দিন কয়েক আগেও বৃষ্টি অসুরের তাণ্ডব চিন্তায় ফেলেছিল পুজো উদ্যোক্তাদের। তারপরে কালো মেঘ সরিয়ে শরতের ঝলমলে রোদ এসে মুখে হাসি ফুটিয়েছিল সকলের। কিন্তু তারপরেও একটা আশঙ্কা ছিল। পঞ্চমীর রাতে ফের ঝড়-জলের সেই আশঙ্কাই সত্যি হল!
সোমবার মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমার কান্দি, বড়ঞা, খড়গ্রাম, ভরতপুর-১ ও ২ ব্লক এলাকায় ঘণ্টা খানেকের মধ্যে বৃষ্টিতেই কোথাও কোথাও জল জমে গিয়েছে। কিন্তু আকাশে যেভাবে মাঝেমধ্যে ঘন কালো মেঘ উঁকি দিচ্ছে তা দেখে মুখ ভার পুজো কর্তাদের।
কান্দি মহকুমা সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চমীর রাতে যে বৃষ্টি হয়েছে তা প্রায় পাঁচ মিলিমিটারের মতো। ফের যদি বৃষ্টি নামে তাহলে পুজো কোনও মতে হলেও দর্শনার্থীরা বিপাকে পড়বেন। ফলে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে পুজোর চারটে দিন চুটিয়ে আনন্দ করতে পারবেন কি না তা নিয়েও ধন্দে রয়েছেন সাধারণ মানুষ।
মঙ্গলবার ভোরে ঝড়-বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নদিয়ার চিলাখালি কুষ্টিয়া সম্প্রদায়ের পুজো মণ্ডপ। পুজো উদ্যোক্তারা জানান, পুজোর মধ্যে বৃষ্টির চিন্তা মাথায় থাকলেও ঝড়ে যে মণ্ডপ ভেঙে পড়বে তা কল্পনাও করতে পারেননি তাঁরা। পুজো কমিটির সদস্য মনতোষ মণ্ডল বলেন, “মাস দেড়েক আগে থেকে মণ্ডপের কাজ করছি। রাতের আচমকা এক ঝড়ে সব শেষ হয়ে গেল। পাশের গ্রামের যাঁরা পুজো দেখতে আসেন তাঁরাও মর্মাহত। নতুন করে আবার মণ্ডপ তৈরি করার মতো সময়ও নেই। তাই কোনও রকমে একটি অস্থায়ী মণ্ডপ করে পুজো করব।”
এ দিকে, মঙ্গলবার বিকেলে করিমপুরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামায় চিন্তায় পড়েছেন এলাকার পুজো উদ্যোক্তারা। করিমপুর জামতলা পূর্বপাড়া সর্বজনীন পুজো কমিটির সদস্য সুব্রত কর্মকার বলেন, “বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া হচ্ছিল। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে ঠাকুরের কৃপায় তেমন বড় কোনও ক্ষতি হয়নি।”
করিমপুর ঐকতান সর্বজনীন পুজো কমিটির সদস্য বিজন অধিকারী বলেন, “মণ্ডপের কাপড় ভিজে গিয়েছে। জলও জমেছে মণ্ডপের সামনে। যদি এর মধ্যে আবার বৃষ্টি হয় তাহলে তো সব পরিশ্রমই জলে যাবে।”
সেই কবে থেকে শুরু হয়েছে পুজোর প্রস্তুতি। উদ্যোক্তা থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই তৈরি হয়েছিলেন পুজোর এই দিনগুলোর জন্য। সেখানে আচমকা বৃষ্টি নামায় নামায় উদ্বিগ্ন সকলেই।
কান্দির জেমো ইন্দ্রতলা পুজো কমিটির সম্পাদক সুমন মিশ্র বলেন, “পঞ্চমীর রাতে আচমকা যেভাবে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছিল তাতে শুধু আমরাই নয় অনেক পুজো উদ্যোক্তাদের ঘুম উড়ে গিয়েছিল।” ইন্দিরাজি স্পোর্টিং ক্লাবের অন্যতম কর্তা সুমন মণ্ডল বলেন, “এমনটা প্রত্যাশিত ছিল না। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে সকলকেই তা মেনে নিতে হবে।”
বহরমপুরের বাসিন্দা হিরণ্ময় ত্রিদেবী বলেন, “গত বছরেও পুজোর দিনগুলিতে বৃষ্টি হওয়ায় পুজো মাটি হয়ে গিয়েছিল। এ বারেও পুজোর আগে বৃষ্টি হওয়ায় ভেবেছিলাম হয়তো পুজোর দিনগুলি ভালো যাবে। কিন্তু সোমবারের বৃষ্টিতে এখন মনে হচ্ছে পুজোর দিন কটা দিন জলে না যায়। ”
তবে উল্টো চিত্রও রয়েছে। কৃষ্ণনগর, বহরমপুর, নবদ্বীপ, বাদকুল্লা সহ দুই জেলার বহু পুজো মণ্ডপে ষষ্ঠীর বিকেল থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে। বহরমপুরে লালবাগ এলাকায় সন্ধে হতে না হতেই নেমেছে মণ্ডপ ভরে গিয়েছে কালো মাথায়। শহর লাগোয়া বিভিন্ন গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে, গাড়িতে করে হাজার হাজার মানুষ ঠাকুর দেখতে এসেছেন শহরের মণ্ডপে। পুজো প্রাঙ্গনে ভিড় জমিয়েছে কচিকাঁচারা। যা দেখে দৃশ্যতই আপ্লুত পুজোকর্তারা। কাদাই ভট্টাচার্য পাড়ার সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সদস্য সৌম্যদীপ দাস বলেন, “ষষ্ঠীতেই যদি এই ভিড় হয় তবে অষ্টমী-নবমীতে
কী হবে!”
ষষ্ঠীর দিনেই কার্যত সপ্তমীর মতো ভিড় উপছে পড়েছে কৃষ্ণনগরে। সেখানে দর্শনার্থীদের একাংশ যেমন ভিড় জমিয়েছে কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে তেমনি একাংশ যাচ্ছেন ঘূর্ণির তরুণ সঙ্ঘের এবারের থিম কলকাতার বিড়লা মন্দিরের আদলে তৈরি মণ্ডপ দেখতে। এ বছর আবার রাজবাড়িতে প্রতিমার দশর্নের সঙ্গে সঙ্গে উপরি পাওনা হিসেবে রয়েছে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলের রাজ সিংহাসন, পালকি ও সিন্দুক। রায়পাড়ার রায়বাড়ি ও নীল দুর্গা দেখতেও উপচে পড়েছে ভিড়।
বাদকুল্লার পুজোগুলিতে সন্ধে থেকেই জনজোয়ার। নামী মণ্ডপগুলি দেখতে ভিড় এমনই যে গাড়ি রেখে আধ কিলোমিটার হেঁটে তবেই পৌঁছতে হচ্ছে মণ্ডপে। নবদ্বীপে ভিড়ের একাংশ আবার দক্ষিণমুখি। সেখানে মণিপুর বারোয়ারির থিম ‘আমরা আলোর পথযাত্রী’ দেখতে পড়েছে লম্বা লাইন। আবার রাধাবাজারের লোকগ্রামেও পা রাখার জায়গা নেই। একই ছবি উত্তরের বড়ালঘাট স্পোর্টিং আজাদ হিন্দ ক্লাবের মণ্ডপেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy