সোমবারই সব্যসাচী দত্তের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার নির্দেশ আসে। —ফাইল চিত্র।
জমা পড়ল অনাস্থা প্রস্তাব। বিধাননগর পুর নিগমের মেয়র সব্যসাচী দত্তর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার নির্দেশ সোমবারই দলকে দিয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম। ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে ৩৫ জন কাউন্সিলর সেই অনাস্থা প্রস্তাবে সই করলেন। মঙ্গলবার সে প্রস্তাব জমাও পড়ে গেল চেয়ারম্যান কৃষ্ণা চক্রবর্তীর টেবিলে। তবে চিঠি পেলেও যে ইস্তফা দেওয়ার প্রশ্ন নেই, তিনি যে ভোটাভুটির অপেক্ষাতেই থাকবেন, তা-ও এ দিন স্পষ্ট করে দিলেন সব্যসাচী।
বিধাননগর পুর নিগমে মোট আসন ৪১। সাড়ে চার বছর আগের পুর নির্বাচনে ৩৭টি আসনে জিতেছিল তৃণমূল। ২টি গিয়েছিল কংগ্রেসের ঝুলিতে, ২টি পেয়েছিল বামেরা। পরে ১ কংগ্রেস ও ১ বাম কাউন্সিলর তৃণমূলে নাম লেখান। ফলে তৃণমূলের আসন বেড়ে হয় ৩৯। ক্ষমতায় থাকার জন্য অবশ্য ২১টি আসন থাকলেই হয়। তৃণমূল ভবনে গত রবিবার যে বৈঠক ফিরহাদ হাকিম ডেকেছিলেন, তাতে ৩৬ জন কাউন্সিলর যোগ দিয়েছিলেন। সেই ৩৬ জনই সব্যসাচীর অপসারণের পক্ষে মত দেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছিল। আর মঙ্গলবার যে অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়ল, তাতে সই করলেন ৩৫ জন। কৃষ্ণা চক্রবর্তী যে হেতু পুর নিগমের চেয়ারম্যান, সে হেতু তিনি অনাস্থা প্রস্তাবে সই করতে পারেন না। তাঁর সভাপতিত্বেই অনাস্থার উপরে ভোটাভুটি হবে।
এই অনাস্থা প্রস্তাব প্রসঙ্গে কৃষ্ণা চক্রবর্তী এ দিন জানান, আগামী ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে বোর্ড মিটিং ডাকা হবে। সেখানে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে এবং তার উপরে ভোটাভুটি হবে। অধিকাংশ কাউন্সিলর যদি সব্যসাচী দত্তর বিরুদ্ধে ভোট দেন, তা হলে তাঁর মেয়র পদ চলে যাবে এবং দল যাঁকে নতুন করে দায়িত্ব দেবে, তিনিই নতুন মেয়র হবেন।
আরও পড়ুন: হালিশহরে ফের ফুলবদল! ঘাসফুল ছেড়ে পদ্ম ধরা চেয়ারম্যান, কাউন্সিলররা ফের তৃণমূলেই
৩৫ জন কাউন্সিলর যে হেতু সব্যসাচী দত্তর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেছেন, সে হেতু আপাতদৃষ্টিতে মেয়র পদে সব্যসাচীর টিকে থাকা অসম্ভব। কিন্তু সব্যসাচী এ দিনও আত্মবিশ্বাস দেখাতে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘অনাস্থা যদি আনা হয়, তা হলে তো ভোটাভুটি হবে। আর ভোটাভুটিটা হবে গোপন ব্যালটে। সেটা হোক, তা হলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোন দিকে রয়েছে।’’
যদি অনাস্থায় তিনি হেরে যান, তা হলে বিরোধী দলের কাউন্সিলর হিসেবেই কাজ করবেন— মঙ্গলবার প্রথমে এই রকম মন্তব্যই করেছিলেন সব্যসাচী। পরে অবশ্য সে মন্তব্য তিনি সংশোধন করে নেন। বলেন অনাস্থায় হেরে গেলে সাধারণ কাউন্সিলর হিসেবে কাজ করবেন।
মঙ্গলবারও মেয়রের চেয়ারে বসেই সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন সব্যসাচী দত্ত। অনাস্থা প্রস্তাব আসা মানেই যে হেরে গিয়েছেন, তা মনে করার কোনও কারণ নেই— এ কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি। অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষরকারী কাউন্সিলরের সংখ্যা যতই হোক, তাঁর সঙ্গেও যে যোগাযোগ রেখে চলছেন অনেক কাউন্সিলর, সে ইঙ্গিতও সব্যসাচী দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভাঙড়ে কাটমানি-কাণ্ডে প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, অভিযুক্ত রেজ্জাক মোল্লার ছেলে
ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায় এ দিন বেশ কড়া ভাষায়ই সমালোচনা করেছেন মেয়র সব্যসাচী দত্তের। মেয়র হিসেবে সব্যসাচী কোনও কাজই করছিলেন না এবং এলাকার মানুষ তাঁর উপরে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট— দাবি তাপসের। ফিরহাদ হাকিমের মতো শীর্ষ নেতা সব্যসাচী প্রসঙ্গে কী মন্তব্য করেছেন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তাপস এ দিন বলেন, ‘‘এত বড় একজন নেতা যখন বলছেন যে সব্যসাচীকে নিয়ে তিনি হতাশ, তখন বোঝাই যায় যে তিনি কতটা বিরক্ত হয়েছেন।’’
ফিরহাদ সম্পর্কে অবশ্য সব্যসাচী কোনও কড়া মন্তব্য এ দিন করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘ফিরহাদ হাকিম আমার দাদার মতো। আগেও ছিলেন, এখনও আছেন, পরেও তাঁকে সেই চোখেই দেখব। ফিরহাদ হাকিমের জন্য আমার দরজা আগেও খোলা ছিল, ভবিষ্যতে খোলাই থাকবে।’’
তৃণমূল চেয়ারপার্সন তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে সব্যসাচীর মন্তব্যে কিন্তু এ দিন কটাক্ষের আভাস মিলেছে। দলের সঙ্গে তাঁর যে দীর্ঘ টানাপড়েন চলছে, সে প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি কিছু বলেছেন কি না, সে প্রশ্নের উত্তরে সব্যসাচী বলেন, ‘‘তিনি ডাকলে নিশ্চয়ই বলব। তিনি খুব ব্যস্ত। তাঁকে গোটা রাজ্য সামলাতে হয়। ভোটের আগে তাঁকে বিভিন্ন দলের সঙ্গে কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও লড়তে হয়েছে। ডাকলে নিশ্চয়ই বলব।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy