কেউ এক জায়গায় রয়েছেন আঠাশ বছর, কেউ আটত্রিশ বছর, কেউ আবার ঊনত্রিশ বছর! সরকার আসে-যায়, কিন্তু এঁদের জায়গা বদলায় না!
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অধীন সরকারি নার্সদের বদলি’ বিষয়টি কার্যত উঠে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমে সম্প্রতি নার্সদের একটি ঘোরাও-বিক্ষোভের পরে নথিপত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে হতভম্ব হয়েছেন খোদ স্বাস্থ্যকর্তারাই। দেখা গিয়েছে, এসএসকেএমে অন্তত ৫৫ জন নার্সের চাকরির জায়গার কোনও বদল হয়নি গত কয়েক দশক! ২৬, ২৭, ২৯ এমনকী ৩৮ বছর ধরে তাঁরা এসএসকেএমেই চাকরি করে যাচ্ছেন।
ফলে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি নার্সেরা কি তবে সরকারি নীতির উর্ধ্বে? সরকারি চিকিৎসকদের একটা বড় অংশও বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। চিকিৎসকদের যদি বদলি হয়, তা হলে নার্সদের হবে না কেন— এই প্রশ্ন নিয়ে একাধিক বার তাঁরা স্বাস্থ্যকর্তাদের শরণাপন্ন হয়েছেন। তাতে লাভ হয়নি। এসএসকেএমের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ১৯৮৮, ১৯৮৯, এমনকী ১৯৭৯ সালে যোগ দেওয়া নার্সেরাও একই জায়গায় রয়ে গিয়েছেন।
খোদ এসএসকেএমের নার্সিং সুপার বন্দনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘নার্সদের বদলির রুটিন পলিসি নেই। বছর পাঁচেক আগে তোড়জোড় শুরু হয়েছিল, পরে বিভিন্ন জায়গা থেকে আপত্তি আসায় সব চাপা পড়ে গেল।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘ নার্সেরা বেশিরভাগই প্রোমোশন পাওয়ার সময়ে বদলি হন, কিন্তু ছ’মাস কাটতে না কাটতে বিভিন্ন প্রভাবশালীর সুপারিশ বা ‘ক্যাচ’ ধরে আগের জায়গায় ফিরে আসেন। শুধু এখানে নয়, গোটা রাজ্যে এখন এটাই নিয়ম।’’
এসএসকেএমের নার্সদের অধিকাংশই এসইউসিই প্রভাবিত নার্সেস ইউনিটি সংগঠনের সদস্য। সংগঠনের অন্যতম ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় টানা ৩২ বছর এসএসকেএমে থাকার পরে প্রোমোশন পেয়ে ডিসেম্বরে রামরিখ হাসপাতালে বদলি হয়েছেন। কোনও রকম রাখঢাক না করে বললেন, ‘‘আমাদের বদলি করবে কী করে? সিপিএমের আমলে কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য নার্সেরা যাঁরা আমাদের সিনিয়র ছিলেন, তাঁদের বদলি হতো না। বদলি করলে ওঁদের নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বুঝে চেপে যেত। এখনও এক অবস্থা। স্বাস্থ্যভবনের হাত-পা কে বেঁধে রেখেছে? কেন বদলি হচ্ছে না?’’
এক জায়গায় থেকে গেলে নার্সদের অনেকের ভিতরেই কাজে ফাঁকি দেওয়া, রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অসহযোগিতার প্রবণতা বাড়ে বলে মেনে নিয়েও রাজ্যের যুগ্ম স্বাস্থ্যঅধিকর্তার (নার্সিং) দায়িত্বে থাকা মাধবী দাসের বক্তব্য, ‘‘ঠিকঠাক বদলির নীতি এখনও নেই। কেউ আবেদন না করলে সাধারণত কাউকে বদলি করি না। আর যেটা হয় সেটা হল মিউচুয়াল ট্রান্সফার।’’
যা শুনে নার্সদেরই একাংশ দাবি করেছেন, ‘‘মাধবী দাস অন্যদের নিয়মিত বদলি করবেন কী করে? উনি নিজেই তো নিয়ম ভাঙছেন। ওঁর নিজের চাকরির মেয়াদ এক মাস আগে শেষ হয়ে গিয়েছে। তার পরে মেয়াদ বাড়ার সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়া সত্ত্বেও তিনি ওই পদে রয়ে গিয়েছেন এবং সেই পদের ভিত্তিতে নতুন গঠিত স্বাস্থ্য কমিশনের সদস্যও হয়ে গিয়েছেন!’’ এই প্রসঙ্গে মাধবীদেবীর মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি ‘‘নো কমেন্টস’’ বলে ফোন রেখে দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy