এক সপ্তাহের মধ্যে দু’বার ঘোষণা করেও চা শ্রমিকদের মজুরি স্থির করার ত্রিপাক্ষিক বৈঠক পিছিয়ে দিয়েছে শ্রম দফতর। এই ঘটনা চা শ্রমিকদের অসহিষ্ণু করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা ডান-বাম শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের নেতৃত্বদের।
মজুরি বকেয়া রাখার অভিযোগে ২২ নভেম্বর মালবাজারের সোনালি চা বাগানের মালিককে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে শ্রমিকদের একাংশের বিরুদ্ধে। কিছুদিন পরেই শ্রমিকদের অভিনন্দন জানিয়ে মাওবাদী সংগঠন পোস্টার লাগায় বলে প্রশাসন জানতে পারে। বিষয়টি জানতে পেরেই ৮ ডিসেম্বর ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে বলে শ্রম দফতর ঘোষণা করেছিল। গত সপ্তাহে সেই বৈঠক বাতিল করে বৃহস্পতিবার বৈঠক হবে বলে শ্রম দফতর ঘোষণা করেছিল। মঙ্গলবার ফের বৃহস্পতিবারের বৈঠক বাতিল করে ১৫ ডিসেম্বর দিন স্থির করেছে শ্রম দফতর। বারবার বৈঠকের দিন পিছোনোয় সরকারের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। চলতি বছরের এপ্রিলেই চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ার কথা থাকলেও, কবে তা হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
শ্রম দফতরের উত্তরবঙ্গের যুগ্ম কমিশনার মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, “অনিবার্য কারণে বৈঠক পিছনো যেতে পারে। ক্যাবিনেট মিটিং পড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে ১৫ ডিসেম্বর স্থির হয়েছে। মাত্র তিন দিন বৈঠক পিছিয়েছে। শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে শ্রম দফতর আন্তরিক।”
চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে এর আগে ৬টি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়ে গেলেও, সমাধান হয়নি। মজুরি চুক্তির দ্রুত নিষ্পত্তির দাবিতে ২১টি চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ নভেম্বরের দু’দিন চা শিল্পে ধর্মঘটও ডেকেছিল। তারমধ্যে একদিন উত্তরবঙ্গের চা বলয়ে সাধারণ ধর্মঘটও ছিল। যৌথ মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক জিয়াউল আলম অভিযোগ করে বলেন, “বারবার বৈঠক পিছিয়ে যাওয়ায় চা শ্রমিকদের মজুরি কবে বাড়বে তা নিয়েই অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে। এই ঘটনা চা শ্রমিকরা অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছেন। তবে আশার কথা সকলেই একজোট রয়েছেন।” তিনি বলেন, “চা শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে রাজ্য সরকার যে উদাসীন সেটাই প্রমাণ হয়েছে। ক্যাবিনেটের প্রথম আলোচনাসূচিই তো চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি হওয়া উচিত ছিল।”
চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা শুরু করে সরকারপক্ষ। যদিও, কী হারে মজুরি বাড়বে তা নিয়ে মালিক এবং শ্রমিকপক্ষ ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেনি। সরকারের তরফে তিন ধাপে ৩০-৫০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। যদিও যৌথ মঞ্চগুলির দাবি, চা শ্রমিকদের জন্য নূন্যতম মজুরি ব্যবস্থা চালু করতে হবে। শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন অবশ্য যৌথ মঞ্চে সামিল হয়নি। তৃণমূলের চা শ্রমিক সংগঠনের নেতা অলোক চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, “যৌথ মঞ্চের জন্যই মজুরি চুক্তি বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। চা শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে সরকার আন্তরিক। যৌথ মঞ্চ রাজি না হওয়াতেই আগের বৈঠকগুলিতে সমাধানসূত্র মেলেনি।”
বাগান খোলা নিয়ে স্মারকলিপি। ডুয়ার্সের বন্ধ হয়ে যাওয়া রহিমাবাদ চা বাগান দ্রুত খোলা-সহ একাধিক দাবিতে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলি একত্রিত হয়ে আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসকের কাছে স্মারকলিপি দিলেন। বাগান খোলা ছাড়াও, যতদিন বাগান বন্ধ থাকবে ততদিন শ্রমিকদের ত্রাণ, নিরাপত্তা, পানীয় জল,বিদ্যুত্, চিকিত্সা পরিষেবা চালু রাখার দাবি করা হয়। এছাড়া ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আলাদা ভাবে জেলা শাসক ও শ্রম দফতরে একই দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy