শুনশান কলকাতা হাই কোর্ট চত্বর। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
তৃতীয় পর্বে কোভিডের প্রকোপ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠায় কলকাতা হাই কোর্টে ফের ভার্চুয়াল শুনানি শুরু হয়েছে। হাই কোর্ট প্রশাসনের নির্দেশ, জেলা এবং নিম্ন আদালতগুলিতেও একই ভাবে শুনানি দরকার। কিন্তু রাজ্যের বেশির ভাগ নিম্ন আদালতেই ভার্চুয়াল শুনানির ব্যবস্থা নেই। খাস কলকাতায় শিয়ালদহ আদালতে ভার্চুয়াল শুনানি হয় না বলে জানান আইনজীবীরা। সশরীরে উপস্থিতির মামলা না-হলে এমনিতেই সাক্ষীদের হাজিরা এবং বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে। তবে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অন্য মামলার শুনানি হওয়া সম্ভব।
আইনজীবীদের বক্তব্য, ভার্চুয়াল শুনানি না-হলে বকেয়া মামলা বাড়বে। বর্তমানে সশরীরে শুনানি হলে বাড়বে সংক্রমণের আশঙ্কা। দু’বছর ধরে অতিমারি পর্ব চললেও কেন এখনও নিম্ন আদালতগুলিতে ভার্চুয়াল শুনানির পরিকাঠামো তৈরি হল না, উঠছে প্রশ্ন। কিছু ক্ষেত্রে কোনও মতে একটা পরিকাঠামো খাড়া করা হয়েছে বলেও অভিযোগ।
শিয়ালদহ কোর্টের আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, ভার্চুয়াল শুনানির পুরো পরিকাঠামো সব এজলাসে নেই। এজলাসে যাতে সবাই একসঙ্গে না-ঢোকেন, তার জন্য আদালত কক্ষের বাইরে বৈদ্যুতিন ডিসপ্লে বোর্ড বসানো হয়েছে। কিন্তু পরিকাঠামোর এমনই হাল যে, সেগুলির মোড়কই খোলা হয়নি। আলিপুর আদালতে ভার্চুয়াল শুনানির পাশাপাশি কিছু এজলাসে সশরীরে শুনানিও হচ্ছে।
জেলা আদালতগুলির পরিকাঠামো কার্যত বেহাল বলেই আইনজীবীরা জানান। সরকারি কৌঁসুলি বিশ্বজিৎ রায় জানান, বসিরহাট মহকুমা আদালতে ভার্চুয়াল শুনানির পরিকাঠামো নেই। আইনজীবী দীপাঞ্জয় দত্ত জানান, ভার্চুয়াল শুনানির ব্যবস্থা নেই বনগাঁ মহকুমা আদালতেও। বারাসত আদালতে আছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং মহকুমায় ফৌজদারি আদালত নেই। মহকুমাশাসকের তত্ত্বাবধানে থাকা দেওয়ানি আদালতে ভার্চুয়াল শুনানির ব্যবস্থা নেই। ডায়মন্ড হারবারে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতে সশরীরে উপস্থিত থেকে শুধু জামিন সংক্রান্ত কাজ চলছে। হুগলির চারটি আদালতেই ভার্চুয়াল শুনানির ব্যবস্থা আছে অবশ্য। হাওড়ার উলুবেড়িয়া ও আমতা মহকুমা আদালতে ভার্চুয়াল শুনানির কোনও পরিকাঠামোই নেই।
আসানসোল আদালতেও ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচার প্রক্রিয়া চালানোর ব্যবস্থা নেই। প্রধান সরকারি কৌঁসুলি স্বরাজ চট্টোপাধ্যায় জানান, মামলা উঠলে শুধু দু’পক্ষের আইনজীবী আদালতে ঢুকতে পারবেন। প্রয়োজনে তাঁরা ফোনে ভিডিয়ো-কলের মাধ্যমে অভিযুক্ত ও মামলাকারীর সঙ্গে বিচারকের কথা বলিয়ে দেবেন বা শুনানি করবেন। দুর্গাপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী দেবব্রত সাঁইও জানান, সেখানে ‘গুগল মিট’-এর মাধ্যমে শুনানি হবে। তবে দু’পক্ষের আইনজীবীই আদালতে থাকবেন।
বর্ধমান জেলা আদালতে এবং পুরুলিয়া জেলা আদালতে ভার্চুয়াল শুনানির ব্যবস্থা নেই। বাঁকুড়া আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রের বক্তব্য, ভার্চুয়াল শুনানির প্রাথমিক পরিকাঠানো থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। সাক্ষ্যদান বন্ধ থাকলেও অন্যান্য কাজ করা হবে করোনা বিধি মেনে। জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে হাতেগোনা কয়েকটি এজলাসে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শুনানি হয়েছে। কোচবিহার জেলা আদালতে সশরীরে হাজিরা দিয়েই শুনানি হচ্ছে। আলিপুরদুয়ারে ভার্চুয়াল শুনানি শুরু হলেও ইন্টারনেটের সমস্যা রয়েছে। শিলিগুড়ি আদালতে বেশির ভাগ মামলার শুনানি চলছে ভার্চুয়ালি।
মালদহ জেলা আদালতেও বুধবার পর্যন্ত স্বাভাবিক শুনানি হয়েছে। তবে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি আইনজীবীরা এজলাসে থাকবেন এবং বিপক্ষের আইনজীবীরা ভার্চুয়াল মাধ্যমে সওয়াল করবেন। উত্তর দিনাজপুরে ভার্চুয়াল শুনানি শুরু হয়নি। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা এবং গঙ্গারামপুর মহকুমা আদালতে ভার্চুয়াল শুনানির পরিকাঠামো থাকলেও ব্যবহার হচ্ছে না।
মুর্শিদাবাদের কোনও আদালতে ভার্চুয়াল শুনানির পরিকাঠামো নেই। তাই বিচারকদের সঙ্গে আইনজীবী সংগঠনগুলির বৈঠকে স্থির হয়েছে, কোভিড বিধি মেনে সশরীরেই শুনানি হবে। একই ভাবে নদিয়ার কোনও আদালতেও ভার্চুয়াল শুনানির পরিকাঠামো নেই। কৃষ্ণনগর আদালতের ফোরাম অব বার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক দেবাশিস রায় বলেন, “এখানে ভার্চুয়াল শুনানির পরিকাঠামোই নেই। তাই কোভিড বিধি মেনে আদালত খোলা রাখার জন্য আমরা জেলা জজকে অনুরোধ জানিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy