একমাস পরেই অবসর নেবেন। চাকরি জীবনের একেবারে শেষ কিনারায় এসে সাসপেন্ড হয়ে গেলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের ডিআই নারায়ণচন্দ্র সরকার। দাড়িভিট-কাণ্ডের জেরেই তাঁকে এই শাস্তির মুখে পড়তে হল বলে সরকারি নির্দেশেই পরিষ্কার। যদিও এই বয়সে এমন ঘটনায় হতভম্ব নারায়ণ। কিন্তু সরকারি সূত্রেই প্রকাশ, উত্তর দিনাজপুরের ডিআই পদে থাকাকালীন জেলা জুড়ে শিক্ষক নিয়োগে বিস্তর অনিয়ম হয়েছে। দাড়িভিট হাইস্কুলও সেই তালিকায় রয়েছে।
সাসপেন্ড করা নিয়ে তাঁকে পাঠানো চিঠিতে কিছু উল্লেখ নেই দাবি করে নারায়ণের বক্তব্য, ‘‘শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও বিষয় নিয়েই আমাকে এই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমার সময় শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া যেমন হয়েছে, তেমনই আমি চলে আসার পর গত অগস্টেও শেষ এক দফায় নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজকর্ম চলেছে। তাই কখন কী গোলমাল হয়েছে তা বলা সম্ভব নয়।’’ তবে প্রশাসনিক সূত্রের খবর, নারায়ণ উত্তর দিনাজপুরে থাকাকালীন বিভিন্ন স্কুলে নিয়োগের যে তালিকা তৈরি হয়েছিল, তা ভুলে ভরা। জেলায় উচ্চমাধ্যমিক স্তরের জন্য প্রকৃত শূন্যপদ যেখানে ১৫৩টি, সেখানে প্রায় চারগুণ বেশি শিক্ষক চাওয়া হয়েছিল। সেইমতো স্কুল সার্ভিস কমিশন নিযোগ করেছে। আবার অনেক স্কুল শূন্যপদের যে তালিকা দিয়েছিল, তা থেকে অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে খুশিমতো। ওই সূত্রটিই জানিয়েছে, দাড়িভিট স্কুলেরও ইতিহাস, বাংলা এবং ভূগোল শিক্ষকের দাবিই আগে ছিল। তার বদলে উর্দু এবং সংস্কৃতের শিক্ষক পাঠানো হয়। ওই স্কুলের ২১টি শূন্যপদের জন্য আবেদন করা হলেও ১৬টি কমিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এমনকী, নিয়োগ তালিকা দেখভালের জন্য বিশেষ কম্পিউটার ব্যবস্থায় বিশেষ পাসওয়ার্ড দফতরের এক কর্মীই নিয়ন্ত্রণ করতেন।
পরবর্তীকালে পাশ কোর্সের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৩০ জনেরও বেশি শিক্ষককে বিভিন্ন স্কুলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের বেতন কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তখন ডিআই ছিলেন নারায়ণই। সেইসব শিক্ষক কোন ক্যাটেগরিতে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। পাশাপাশি, তিনি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক থাকাকালীন জেলার ন’টি ব্লকের প্রায় ৫০টি হাইস্কুলে মিড-ডে মিলের আর্থিক হিসেবেও বহু অসঙ্গতির অভিযোগ ওঠে।
এবিটিএর উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক বিপুল মিত্র বলেন, ‘‘নারায়ণবাবু জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক থাকাকালীন তাঁর কাজকর্ম নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। কিন্তু সেইসময় তাঁর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট করে কোনও অভিযোগ শুনিনি। পরে শুনলাম, জেলা থেকে যাওয়ার আগে তিনি কোনও অসদুদ্দেশ্যে পাশ কোর্সের বেতন কাঠামোর শিক্ষকদের একাংশকে বেআইনি ভাবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বেতন কাঠামোর অন্তর্ভূক্ত শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy