রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার প্রাণের ঠাকুর, মহাগুরু। ফাইল ছবি।
ভাষা, লিপি নিয়ে কাজ করি। শব্দ আমার কাছে ব্রহ্ম। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার প্রাণের ঠাকুর, মহাগুরু। আমার জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছেন জ্ঞানের এই সুমহান বটবৃক্ষ। তাঁর তরুলতার ছায়ায় বসেই আমি বাংলা কবিতায় বিচরণ করতে পারি। বাংলায় গান গাইতে পারি। আমার মতো আরও বহু মানুষই তা করতে পারেন। আসলে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটা বড় মাঠ তৈরি করে গিয়েছেন আমাদের সবার জন্য।
তবে তাঁকে জানার শুরুটা আমার কাছে খুব সহজ ছিল না। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ের কোলে প্রান্তিক এক টোটোপাড়ার বাসিন্দা আমি। ছোটবেলায় বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারতাম না। তবু বাংলামাধ্যম স্কুলেই ভর্তি হতে হয়েছিল। উত্তরের আদিবাসী সমাজের অনেকেই বাংলামাধ্যম স্কুল থেকেই পড়াশোনা শুরু করেন। সেখান থেকেই রবীন্দ্রনাথকে জানেন। তাঁর কবিতা-গান নিয়ে চর্চা করেন। আমারও বাংলা অক্ষরজ্ঞান বাংলামাধ্যম স্কুলেই। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচয় সেখানেই। ‘সহজ পাঠ’ও সেখানেই। কিন্তু তখন সে বইয়ের অক্ষর চিনলেও অর্থ বুঝতাম না। ধীরে ধীরে বড় হলাম। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা শেষ করে কোচবিহারের দিনহাটার স্কুলে ভর্তি হলাম। তার পরে, জোড়াই-রামপুরের স্কুল। তত দিনে বাংলা ভাষা ভালই শিখে গিয়েছি। মূলত, পাঠ্যপুস্তকের মধ্য দিয়েই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার হৃদয় অধিকার করে নিয়েছেন। আরও যখন সময় এগিয়ে গেল, তাঁর বহু লেখা পড়লাম। তাঁর নানা কাজের সঙ্গে পরিচয় ঘটল। হাতে এল ‘গীতাঞ্জলি’। তাঁর ‘কাবুলিওয়ালা’ আমার জগৎ নাড়িয়ে দিল। সে রচনা আমার মনে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত থেকে যাবে। যেমন থেকে যাবে তাঁর আরও বহু কবিতা আর তাঁর অমৃতসুধা গানের ভান্ডার।
আমার মতোই উত্তরের প্রান্তিক জনজাতির অগণন মানুষের হৃদয় জুড়ে রবীন্দ্রনাথ। কারণ, তিনি মানুষের অধিকারের কথাই বলে গিয়েছেন আজীবন। একটা কথা বুঝতে পারি আজ। বয়স যখন কম, তখন নানা ধরনের চটক বা আকর্ষণের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। কিন্তু একটা বয়স অতিক্রম করার পরে, রবীন্দ্রনাথ বন্ধু হয়ে যান। পথ দেখান। আমায় যেমন পথ দেখিয়ে চলেছে তাঁর গান, সুর, আখর,দর্শন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy