‘আবার অরণ্যে’ কিংবা ‘দেখা’, একাধিকবার ডুয়ার্স সাক্ষী থেকেছে তাঁর অভিনয়ের। শুধু সিনেমা নয়, বাচিক শিল্পী সৌমিত্রের আবৃত্তির অনুষ্ঠান হয়েছে মালবাজার, চালসা সব জায়গাতেই। সংগঠকেরা তাই আজ স্মৃতিমেদুর। মালবাজারের ‘সাধনা’ সিনেমা হলে সৌমিত্রের আবৃত্তি শেষ হয়ে গিয়েছে। তার পরেও আসতেই থাকে অনুরোধ। তিনি বলেছিলেন ‘‘আমি আদিষ্ট হয়েছি আরও একটি কবিতা শোনানোর জন্যে। তাই এখনই উঠে যাবেন না।’’ নাটক করতেও ডুয়ার্সে এসেছিলেন তিনি। ওদলাবাড়ির ইউনিয়ন ক্লাবে মেয়ে পৌলমীকে নিয়েও এসেছেন তিনি।
সৌমিত্রের ডাকনাম পুলু। সমিত ভঞ্জকে নিয়ে ডুয়ার্সের জঙ্গলে যখন গৌতম ঘোষের ‘আবার অরণ্যের’ শুটিং চলছে, তখন সমিত ক্যানসারের অন্তিম চরণে। সমিতের একটি আবেগঘন সংলাপ ছিল, ‘‘এই নদী, অরণ্য সব থাকবে, শুধু আমি থাকব না।’’ সংলাপের পরেও নিজেকে সামলাতে পারেননি সমিত ভঞ্জ। সেই সময় তাঁর প্রিয় পুলুদাই এগিয়ে এসেছিলেন, বুঝিয়েছিলেন সমিতকে। তিনি বোঝান, এটা তো থাকার জায়গা নয়। এটা আসা ও যাওয়ার মাঝখানে কিছু সময় কাটানোর স্থান। তাঁর কথায় তখনকার মতো শান্ত হয়েছিলেন সমিত। সৌমিত্র নিজেও, একই ভাবে নিজস্ব সময় কাটিয়ে এ বার বিদায় নিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy