ঘটনাস্থলে তদন্তকারীরা। _নিজস্ব চিত্র।
নিমতিতা স্টেশনে ‘নাশকতা’র ছক কষেছিল দুষ্কৃতীরা। দু’দিন ধরে ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহের পর তেমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না রাজ্য সরকার গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। বিস্ফোরণের কারণে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে প্ল্যাটফর্মে। সেই ক্ষত বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দাদের ধারণা, বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য শক্তিশালী রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে। যেমনটা করা হয় কোনও নাশকতার ঘটনায়। পরীক্ষাগারে নমুনা পাঠানো হয়েছে। সিট তদন্ত করলেও, নিমতিতা বিস্ফোরণ-কাণ্ডের ঘটনা নজরে রেখেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-ও। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন এনআইএ-র গোয়েন্দারা।
বুধবার রাতে কী ভাবে বিস্ফোরণ ঘটানো হল, কেনই বা রাজ্যের শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে নিশানা করা হল— তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি সিট-এর গোয়েন্দারা। তবে বিভিন্ন সম্ভাবনার দিকগুলি আগাপাশতলা খতিয়ে দেখছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। নিমতিতায় ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ব্যবহার করা হয়েছে কি না তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয় সিট।
শুক্রবার সকালে নিমতিতা স্টেশনে গিয়ে ফের নমুনা সংগ্রহ করে বম্ব স্কোয়াড এবং ফরেন্সিক দল। রাজ্য পুলিশের আইজি এম কে বর্মা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তা ছাড়াও সেখানে গিয়েছিলেন জঙ্গিপুর জেলা পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী। পুলিশ সূত্রেও খবর, নিমতিতা স্টেশনে বিস্ফোরণের পিছনে নাশকতার ছক থাকতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে ভাঙা লোহার পাত উদ্ধার করা হয়েছে। মিলেছে বৈদ্যুতিক তার এবং ব্যাটারি। যা দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, সাধারণ বোমা ব্যবহার করে ওই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়নি।
ইতিমধ্যেই ওই নমুনাগুলি কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। ফরেন্সিক দলের সদস্য চিত্রাক্ষ সরকার শুক্রবার বলেন, ‘‘রক্তমাখা পাথর, ঘটনাস্থলের মাটির অংশবিশেষ-সহ ৫ ধরনের নমুনা সংগ্রহ করেছে ফরেন্সিক দল।’’ ঘটনাস্থলের মাপজোকও করেন ফরেন্সিক দলের সদস্যরা। ওই দলের অন্য এক সদস্য বলেন, “নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রাজ্য সফরকালে নিমতিতায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। যে হেতু স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঘটনাটি ঘটেছে, তাই রেল পুলিশ (জিআরপি)-ও তদন্ত শুরু করেছে। এই ঘটনার পর এ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা অবনতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে তোপ দেগেছেন বিরোধী দলগুলো। রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই সরব জাকিরের অনুগামীরা। মমতাও সেই বক্তব্যকে হাতিয়ার করে সরব হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে এনআইএ আলাদা করে তদন্ত শুরু করতে পারে। যদিও সিট-এর তদন্তের গতিপ্রকৃতি কোন দিকে এগোচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর রাজ্য পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে পারে এনআইএ। সেই রিপোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে জমা দেওয়া হবে বলে সূত্রের খবর। এনআইএ তদন্ত শুরু করবে কি না সে বিষয়টি তার পরেই স্পষ্ট হবে। আপাতত গোটা বিষয়টি প্রাথমিক স্তরে রয়েছে।
এক দিকে যেমন তদন্ত চলছে, অন্য দিকে তেমনই জাকিরের অনুগামীরা মন্ত্রীকে ‘জেড ক্যাটেগরি’র নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি তুলেন। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যের মন্ত্রী জাকিরকে সরকারি নিরাপত্তা দিতে হবে। জাকির এখনও এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল। তবে তিনি সঙ্কটমুক্ত নন বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। বৃহস্পতিবার তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাঁর বাঁ পায়ে ফের অস্ত্রোপচার হতে পারে। এসএসকেএম হাসপাতালে ওই ঘটনায় জখম ১৪ জন ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক জনকে আইসিইউ-তে স্থানান্তর করা হয়েছে শুক্রবার।
অন্য দিকে, নিমতিতা বিস্ফোরণ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতর চলছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি শুক্রবার বলেন, “রেলের স্টেশন বিস্ফোরণ ঘটেছে। জিআরপি স্টেশন চত্বর দেখে। জিআরপি রাজ্যের অধীনে। মুখ্যমন্ত্রী ভুল বলছেন। রাজ্যের মানুষকে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। দিদি রেল মন্ত্রকে ছিলেন। সহজ সরল এই সত্য তিনি জানেন না। দিদি আবার বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন, নিজের অপদার্থতা ঢাকার জন্য।”
তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, ওই দিন রাতে নিমতিতা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে কোনও আলো ছিল না। কিন্তু শুক্রবার নিমতিতা স্টেশনের এক রেলকর্মী জানিয়েছেন, ওই দিন প্ল্যাটফর্মে আলো ছিল। আরপিএফ কর্মীরাও ছিলেন। আর রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “মন্ত্রী হাঁটছেন, বোমা বিস্ফোরণ হয়ে গেল! কেন হল? মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের গড় তৈরি হয়েছে। সেখানে ভয় পাওয়ানোর জন্য করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy