Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

দিশা মিলতে পারে পাহাড়, বাগানে

উত্তরবঙ্গে পাহাড়ে গরিবি রয়েছে। পাহাড়ে আবহাওয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সেখানে জমি নেই। এই যে বিভিন্ন সময়ে পাহাড়ে আন্দোলন হয়, তার পিছনেও একটা বড় কারণ দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

জেতা সাংকৃত্যায়ন
শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:৪৫
Share: Save:

এই রাজ্যের একজন ব্যক্তি অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন এটা খুবই আনন্দের, গর্বের ব্যাপার। এই বাংলা থেকে পড়াশোনা করে বড় হয়ে বাইরে গিয়ে সুনাম পেলেন। অমর্ত্য সেনের পর আর এক জন মানুষকে আমরা পেলাম। দুই ব্যক্তিত্বর কাজেও মিল রয়েছে। অর্থনীতির মধ্য দিয়ে তাঁরা উন্নয়নের দিশা দেখিয়েছেন। সেটা আমাদের উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রেও সমান প্রাসঙ্গিক। কেন না, এখানে পাহাড়ে, চা বাগান, সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে দারিদ্র রয়েছে। তাতে উত্তরণের পথ কী হতে পারে, সে বিষয়ে তাঁর গবেষণা সাহায্য করবে।

উত্তরবঙ্গে পাহাড়ে গরিবি রয়েছে। পাহাড়ে আবহাওয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সেখানে জমি নেই। এই যে বিভিন্ন সময়ে পাহাড়ে আন্দোলন হয়, তার পিছনেও একটা বড় কারণ দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই। উত্তরবঙ্গের চা বাগানে দারিদ্র রয়েছে। নারী পাচার, শিশু পাচার রয়েছে। সেই পরিস্থিতির মধ্যে একজন জন্মাচ্ছেন, তার মধ্যে বড় হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন। একটা জীবন কেটে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটা শিক্ষারও দিক আছে। উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলোতে এখন পঞ্চম প্রজন্ম বাস করছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে এমজিএনআরইজিএ কিন্তু একটা পথ দেখিয়েছে। অনেকে এই প্রকল্পে চা বাগানের কাজ ছেড়ে মাটি কাটা-সহ বিভিন্ন কাজ করতে বার হচ্ছেন। এখানে আদিবাসী, নেপালি নানা জাতি, নানা ভাষাভাষী রয়েছেন। তাঁদের জীবনযাত্রায় শিক্ষা, স্বাস্থের যে ভূমিকা রয়েছে, তা-ও গুরুত্বপূর্ণ। এ সমস্ত প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের উন্নয়নের দিকটি অমর্ত্য সেনও তুলে ধরেছিলেন। সেটারই আবার পুনরাবৃত্তি ঘটল অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বের হাত ধরে। তাঁর মতে, গরিবের হাতে টাকা এলে তাঁরা কিন্তু নিজের মতো করে হিসেব কষে খরচ করবেন। অনেক কিছু তাঁরা করতে পারেন। সেটা নিয়েও অভিজিৎবাবু বলেছিলেন। এই কথাটা সারা বিশ্বের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের জন্যও খাটে। এখানে গরিবি সমস্যা। তেমনই সেই গরিবিতে সব থেকে ধাক্কা খায় যে শিশুরা, তাও যে কেউ পাহাড়ে বা চা বাগানে গেলে নিজের চোখেই দেখতে পাবেন। অভিজিতের তত্ত্বে তাই দেশ-কালের ভেদ নেই। সেই তত্ত্বকে সামনে রেখে, তাঁর সমীকরণকে ধরে কেউ যদি উত্তরবঙ্গের এই সব এলাকায় কাজ করেন, তা হলে সাফল্য আসাই স্বাভাবিক। আশা করব, অভিজিতের নোবেলপ্রাপ্তির পরে উত্তরবঙ্গে এই নিয়ে গবেষণা বাড়বে। হাতেকলমে কাজও বাড়বে।

উত্তরবঙ্গে এখন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় এনআরসি। একটা সময় বিপুল সংখ্যক মানুষকে স্থানান্তরিত হতে হয়েছিল। বাংলা ভাগ হওয়ার পরে, স্বাধীনতার পরে তারা কী ভাবে সেই পরিস্থিতির সঙ্গে, গরিবির সঙ্গে লড়াই করে ঘুরে দাঁড়াল, সেটা বিস্ময়ের। এই উত্তরবঙ্গেও তার প্রভাব রয়েছে। যিনি নোবেল পেলেন তিনি দিশা দেখাচ্ছেন যে, এ সব লড়াইয়ের একটা গবেষণা দরকার। যেটা এখন পর্যন্ত সঠিক ভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এ সব ক্ষেত্রে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কোন নীতি কাজ করবে, কী ভাবে নীতি নির্ধারণ করতে হবে— সে বিষয়ে দিশা রয়েছে বর্তমান নোবেল জয়ীর কাজে। কোনও ওষুধ কোম্পানিতে যে ভাবে সমীক্ষা করে দেখা হয় কোন ওষুধটা কাজে দিচ্ছে, কোনটা নয়, অনেকটা সে ভাবেই সারা বিশ্বে বিভিন্ন জায়গার গরিবদের অবস্থা খতিয়ে দেখে, কোন নীতি কাজ করছে তা দেখিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের এখানকার সমস্যাগুলো নিয়েও একই ভাবে দেখে নীতি নির্ধারণ করতে হবে। এখানে এ সব নিয়ে যারা কাজ করছেন অভিজিৎবাবুর কাজ সে কারণে তাঁদের উৎসাহ জোগাবে।

দেশ স্বাধীন যখন হয়েছিল তখন ‘গরিবি হটাও’ লক্ষ্য ছিল। সেটা কিন্তু হারিয়ে গিয়েছিল মাঝে। সেটাই তিনি মনে করিয়ে দিলেন। তাঁর যে কাজ নোবেল কমিটির স্বীকৃতি পেল, তা বিভিন্ন এলাকার ছোটখাট সমস্যা নিয়েও ভাবতে শেখাবে। চা বাগান, পাহাড়ের সমস্যা— এ সব যে গুরুত্বপূর্ণ তা ‘পুয়োর ইকোনমিক্স’-এর আলোচনা থেকে বোঝা যায়। তিনি বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন জায়গা ঘুরে গরিব মানুষের পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের চা বাগান এলাকার, পাহাড়ের মানুষের পরিস্থিতি, এখানকার মানুষের দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে নারী পাচার ঘটছে— এ সবও যে ভাবার বিষয়, সেটাই যেন পক্ষান্তরে বলেছেন তিনি। যাঁরা নীতি নির্ধারণ করছেন, তাঁরা এগুলো খেয়াল রাখলে ভাল হবে।

তার পরিবার প্রেক্ষাপটও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। কেন্দ্রীয় তহবিলে গড়ে ওঠা সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশ্যাল সায়েন্স-এর সঙ্গে তিনি যুক্ত। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত অনেকে তাঁদের কাছে পড়েছেন। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ‘উইমেন স্টাডিজ় সেন্টার’ হল, তার জন্য তিনি সহায়তা করেছিলেন।

(উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা-বাণিজ্য বিভাগের প্রাক্তন ডিন। এখন সিকিম কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান)

অন্য বিষয়গুলি:

Nobel Prize 2019 Abhijit Banerjee Poverty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy