Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

আঁধারে ডুবল হাসপাতাল, দগ্ধ রোগী আটকে লিফ্‌টেই

এক সদ্যোজাতের বেশ কিছু জটিল শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় তাকে রাখা হয়েছিল নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (নিকু)।

এ ভাবেই দীর্ঘ ক্ষণ অন্ধকারে ডুবে ছিল সাগর দত্ত হাসপাতাল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

এ ভাবেই দীর্ঘ ক্ষণ অন্ধকারে ডুবে ছিল সাগর দত্ত হাসপাতাল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:০৫
Share: Save:

পুড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা আর চিকিৎসার মাঝে তখন কয়েক তলার তফাত। দগ্ধ রোগীকে নিয়ে হাসপাতাল কর্মী ও রোগীর পরিজনেরা লিফ্‌টে উঠেছেন। পোড়ার জ্বালায় আর্তনাদ করার ক্ষমতাও হারিয়েছেন রোগী। এর মধ্যে হঠাৎ আটকে গেল লিফ্‌ট। অন্ধকার, বন্ধ লিফটে শরীরের জ্বালা নিয়ে কয়েক ঘণ্টা আটকে থাকলেন দগ্ধ রোগী।

এক সদ্যোজাতের বেশ কিছু জটিল শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় তাকে রাখা হয়েছিল নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (নিকু)। কোনও মতে ধুকপুক করছিল ছোট্ট প্রাণ। কিন্তু তার মধ্যে সব অন্ধকার। ছোট্ট প্রাণের স্পন্দন কী ভাবে জারি রাখবেন, ছুটোছুটি শুরু হল চিকিৎসকদের।

মঙ্গলবার এই ছবি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। দুপুর তিনটে থেকে টানা বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পরিষেবা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে একটি বেসরকারি মোবাইল সংস্থার কেব্‌ল বসানোর কাজ চলছিল হাসপাতাল চত্বরে। মাটি খোঁড়ার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় কেব্‌ল। সূত্রের খবর, মোবাইল সংস্থার অনভিজ্ঞতার জন্যই এই বিপত্তি। বিকেল চারটে নাগাদ পুরো অন্ধকার হয়ে যায় হাসপাতাল। সিইএসসি জানিয়েছে, হাসপাতালের ভিতরে বেসরকারি সংস্থার কাজ চলাকালীন হাসপাতালের নিজস্ব কেব্‌ল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাতেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর সঙ্গে সিইএসসি-এর পরিষেবার কোনও সম্পর্ক নেই। হাসপাতালে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রয়েছে। ঘটনার পরে পূর্ত দফতরকে খবর দেওয়া হয়েছে, তারা পুরো এলাকা খুঁড়ে ত্রুটি খুঁজে বার করলে তবেই সিইএসসি স্থায়ী কাজ করতে পারবে।

আরও পড়ুন: সন্ন্যাসিনী ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত ১

হাসপাতাল সূত্রের দাবি, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় ব্যাকআপ জেনারেটর কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হয়। কিন্তু দেখা যায়, সেই সংযোগও বারবার ছিন্ন হয়েছে। ঘটনাস্থলে প্রাক্তন বিধায়ক মদন মিত্র পৌঁছন। তাঁর কথায়, ‘‘অসংখ্য রোগী অসহায় অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। দ্রুত পূর্ত মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পূর্ত দফতর দু’টি জেনারেটর পাঠায়।’’

পরিকাঠামোর এই সমস্যা নিয়ে ক্ষুব্ধ হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, রোগীর সব দায়িত্ব চিকিৎসকের বলেই
বেশির ভাগ রোগীর পরিজনেরা বিশ্বাস করেন। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে পরিকাঠামোগত সমস্যার জেরে রোগীর পরিজনের হাতে হেনস্থা কিংবা প্রশাসনের চোখ রাঙানি সইছেন চিকিৎসকেরা।

স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টচার্য বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার কাজ চলছে। তবে, কেন এই বিভ্রাট সে বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিশদে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ যে রোগী লিফ্‌টে আটকে পড়েছিলেন, তাঁকে কোনও রকমে উদ্ধার করা হয় রাতে। আস্তে আস্তে সব আলো জ্বলানো হচ্ছে। তবে স্থায়ী সমাধান এখনই হবে না বলেই জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE