Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

রাস্তা পেরোনোর ব্যবস্থা নেই, দুর্ঘটনা বাড়ছে জাতীয় সড়কে

জাতীয় সড়কের ধারেই স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, বিডিও অফিস, জমজমাট শপিং মলও। কিন্তু পারাপারের জন্য কোনও আন্ডারপাস কিংবা উড়ালপুল নেই। নিদেনপক্ষে একটা ফুট ওভারব্রিজও তৈরি হয়নি। ফলে, রাস্তা পেরোতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে শিলিগুড়ির মাটিগাড়া থানার উত্তরায়ণ থেকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া এলাকা পর্যন্ত।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:০৩
Share: Save:

জাতীয় সড়কের ধারেই স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, বিডিও অফিস, জমজমাট শপিং মলও। কিন্তু পারাপারের জন্য কোনও আন্ডারপাস কিংবা উড়ালপুল নেই। নিদেনপক্ষে একটা ফুট ওভারব্রিজও তৈরি হয়নি। ফলে, রাস্তা পেরোতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে শিলিগুড়ির মাটিগাড়া থানার উত্তরায়ণ থেকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া এলাকা পর্যন্ত।

গত তিন মাসে উত্তরায়ণ উপনগরী থেকে বাগডোগরা অবধি কিলোমিটার দশেক রাস্তায় কমপক্ষে ৩০টি ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের তথ্য অনুসারে, প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচ জন। শুধুমাত্র মাটিগাড়া থানায় অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা হয়েছে পাঁচটি। প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই সাইকেল, বাইক আরোহী বা পথচারীরা নিয়ন্ত্রণ হারানো বাস, ডাম্পার বা বেপরোয়া ভাবে চলা গাড়িচালকদের শিকার।

কিন্তু রাস্তার দোষও কম নয়। কয়েক মাস ধরে এলাকার বড় অংশে নেপালের পানিট্যাঙ্কি থেকে ফুলবাড়ি অবধি শুরু হয়েছে এশিয়ান হাইওয়ে ২-এর কাজ। এতে বিশেষ করে, বাগডোগরা, বিহার মোড়, শিবমন্দির, গোঁসাইপুর, মেডিক্যাল মোড় এলাকায় রাস্তার দু’পাশে জমি অধিগ্রহণ করে কাজ শুরু হওয়ায় জাতীয় সড়ক অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছে। বাসিন্দারা জানান, মেডিক্যাল মোড় থেকে দার্জিলিং মোড় অবধি নানা বাঁকে সন্ধ্যা এবং সকালের দিকে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। তাঁদের বক্তব্য, রাস্তা পারাপারের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকলে অন্তত পথচারীদের বিপদে পড়তে হত না।

চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার, সন্ধ্যার আগে রাজমিস্ত্রির কাজ শেষ করে সাইকেলে শিবমন্দিরের দিকে বাড়ি ফিরছিলেন রামকুমার রায়। যিশু আশ্রমের কাছে হঠাৎ উল্টো দিক থেকে একটি ছোট গাড়ি বেআইনি ভাবে রাস্তা পার হয়ে আচমকা এ পাশে এসে সজোরে ধাক্কা দেয় রামকুমারবাবুকে। মাটিতে ছিটকে পড়েন তিনি। চোট পান হাতে, পায়ে ও বুকে। এলাকার মানুষ এবং অন্য গাড়ির চালকেরা দৌড়ে গাড়িটি আটক করেন। রামকুমারবাবুকেও উদ্ধার করেন তাঁরা। মাটিগাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। তিনি বাড়ি ফিরেছেন।

কিন্তু ৯ ডিসেম্বর শিলিগুড়ির নতুনপাড়ার গোবিন্দ সিংহ বা ১৩ ডিসেম্বর গোঁসাইপুরের বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী অদিতি ঘোষের আর বাড়ি ফেরা হয়নি। টিউশন পড়ে ফেরার পথে বড় ডাম্পারের ধাক্কায় জাতীয় সড়কেই লুটিয়ে পড়ে প্রাণ গিয়েছে ফুটফুটে কিশোরীর। তারও আগে উত্তরায়ণের সামনে বাইকের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে আরও এক জনের।

যেমন শিবমন্দিরের বাসিন্দা তথা পেশায় বিএসএফ স্কুলের শিক্ষক সুমন্ত দে বলেন, ‘‘রাস্তা বড় হচ্ছে, খুবই ভাল বিষয়। কিন্তু রাস্তা পারাপার করতে বা ধার দিয়ে যাতায়াত করতেও নাকাল হতে হচ্ছে। যানজট ছাড়াও প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে। শিবমন্দিরে বাজারঘাট থেকে কাজকর্মে রাস্তা পারাপার ছাড়া গতি নেই। এর পরে চার লেন বা দুই লেনের রাস্তা হলে গাড়ি আরও জোরে চলবে। তখন যে কী হবে!’’

আবার নকশালবাড়ির রথখোলার বাসিন্দা প্রতিবন্ধী রাজকুমার নস্কর রাস্তা নিয়ে আরও চিন্তায় পড়েছেন। রাজকুমারবাবু বাড়ির সামনেই যেমন চার লেনের রাস্তা হচ্ছে, তেমনই কর্মসূত্রে তাঁকে বাগডোগরায় আসতে হয়। রাজকুমারবাবু কথায়, ‘‘বাগডোগরায় যে কী ভাবে রাস্তা পার হই আমিই টের পাই। ফুট ওভারব্রিজ বা আন্ডারপাস ছাড়া গতি নেই।’’

শিলিগুড়ি শহর থেকে বাগডোগরা বা বিমানবন্দরের দূরত্ব মেরেকেটে ১৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ বলে পরিচিত দার্জিলিং মোড় থেকে উত্তররায়ণ উপনগরী হয়ে খাপরাইল মোড় অবধি রাস্তা। পুলিশ আবাসনের সামনে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে। উত্তরায়ণ উপনগরীর মধ্যে সিটি সেন্টারে দফতর রয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ী সম্রাট সান্যালের। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘যানজটের কথা ছেড়েই দিলাম। আধ ঘণ্টার রাস্তা পৌঁছতে এক ঘণ্টার উপরে লেগে যাচ্ছে। তেমনই প্রায়ই দেখছি দুর্ঘটনা হচ্ছে। উপনগরীর সামনে পুলিশ থাকলেও বেপরোয়া গাড়ির দৌরাত্ম্য রুখতে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ নজরদারি প্রয়োজন।’’

খাপরাইল মোড়ের পরে ফাঁসিদেওয়া মোড় হয়ে জাতীয় সড়ক গিয়েছে মেডিক্যাল মোড়ে। সেখানেই পানিট্যাঙ্কি থেকে এসে জুড়বে এশিয়ান হাইওয়ের রাস্তাটি। তার পরে সেটি মাটিগাড়া চা বাগান হয়ে মেডিক্যাল কলেজের দিকে চলে যাবে। বাসিন্দারা জানান, রাস্তার কাজ শুরু হতেই রাস্তার দুই পাশের মাটি কেটে নিচু করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তাটি ছোট হয়ে পড়ায় সমস্যা বেড়েছে। অনেকে ছোট গাড়ি, বাইক নিয়ে পাশের নিচু এলাকায় পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছেন। এলাকার ফাঁসিদেওয়া মোড়ে মেয়েদের ইংরেজি মাধ্যম সেন্ট জোসেফ স্কুল, শিবমন্দিরে নরসিংহ বিদ্যাপীঠ হাইস্কুল ছাড়া একাধিক স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, আইন কলেজ, বিএড কলেজ রয়েছে। সাধারণ বাসিন্দারা তো বটেই, রোজ ছেলেমেয়েরা যাতায়াত করছে। গাড়ির দৌরাত্ম্যে প্রাণ হাতে রাস্তা পারাপার করতে হচ্ছে।

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলছেন, ‘‘দার্জিলিং মোড়, সিটি সেন্টারের মতো কয়েকটি এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে ঠিকই। তবে এলাকা ধরে ধরে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আর এশিয়ান হাইওয়ে হলে গাড়ির আরও গতি বাড়বে ঠিকই। তবে নির্দিষ্ট ‘জংশনে’ সিগানালিং ব্যবস্থা থাকবে। গাড়ি চালক এবং বাসিন্দাদেরও আরও সতর্ক হতে হবে।’’ প্রশাসনিক দফতর সূত্রের খবর, এশিয়ান হাইওয়েতে বাগডোগরায় এবং মেডিক্যাল মোড়ে উড়ালপুল হবে। এশিয়ান হাইওয়ের প্রজেক্ট ডিরেক্টর নির্মল মণ্ডল জানান, রাস্তাটি ওই এলাকার দু’টি বড় অংশ দু’টি উড়ালপুলের উপর দিয়েই যাবে। গাড়ি উপর দিয়েই চলবে। নীচের রাস্তায় বাসিন্দাদের জন্য সিগন্যালিং ব্যবস্থাও থাকবে।

অন্য বিষয়গুলি:

siliguri calcutta high way accidents
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE