শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিং। নিজস্ব চিত্র।
কেউ অপেক্ষা করেছেন ৩ ঘণ্টা, কেউ বা ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন ৫ ঘণ্টা ধরে। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। বিকেল চারটে পনেরো মিনিট নাগাদ মিরিকের মানজু চা বাগানের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় সুবাস ঘিসিঙ্গের শরীর। বাড়ির সামনে জমে থাকা ভিড়ে তখন চোখের জল মুছছেন কেউ। আর কেউ বা অতীত হাতড়েছেন।
দার্জিলিং থেকে মিরিকের পথে যতবার গাড়ি থেমেছে, খাদা আর ফুলে ঢেকে গিয়েছে জিএনএলএফ সুপ্রিমোর শরীর। ২৭ বছর বয়সে মানজু চা বাগানের লেপচা খোপের পৈতৃক বাড়ি ছেড়েছিলেন ঘিসিঙ্গ। রবিবার বিকেলে সেই বাড়িতে নিয়ে আসা হয় ঘিসিঙ্গের মরদেহ। মিনিট পনেরো পরে সেখান থেকে অন্ত্যেষ্টির জন্য নিয়ে যাওয়া হয় প্রয়াত নেতার মরদেহ। এ দিন সকালে দার্জিলিঙে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিং ঘিসিঙ্গকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। সুবাস ঘিসিঙ্গের ছেলে মোহন সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে চামলিং কথা বলেন। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী ফিরে যাওয়ার পরে সুবাস ঘিসিঙ্গের দেহ নিয়ে মিরিকের দিকে রওনা দেয় শববাহী গাড়ি। দীর্ঘ পথে আগে পিছে ছিল অন্তত একশোটি গাড়ি। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৩ সালে শেষবার লেপচা খোপের পৈতৃক বাড়িতে এসেছিলেন ঘিসিঙ্গ ।
২৭ বছর বয়সে ছেড়ে গিয়েছিলেন মিরিকের পৈতৃক বাড়িটি। রবিবার দার্জিলিং থেকে
মানজু চা বাগানের লেপচা খোপের সেই বাড়িতেই নিয়ে যাওয়া হয় সুবাস ঘিসিঙ্গের মরদেহ। ছবি: রবিন রাই।
তখন তিনি দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। তবে সে বার বাড়িতে রাত্রিবাস করেননি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেই চলে যান। ঘিসিঙ্গকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এদিন লেপচা খোপের বাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা নব্বই ছুঁই ছুঁই রংবাহাদুর রাই। তাঁর কথায় “সকাল থেকেই অপেক্ষা করছিলাম। যদি রাত হতো তবু ফুল আর খাদা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতাম।” বছর পঁয়ষট্টির আশারাম রাইও ছিলেন দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন ঘিসিঙ্গকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। তিনি বলেন, “আমাদের ছোটবেলায় মানজু নদীতে ঘিসিঙ্গকে মাছ ধরতে দেখেছি। বড় হয়ে ওঁর লেখা একটি নাটকেও অভিনয় করেছি। রাজনীতি নয় আবেগের তাড়নাতেই সকাল থেকেই দাঁড়িয়ে রয়েছি।”
মিরিকে ঘিসিঙ্গের বাড়ির সামনে অনুরাগীদের ভিড়। রবিবার রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।
ঘিসিঙ্গের খুড়তুতো ভাই ফুরবা ঘিসিঙ্গ জানিয়েছেন,“সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পরে দার্জিলিঙে থাকতে শুরু করেন ঘিসিঙ্গ। তিনি বলেন, “উনি যখন এই বাড়ি ছেড়ে দার্জিলিঙে চলে যান, তখন ওঁর বয়স ২৭। মাঝেমধ্যেই বাড়িতে এসে থাকার কথা বলতেন। শেষে ফিরে এলেন এভাবে।” এ দিন বিকেলে মানজু পার্ক শ্মশানে ঘিসিঙ্গের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। শ্মশানেও উপচে পড়ে ভিড়। এ দিন সকালে দার্জিলিঙে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে এলেও, শেষকৃত্যে শুধুমাত্র পরিবারের সদস্য এবং অনুরাগীদের ভিড়ই দেখা গিয়েছে। প্রয়াত নেতার স্মরণে এ দিন সুখিয়াপোখড়ি থেকে মিরিক পর্যন্ত সব দোকান বন্ধ ছিল। সুনসান রাস্তার বিভিন্ন বাতিস্তম্ভ, দোকানের সামনে জিএনএলএফের সবুজ পতাকার সঙ্গে উড়েছে কালো পতাকাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy