রিকশা, মোটরবাইকের ভিড় উপচে পড়ছে। যানবাহন বাড়লেও রাস্তা বাড়েনি মালদহ শহরে। —নিজস্ব চিত্র।
প্রতি মাসে এক হাজারের বেশি মোটরবাইকের রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে মালদহের মোটর ভেহিকেল দফতরে। মোটরবাইকের পাশাপাশি বেড়ে চলেছে চার চাকার গাড়িও। পিছিয়ে অটো রিকশা। দুই চাকা, চার চাকা ও অটোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে রিকশাও। অথচ মালদহ শহরে গাড়ি কিংবা রিকশা রাখার কোনও পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। রাস্তা দখল করেই গাড়ি রেখে কমিশনের ভিত্তিতে পার্কিং ফি আদায় করছে খোদ পুরসভা। শুধু তাই নয়, পার্কিংয়ের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় রথবাড়ির কাছে চার লেনের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’দিকের দু’টি লেন দখল করে ট্যাক্সি, ম্যাক্সি-ট্যাক্সি, মিনিট্রাক ও অটো স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে।
রথবাড়িতে স্টেশন রোড়ের উপরেই গড়ে উঠেছে অটো রিকশার স্ট্যান্ড। এর ফলে জাতীয় সড়কের দুই লেনে দিয়ে যানচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অটোরিকশার স্ট্যান্ডের জেরে স্টেশন রোড যেন অবরুদ্ধ। পাশাপাশি অবৈধ রিকশার দৌরাত্ম্যে শহরের মানুষ অতিষ্ঠ। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মালদহ মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের পক্ষ থেকে বারবার শহর যানজট মুক্ত করার জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু তারপরেও হুঁশ ফেরেনি পুরসভার।
প্রতিদিন মালদহ শহরের মানুষকে রাস্তায় বের হলেই যানজটের মুখে পড়তে হচ্ছে।
গত ২০ বছরে শহরে যানবাহনের সংখ্যা ৫০ গুণ বেড়ে গিয়েছে। অথচ শহরের রাস্তার দৈর্ঘ্য ২০ বছর আগে যা ছিল, এখনও তাই রয়েছে। ইংরেজবাজার পুরসভায় পাকা রাস্তার দৈর্ঘ্য ১৮৬.৯১ কিলোমিটার ও কাঁচা রাস্তার দৈর্ঘ্য ১৮৭.৫৫ কিলোমিটার।
ইংরেজবাজার পুরসভায় খাতায় কলমে দু’হাজার রিকশার রেজিস্ট্রেশন থাকলেও মালদহ শহরে ১০ হাজারেরও বেশি বেআইনি রিকশা প্রতিদিন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
বেআইনি রিকশার দাপটে শহরের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। যথেচ্ছ ভাড়া আদায় করছেন কয়েকজন রিকশা চালক। অথচ পুরসভার কোনও হেলদোল নেই।
মালদহ মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, “অবৈধ রিকশার জন্য মালদহ শহরে যানজট হচ্ছে। আমদের কাছে হিসাব রয়েছে, বৈধ লাইসেন্সের চেয়ে ১০ গুণ বেশি অবৈধ রিকশা মালদহ শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের দাবি অবৈধ রিকশাগুলিকে সনাক্ত করে তাদের শহরে চলাচল বন্ধ করে সিটি অটো চালু করা হোক। তবেই শহরের যানযট মুক্ত হবে।” তাঁর দাবি, রাস্তার মোড়ে মোড়ে সিগন্যাল লাগিয়ে যানজটের সুরাহা হবে না। উল্টে এতে শহরের মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে বলে তিনি মনে করেন।
ইংরেজবাজার পুরসভার উপপুরপ্রধান দুলাল সরকার বলেন, “ইংরেজবাজার পুরসভা থেকে ১৯৮২টি রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। গত ২০ বছরে মাত্র ১৮টি রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ইংরেজবাজার পুরসভা দুই হাজার রিকশার বৈধ লাইসেন্স রয়েছে।” কিন্তু মাত্র দু’হাজার বৈধ রিকশা থাকলে মালদহ শহরে প্রায় ১০ হাজার রিকশা প্রতিদিন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কেন?
উপপুরপ্রধানের জবাব, ইংরেজবাজার পুরসভার পার্শ্ববর্তী কোতোয়ালি, সাহাপুর, যদুপুর ১, ২ গ্রাম পঞ্চায়েত ও পুরাতন মালদহ পুরসভার রিকশা মালদহ শহরে ঢুকে শহরে যানজটের সৃষ্টি করছে।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের শুভদীপ মন্ডল বলেছেন, “একটি রিকশার লাইসেন্স নিয়ে চার-পাঁচটি করে রিকশা অবৈধ ভাবে চলছে। পুরসভা সবই জানে। কিন্তু কেউই সেই সমস্ত বেআইনি রিকশা বন্ধ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হচ্ছে না। এর ফলে দিনের পর দিন মালদহ শহরে অবৈধ রিকশার দাপট বেড়েই চলেছে।” রথবাড়ি রেলগেটের কাছে একটি জলাশয় ভরে সেখানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছিল পুরসভা। কিন্তু তার কাজ মাঝ পথে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
পুরপ্রধান তথা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর বক্তব্য, “শহরের পার্কিং সমস্যা সমাধান করতে ফোয়ারা মোড়ের কাছে পুরাতন হাসপাতালের জমিতে আন্ডার গ্রাউন্ড পার্কিং গড়ে তোলা হবে। তাতে শহরের পার্কিং সমস্যা মিটে যাবে।”
কিন্তু কবে সেই ভূগর্ভস্থ পার্কিং তৈরির কাজ শুরু হবে তা পুরসভার কেউই বলতে পারছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy