Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

যুবা কর্মী খুনে ধৃত তৃণমূলেরই নেতা

ফুলিয়ায় যে খুনের পরে তড়িঘড়ি সিপিএম-বিজেপিকে দায়ী করেছিল তৃণমূল, সেই মামলায় দলেরই এক নেতাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এবং তার জেরে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দলও ফের প্রকাশ্যে এসে গেল। মঙ্গলবার বিকেলেই ফোন করে বাড়ি থেকে থানায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায়কে।

ধৃত রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।

ধৃত রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৪ ০২:১১
Share: Save:

ফুলিয়ায় যে খুনের পরে তড়িঘড়ি সিপিএম-বিজেপিকে দায়ী করেছিল তৃণমূল, সেই মামলায় দলেরই এক নেতাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এবং তার জেরে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দলও ফের প্রকাশ্যে এসে গেল।

মঙ্গলবার বিকেলেই ফোন করে বাড়ি থেকে থানায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায়কে। গভীর রাত পর্যন্ত দফায়-দফায় জেরার পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার রানাঘাট আদালতে তোলা হলে তাঁকে পাঁচ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী থেকেও তিন জনকে আটক করা হয়েছে।

গত শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয় তৃণমূল যুবার নেতা রঞ্জিত গায়েনকে। তাঁর সঙ্গে আগেও রঘুনাথবাবুর বিরোধ হয়েছিল। কিন্তু তিনি গ্রেফতার হওয়ায় দলেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এ দিন সকালে দলে-দলে মহিলা-পুরুষ শান্তিপুর থানায় এসে বিক্ষোভ দেখান। ফুলিয়া টাউনশিপ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান শ্যামলী মণ্ডল দাবি করেন, “ফুলিয়ায় ওঁর হাত ধরেই দলের সংগঠন তৈরি হয়েছে। অথচ ওঁকেই ফাঁসানো হল!” রঘুনাথবাবুর স্ত্রী ও মেয়ে এসে সকলকে শান্ত করেন। তবে, থানার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর মেয়ে সঞ্চিতাও দাবি করেন, “বাবাকে নোংরা চক্রান্তের স্বীকার হতে হল।”

নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র অবশ্য বলেন, “ওই খুনের ঘটনার সঙ্গে রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের যুক্ত থাকার বেশ কিছু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। যদিও ঠিক কী কারণে এই খুন, তা এখনও পরিষ্কার নয়।” পুলিশ সূত্রের খবর, রঞ্জিত বেশ কিছু দিন ধরে অস্ত্র ব্যবসা করছিল। যাদের কাছ থেকে সে অস্ত্র কিনে বিক্রি করত, টাকাপয়সা লেনদেন নিয়ে তাদের সঙ্গে রঞ্জিতের গণ্ডগোল বাধে।

সম্প্রতি রঞ্জিত আবার তাদের কাছে অস্ত্র কিনতে চেয়েছিল। অস্ত্র কারবারিদের কাছ থেকেই সেই খবর পান রঘুনাথবাবু। তাতেই তিনি ভয় পেয়ে যান।

এই ভয়ের কারণ আগে থেকে চলে আসা বিবাদ। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, রঘুনাথবাবুর সঙ্গে ফুলিয়ারই এক তৃণমূল যুবা নেতার বিরোধ চলছিল। নিহত রঞ্জিত সেই নেতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। মাসখানেক আগে ফুলিয়ার সবুজপল্লি থেকে তাহেরপুর যাওয়ার রাস্তায় ছিনতাই হচ্ছিল। রঘুনাথবাবুর সন্দেহ হয়, রঞ্জিত এবং তার লোকজনই ছিনতাইয়ে যুক্ত। এক দিন রাস্তায় রঞ্জিতকে মারধরও করেন রঘুনাথবাবু। তদন্তকারী পুলিশের অনুমান, সেই কারণেই রঞ্জিত ফের অস্ত্র কিনছে খবর পেয়ে রঘুনাথবাবু মনে করেন, তাঁকে খুনের ছক কষা হচ্ছে। সেই ভীতি থেকেই অস্ত্র দেওয়ার নাম করে রঞ্জিতকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গুলি করে কুপিয়ে খুন করা হয়।

খুনের পরের দিনই ফুলিয়ায় এসেছিলেন তৃণমূল যুবার সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, যুব তৃণমূলের দুই কার্যকরী সভাপতি শুভ্রাংশু রায় ও হিরণ চট্টোপাধ্যায়। অভিষেক এসে দল না দেখে গ্রেফতার করার কথা বলায় পুলিশ আর বসে থাকেনি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই সরকারের নীতিই হল, আইন আইনের পথে চলবে। দল নাক গলাবে না। তা প্রমাণ হয়ে গেল।”

রঘুনাথবাবুর ঘনিষ্ঠেরা অবশ্য মানতে রাজি নন যে, তিনি কোনও ভাবে এই খুনে যুক্ত। তাঁদের পাল্টা বক্তব্য, তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুকুল রায়ের সুনজরে ছিলেন না ফুলিয়ার এই নেতা। শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, মুকুল-ঘনিষ্ঠ তপন সরকারের সঙ্গে তাঁর বিরোধের কথাও সবার জানা। জেলায় তাঁর আরও কিছু ‘শত্রু’ রয়েছে। তার জেরেই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তপনবাবু অবশ্য বলেন, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ ভিত্তিহীন। কেউ অপরাধ করলে শাস্তি হবেই।” রঘুনাথবাবু বলেন, “তদন্তে যদি দোষী প্রমাণিত হই, শাস্তি পাব। তবে বিচার প্রক্রিয়ায় আমার ভরসা আছে। আইনের পথেই লড়ব।

নেত্রীর প্রতিও পূর্ণ আস্থা আছে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy