পুজো উপলক্ষ্যে খেলার মাঠে মেলার আয়োজন করায় মাঠ বেহাল হয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে আসন্ন মরশুমের শিলিগুড়ি লিগের ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা করানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ কর্তারা। মেলা আয়োজকদের অত্যাচারে শহরের একাধিক মাঠের হাল অত্যন্ত খারাপ বলে দাবি করা হয়েছে ক্রীড়া পরিষদের পক্ষ থেকে। শহরের বেশ কিছু মাঠে কালীপুজোর পর থেকেই ক্রীড়া পরিষদের ক্রিকেট লিগ শুরু হবে। ফুটবল লিগ শুরু হতে দেরি থাকলেও পুরোদস্তুর অনুশীলন শুরু হয়ে যাবে ক’দিনের মধ্যেই। তাই এই ক’দিনের মধ্যেই মাঠ কতটা ঠিক করা সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। তাই মাঠ কর্তৃপক্ষের অনুমতি মিললেও তাতে খেলা করানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপরতন ঘোষ। খেলার মাঠ মেলার ফলে ক্ষতি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীরা।
শিলিগুড়ির সূর্যনগর ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন, নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে ইন্সটিটিউট মাঠ, তরাই স্কুল মাঠ, উত্তরায়ন মাঠ ও কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম ময়দানে ফুটবল, ক্রিকেট ও অ্যাথলেটিক্সের খেলা হয়। এর মধ্যে কাঞ্চনজঙ্ঘার মাঠ শুধু ফুটবলের জন্য নির্দিষ্ট। এছাড়া এই মাঠে শিলিগুড়ি লিগের খেলা ছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের বিভিন্ন খেলা ও অন্যান্য প্রতিযোগিতা হয়। ফলে লিগের বেশি ম্যাচ সেখানে করা যায় না। অন্যান্য মাঠের উপরে নির্ভর করতে হয়। এর মধ্যে সুপার ডিভিশন ও প্রথম ডিভিশনের খেলা ভাগ করে দেওয়া হয় সূর্যনগর ও তরাই স্কুলের মাঠের মধ্যে। এর মধ্যে আবার তরাই স্কুল মাঠে ক্রকেট লিগের প্রথম ডিভিশন করা হয়। সুতরাং ক্রিকেট মরশুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফুটবল শুরু করা যায় না।
এর মধ্যে প্রধান দুটি মাঠ সূর্যনগর ফ্রেন্ডস ইউনিয়নের মাঠ এবং নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে ইন্সটিটিউটের মাঠ দুটিতে পুজোর ক’দিন ধরে মেলা চলে। মেলার ফলে মাঠ জুড়ে বিভিন্ন স্টলের জন্য খঁুটি পঁুততে হয়। এই খঁুটিগুলো উঠিয়ে নেওয়ার পরেও গর্তগুলি থেকে যাচ্ছে। সূর্যনগর ফ্রেন্ডস ইউনিয়নে পুজো কমিটির সভাপতি তথা এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর তৃণমূলের কৃষ্ণ পাল বলেন, “মাঠে মানুষের আনন্দের জন্য মেলা করা হয়। মেলার পরে গর্ত বুজিয়েও দেওয়া হয়। ওই কদিন কেউ খেলাধুলোও করেন না। এতে মাঠের ক্ষতি হয় বলে আমি মনে করি না।”
যদিও খেলোয়াড় ও খেলার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকেই এইভাবে মেলা করার বিপক্ষে। শিলিগুড়ির অগ্রগামী সঙ্ঘের ক্রিকেট প্রশিক্ষক তথা শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের ক্রিকেট সচিব জয়ন্ত ভৌমিক বলেন এই ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “সব ধরণের খেলার বিশেষ করে ক্রিকেটের জন্য মাঠই নেই শিলিগুড়িতে। তার উপরে এইভাবে মেলা করলে খেলার পরিবেশ নষ্ট হয়। একে খেলার উপযোগী করতে যে সময় ও অর্থ নষ্ট হয় তাতে লিগের খরচ অযথা বেড়ে যাবে।” শিলিগুড়ির প্রাক্তন ফুটবল ও কোচ জয়ব্রত ঘোষ কোনও ভাবেই খালর মাঠে অন্য কোনও অনুষ্ঠান করার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, “খেলার মাঠ তৈরি করতে বছরভর পরিশ্রম করতে হয়। কাঞ্চনজঙ্ঘার মাঠে যদি ফুটবলে অসুবিধা হবে বলে ক্রিকেট বন্ধ করা হয়। তবে মেলা করলে সেখানে কীভাবে খেলা করা সম্ভব?” শিলিগুড়ির একজন বর্ষীয়ান রেফারি সমীর ভট্টাচার্য মনে করেন, মাঠে খঁুটি পোঁতা বা কোনও অস্থায়ী নির্মান করলে তাতে মাঠের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ফুটবল বা ক্রিকেটে খেলার পক্ষে তা কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়।
নভেম্বরের শেষ থেকেই শুরু হওয়ার কথা ক্রিকেট মরশুমের। আপাতত তরাই স্কুল ময়দান ও উত্তরায়ন মাঠ নির্দিষ্ট হলেও, রেল ইন্সটিটিউটের মাঠটিতে আদৌ খেলা চালানো সম্ভব কি না তা বুঝতে পারছেন না ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপরতনবাবু বলেন, “মাঠের অবস্থা শোচনীয়। আমরা মাঠ মেরামতির চেষ্টা করছি। তাতে কতদূর কী করা সম্ভব তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” যদিও এই মাঠে যে পুজো হয়, সেই সেন্ট্রাল কমিটি পুজো কমিটির সভাপতি কাঞ্চন রায় দাবি করেন, মাঠকে আবার অবিকল আগের জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, “মাঠে যে ক্ষতি হয় তা সম্পূর্ণ পরিচর্যা করে আগের জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy