Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

তুলাইপাঞ্জি ফলিয়ে সফল অজিত

জলপাইগুড়ির ভোজন রসিক বাঙালির আবদার সামাল দিতে মোটের উপর এখন নাজেহাল দশা ধান চাষি অজিত সরকারের। কৃষি দফতরের প্রযুক্তি সহায়তায় জলপাইগুড়ি জেলায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে তুলাইপাঞ্জি ধান উত্‌পাদনে সফল হয়েছেন তিনি।

চালের প্যাকেট বিক্রি করছেন অজিত সরকার। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

চালের প্যাকেট বিক্রি করছেন অজিত সরকার। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য
ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৩
Share: Save:

জলপাইগুড়ির ভোজন রসিক বাঙালির আবদার সামাল দিতে মোটের উপর এখন নাজেহাল দশা ধান চাষি অজিত সরকারের। কৃষি দফতরের প্রযুক্তি সহায়তায় জলপাইগুড়ি জেলায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে তুলাইপাঞ্জি ধান উত্‌পাদনে সফল হয়েছেন তিনি।

এ কথা মুখেমুখে প্রচার হতেই ময়নাগুড়ির ব্যাংকান্দি গ্রামের বাসিন্দা এই চাষির বাড়িতে উপচে পড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। চাল কিনতে যোগাযোগ শুরু করেছেন পাইকাররাও। কৃষিমেলায় তাঁর দেওয়া স্টলেও লম্বা লাইন। পরিস্থিতি সামাল দিতে অজিতবাবু নিজের নাম ঠিকানা লেখা এক কিলো এবং আধ কিলো ওজনের চালের প্যাকেট তৈরি করে বিক্রি করা শুরু করেছেন। কোনও ক্রেতা বেশি চাল চাইলে হাত জোর করে জানিয়ে দিচ্ছেন “এ বার পারছি না। আগামী বছর প্রয়োজন মতো তুলাইপাঞ্জি চাল পেয়ে যাবেন।”

জলপাইগুড়ি জেলার মাটিতে উত্তর দিনাজপুরের বিখ্যাত তুলাইপাঞ্জি চালের উত্‌পাদন নাও হতে পারে- এই আশঙ্কাতে ব্যংকান্দির কৃষকবন্ধু ফার্মার্স ক্লাবের সম্পাদক অজিতবাবু সংস্থার অন্য সদস্যদের আর উত্‌সাহিত করার সাহস পাননি। কৃষি দফতরের পরামর্শ মতো ঝুঁকি নিয়ে শুধুমাত্র নিজের এক বিঘা জমিতে তুলাইপাঞ্জি ধান চাষ করেন তিনি। স্বাদ-গন্ধ একই রকম। সাত মন ধান ফলতেই জেলা ও রাজ্য কৃষি দফতর নড়ে বসে।

জলপাইগুড়ি মহকুমা কৃষি অধিকর্তা হরিশ্চন্দ্র রায় বলেন, “এর আগে পরীক্ষামূলক চাষ হলেও এ বারই প্রথম ব্যবসায়িক ভিত্তিতে সাফল্য মেলায় আগামী বছর ওই ধান চাষের এলাকা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” অজিতবাবুর সাফল্যকে সম্মান জানাতে রবিবার ময়নাগুড়ি কৃষি মেলার উদ্বোধন করতে এসে কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু তাঁর হাতে মানপত্র এবং এক হাজার টাকার চেক তুলে দেন। ময়নাগুড়ি ব্লক কৃষি আধিকারিক সঞ্জীব দাস বলেন, “ঝুঁকি নিয়ে চাষের পরেও চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু আশাতীত সাফল্য মেলায় আগামী বছর অন্য চাষিদের উত্‌সাহিত করতে আর সমস্যা হবে না।”

অজিতবাবু জানান, উত্তর দিনাজপুর থেকে বীজ এনে পুরোপুরি জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে তুলাইপাঞ্জির স্বাদ-গন্ধ ও গুনগত মান রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এক বিঘা জমিতে তুলাইপাঞ্জি চাষে খরচ হয়েছে মাত্র ১ হাজার টাকা। তিনি বলেন, “এত চাহিদা হবে, ভাবতে পারিনি। বিজ্ঞাপন নেই, হাটে-বাজারে যেতে হচ্ছে না, বাড়িতে ক্রেতারা ভিড় করছেন। আগামী বছর ফার্মার্স ক্লাবের ৩৫ জন সদস্য ওই ধান চাষ করবেন। উত্‌পাদিত চাল ক্লাবের নামে প্যাকেটজাত করে জেলার বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

শুধু কি তুলাইপাঞ্জি! ঝুঁকি নিয়ে অজিতবাবু এ বার কাটারিভোগ নামে অসমের সুগন্ধি ধানের চাষও করেছেন। সাফল্য মিলেছে তাতেও। এক বিঘা জমি থেকে ৮ মন ধান মিলেছে। অজিতবাবু জানান, কাটারিভোগ ছোট মাপের সরু সুগন্ধি চাল। হোটেলগুলিতে পোলাও, বিরিয়ানি তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয় এই চাল। অসমের গোয়ালপাড়া এবং ঢেকিয়াঝুলি এলাকায় ওই ধান চাষ হয়। বিখ্যাত ব্যংকান্দি কৃষকবন্ধু ফার্মার্স ক্লাবের সভাপতি মহানন্দ বিশ্বাস বলেন, “সংস্থার সম্পাদক পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে যে সফলতা পেয়েছেন, সেটা আগামী মরসুমে ক্লাবের তরফে কাজে লাগানো হবে।” কৃষি কর্তারা জানান, ভেজাল এড়াতে ব্যংকান্দি কৃষকবন্ধু ফার্মার্স ক্লাব যেন নিজস্ব ব্র্যান্ডের নামে বাজারে তুলাইপাঞ্জি এবং কাটারিভোগ চাল ছাড়তে পারে সেই চেষ্টা চলছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE