Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তপ্ত নারায়ণপুর, রাতে গ্রেফতার দুই

প্রহৃত ব্যক্তি ও তাঁর পরিবার এই ঘটনা স্থানীয় বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে ঘটেছে বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাপস।

চলছে গোলমাল। শুক্রবার, নারায়ণপুরে।

চলছে গোলমাল। শুক্রবার, নারায়ণপুরে। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩৭
Share
Save

সঙ্কীর্ণ গলির ভিতরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাপাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। শোনা যাচ্ছে গুলির শব্দ। একটি বাড়ির সামনে এক ব্যক্তিকে ফেলে বেধড়ক পেটাতে পেটাতে তাঁরই ঘরে ঢুকে পড়ছে দুষ্কৃতীরা। ভিতরে চলছে ভাঙচুর। শুক্রবার দুপুরে এমনই ছবি দেখা গেল বিধাননগর পুর এলাকার তিন নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ নারায়ণপুরে। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। প্রহৃত ব্যক্তি ও তাঁর পরিবার এই ঘটনা স্থানীয় বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে ঘটেছে বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাপস। এই ঘটনায় তাজ ইলিয়াস জনি ও সাজিদ খান নামে দু’জনকে পুলিশ শুক্রবার রাতে মধ্যমগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে। তাজের থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি আগ্নেয়াস্ত্র।

একটি ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ নারায়ণপুরের ওই গলির সামনে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতীরা। লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হচ্ছে চেয়ার। প্রকাশ্যেই ভাঙচুর করা হচ্ছে। এক ব্যক্তিকে রাস্তায় ফেলে পেটানো হচ্ছে। আতঙ্কিত স্থানীয়েরা।

ওই প্রহৃত ব্যক্তি পরে জানান, তাঁর নাম আজাদ বাবা। তিনি নিউ টাউনের প্রাক্তন বিধায়ক ও বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্তের অনুগামী। সেই কারণেই এই আক্রমণ করা হয়েছে বলে দাবি তাঁর। আজাদের অভিযোগ, ‘‘সব্যসাচী দত্ত ইদের দিন আমার বাড়িতে দাওয়াতে এসেছিলেন। তার পরেই বৃহস্পতিবার একটি প্রকাশ্য সভায় বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় আমার বাবা ও পরিবারকে গালিগালাজ করেন। এ দিন দুপুরে বাড়িতে বিধায়কের ঘনিষ্ঠ শেখ আজাদ নামে এক ব্যক্তি ও তাঁর লোকজন হামলা চালায়। গুলি চালায়, মারধর করে, ঘর ভাঙচুর করে।’’ এ দিন কয়েকটি গুলির খোলও সংবাদমাধ্যমকে দেখান আজাদ বাবার লোকজন। যদিও গুলি চলেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে, বিধাননগরের পুলিশ। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত করছে বলেও
বিধাননগর কমিশনারেটের তরফে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, রাজারহাটের রাজনীতিতে তাপস ও সব্যসাচীর রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েন সর্বজনবিদিত। বৃহস্পতিবার তাপসের বক্তৃতার একটি ভিডিয়োয় শোনা যায়, সব্যসাচী এবং আজাদ বাবার নাম না করে মতামত স্পষ্ট করছেন তিনি। তিনি শ্রোতাদের উদ্দেশে জানাচ্ছেন, ব্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরে যে কেউ, যাঁকে ইচ্ছে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করতে পারেন। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা মেনে দলীয় কোনও আলোচনা সব জায়গায় করা যাবে না। যিনি নিমন্ত্রণ করেছিলেন, তাঁকে ভর্ৎসনা করতেও শোনা যায় তাপসকে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, তাপসের ওই বক্তব্য থেকেই যাবতীয় ঘটনার সূত্রপাত। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘আমি রাজারহাটের মাটিতে দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতি করছি। আমার বিরুদ্ধে লোকের বাড়িতে গুন্ডা পাঠানোর অভিযোগ কেউ বিশ্বাস করবেন না। কে কার অনুগামী হবেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু আমি এখানে দলের বিধায়ক। আমাকে পাশ কাটিয়ে দলীয় কার্যকলাপ এখানে করা যাবে না। এটাই দলের শৃঙ্খলা। যিনি অভিযোগ করছেন, তাঁর বিরুদ্ধেই অজস্র অভিযোগ রয়েছে।’’

তাপসের অনুগামীদের পাল্টা দাবি, এ দিন বিধায়কের নামে প্রকাশ্যে আজাদ বাবারা গালিগালাজ করছিলেন। তা নিয়ে স্থানীয় যুবকদের একাংশ প্রতিবাদ করেন। গোলমালের সূত্রপাত সেখান থেকেই। তাপসের দাবি, ‘‘আমাকে বদনাম করতে দুষ্কৃতী পাঠিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ করা হচ্ছে। আমি ছেলেটির ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলি। দাদাকে নিয়ে আসতে বলি। কিন্তু আমাকেই উল্টে গালিগালাজ করা হয়।’’

অন্য দিকে, প্রহৃত আজাদ বাবা যাঁর অনুগামী হয়ে মার খাওয়ার অভিযোগ করেছেন, সেই সব্যসাচী দত্ত অবশ্য এ নিয়ে বিশেষ কিছু
বলতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘জানি না, সত্যিই গুলি চলেছে কিনা। যাঁর নামে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে, সেই শেখ আজাদ মাদকের চোরাকারবার করে। গুলি দুষ্কৃতীরাই চালায়। তারা কারও অনুগামী হতে পারে না। আমি ইদের নিমন্ত্রণে গিয়েছিলাম। পুলিশের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা তদন্ত করে দেখছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC Conflict Bidhannagar

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}