নরেন্দ্র মোদীর সরকার বাংলায় রেল প্রকল্পগুলিকে বঞ্চনা করছে বলে সংসদে সরব হয়েছিল তৃণমূল। কেন্দ্র সেই অভিযোগ নস্যাৎ করে জানিয়েছিল, প্রকল্পের বাস্তবতা বিচার করেই টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ বার সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নের উত্তরে রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া জানিয়ে দিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেল-জমানায় বাংলার জন্য ঘোষিত ১৩টি সুপার-স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের একটিও রূপায়িত হয়নি! রাজ্যে ১৬টি রেল কারখানা তৈরির ঘোষণা হয়েছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে হলেও চালু হয়েছে তার ৩টি। বাকি ১৩টি কবে চালু হবে, কোনও নিশ্চয়তা নেই।
ইউপিএ-২ জমানায় তিন বছর রেল মন্ত্রক পর্যায়ক্রমে ছিল স্বয়ং মমতা, দীনেশ ত্রিবেদী ও মুকুল রায়ের হাতে। এর পরে শেষ পৌনে দু’বছর অবশ্য রেল মন্ত্রক কংগ্রেসের হাতেই ছিল। ফলে সদ্য ক্ষমতায় আসা বিজেপির বিরুদ্ধে বঞ্চণার অভিযোগে মুখর তৃণমূল অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে রেলমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যে। ঋতব্রতের দাবি, “তৃণমূল নেত্রীর কথায় ও কাজে যে কোনও মিলই নেই, রেলমন্ত্রীর লিখিত জবাবে আবার তা প্রমাণ হয়ে গেল। এটাও স্পষ্ট হল যে, ২০০৯-এর পরে তিন বছর রেল মন্ত্রককে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার রাজনৈতিক বাহন হিসেবে ব্যবহার করেছিল তৃণমূল!”
প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুলবাবুর সঙ্গে শুক্রবার যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আর এক প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ মন্তব্য করতে চাননি। তৃণমূলের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য হিসেবে দলের জাতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভায় দলের সচেতক ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেছেন, “আপনাদের সংবাদপত্রের একমাত্র কাজ এখন তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করা! আপনাদের জন্য শুভকামনা থাকল!” বিজেপির এক রাজ্য নেতার মন্তব্য, “মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তৃণমূল যে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছিল, সেটা প্রকাশ হয়ে যেতেই ওঁরা এখন মুখ লুকোচ্ছেন!”
রাজ্যসভায় রেল বাজেট নিয়ে বিতর্কের সময়ই ঋতব্রত বাংলার রেল প্রকল্পগুলির হাল নিয়ে সরব হয়েছিলেন। পরে তিনি লিখিত ভাবে জানতে চেয়েছিলেন (তারকা চিহ্নিত ৪৫০ নম্বর প্রশ্ন) ছিল, বাংলায় গত পাঁচ বছরে ১৩টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ও ১৬টি রেল কারখানা তৈরি হয়েছে কি? হলে সেগুলির কী অবস্থা? না হয়ে থাকলে, কেন হয়নি?
সেই প্রশ্নেরই তিন পাতা জবাবে রেলমন্ত্রী গৌড়া জানিয়েছেন, ২০১০-’১১ সালে রেল বাজেটে আসানসোল, ডানকুনি, কাঁচরাপাড়া, হাওড়া, মালদহ টাউন, নিউ ফরাক্কা, পাগলাচণ্ডী, রামপুরহাট, গার্ডেনরিচ, হলদিয়া রানাঘাট, নিউ জলপাইগুড়ি, ও খড়গপুরে যে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের কথা বলা হয়েছিল, সেগুলি আদৌ তৈরি হয়নি। কারণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা রিপোর্ট এখনও মন্ত্রকের কাছে জমা পড়েনি।
গৌড়া আরও জানিয়েছেন, রেলের ঘোষিত কারখানাগুলির মধ্যে শালিমার ও ডানকুনি চালু হয়েছে। কাজও চলছে। হলদিয়ায় ডিএমএউ কারখানার প্রথম পর্যায় শেষ হয়ে কাজ চলছে। বজবজ, ডানকুনির লোকো কারখানা, নোয়াপাড়া, কুলটি, কাঁচরাপাড়া-হালিশহর, খড়গপুর ওয়ার্কশপ, সিঙ্গুর, আনাড়া, জেলিংহ্যাম, তিনধারিয়া, নিউ জলপাইগুড়ি, নিউ কোচবিহার ও আদ্রার প্রকল্প নানা কারণে আটকে। কোথাও কিছুটা কাজ হয়েছে, কোনওটায় পিপিপি মডেলে উৎসাহ দেখায়নি বেসরকারি সংস্থা। সিঙ্গুরের প্রকল্পের সম্ভাব্যতা নেই বলে কাজ পরিত্যক্ত হয়েছে। আর আদ্রার বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদিতই হয়নি কয়লা সরবরাহের ব্যবস্থা হয়নি বলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy