Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
International Women's Day

অস্বস্তির ‘বেড়া’ টপকে স্বনির্ভর সাহারা, ডলিরা

জেলায় প্রথম নওদা বাজারে ‘স্যানিটরি ন্যাপকিন’ তৈরির ইউনিট গড়ে ওঠে। ইউনিটের দায়িত্বে দয়াময়ী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা।

স্বনির্ভর দলের মহিলাদের সঙ্গে ডলি বিবি(মাঝে চশমা পরে)।

স্বনির্ভর দলের মহিলাদের সঙ্গে ডলি বিবি(মাঝে চশমা পরে)। নিজস্ব চিত্র।

অভিজিৎ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪ ০৮:৩২
Share: Save:

পরনে সাদা এপ্রন। এক তলা পাকা বাড়ির চৌকাঠ ডিঙিয়ে বেরিয়ে এলেন ডলি বিবি। কাঁধে ব্যাগ। ১০০ মিটার হেঁটে গিয়ে পৌঁছলেন এক হলুদ রঙের পাকা বাড়িতে। যে বাড়িতে তৈরি হয় প্রসূতিদের ব্যবহার করার ‘স্যানিটরি ন্যাপকিন’। চলতি কথায় ‘প্যাড’। ‘‘এই ১০০ মিটার পথ হাঁটা আট বছর আগেও সহজ ছিল না,’’ এক নিঃশ্বাসে বলেন ইংরেজবাজার নওদা বাজারের ‘প্যাড দিদি’ ডলি বিবি। ডলি বলেন, “আমাদের মতো অনেক মেয়ে বউয়ের বাড়ির বাইরে বেরোনোতেই আপত্তি থাকে। অস্বস্তি থাকে। ফলে, কাজ করা স্বপ্নের মতো। সে অবস্থায় প্যাড তৈরির মতো কাজ ছিল স্বপ্নের অতীত। তবে বেড়া তো কাউকে না কাউকে ভাঙতে হবে। বেড়া ভেঙেছি আমরা।’’

সাল ২০১৬। জেলায় প্রথম নওদা বাজারে ‘স্যানিটরি ন্যাপকিন’ তৈরির ইউনিট গড়ে ওঠে। ইউনিটের দায়িত্বে দয়াময়ী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। প্রসূতিদের ‘প্যাড’ তৈরি করেন তাঁরা। জেলার সরকারি হাসপাতাল ও মালদহ মেডিক্যাল কলেজে সে ‘প্যাড’ সরবরাহ হচ্ছে। প্রথম দিকে, প্যাকেট-পিছু (দশটির) ‘প্যাড’-এর দাম ৪৫ টাকা ছিল। এখন তা ৫৫ টাকায় বিকোচ্ছে। ‘প্যাড’ তৈরির জন্য প্রশাসনের তরফে মেশিন বসানো হবে। ফলে, কর্মসংস্থান বাড়বে বলে জানান দলের সদস্য মালবি খাতুন, সাহারা বিবিরা। এর নেপথ্যে বছর সাতচল্লিশের ডলি বিবি। তাঁর স্বামী আহমেদ মহলদার গাড়ির মিস্ত্রি ছিলেন। এখন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহক সেবাকেন্দ্রের কর্মী। তাঁদের ছেলে আশিস মালদহ কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র। ২০০৬ সালে প্রথম স্বনির্ভর দল তৈরিতে উদ্যোগী হন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ ডলি। দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী দশ মহিলা নিয়ে গড়ে তোলেন মদিনা দল। মহিলাদের মধ্যে ঋতুকালীন স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব ভাবাত তাঁকে। তাই ‘প্যাড’ গড়ার সরকারি প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজে স্বনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি কাজিগ্রাম পঞ্চায়েতে ৫৭৩টি দল গড়েন তিনি। কেউ আমসত্ত্ব, কেউ আমের আচার তৈরি করেন বা আনাজ চাষ করেন। ডলি বলেন, “আমি নিজে স্বনির্ভর হয়েছি। দল করে হাজার হাজার মেয়ে স্বনির্ভর হন।” স্বামী আহমেদ বলেন, ‘‘ডলি প্রথম থেকে স্বপ্নের পিছনে ছুটতে চেয়েছে। কাজ করতে চেয়েছে। এখন তো ও সংসার সামলে অন্যদেরও সাহায্য করছে। ওর জন্য গর্বিত।’’ সাহারা বলেন, “প্যাড তৈরির কাজ করব বাড়িতে মুখ ফুটে বলতে পারতাম না। এখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্যাড তৈরি করে স্বনির্ভর হয়েছি। ডলি দিদিকে পাশে সব সময় পেয়েছি।” জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, “মেয়েরা যাতে আরও ভাল ভাবে কাজ করতে পারেন সে জন্য স্যানিটরি প্যাড তৈরির যন্ত্র দেওয়া হচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Self reliance Malda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy