তৃণমুলের বিক্ষুব্ধ নেতা ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে এবার পথে নামছে সাগরদিঘির বিধায়ক সুব্রত সাহার অনুগত গোষ্ঠী। শনিবার সন্ধ্যায় সুব্রত অনুগামী তৃণমূলের সাগরদিঘি ব্লক কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান-সহ অন্য নেতারা বিরোধী গোষ্ঠীকে সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী আখ্যা দিয়ে পাল্টা আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন।
সাগরদিঘিতে দীর্ঘ দিন ধরে তৃণমূল বিধায়ক সুব্রত সাহার সঙ্গে দলের ব্লক কমিটির সভাপতি মহম্মদ আলি (মধু) ও সামশুল হুদার অনুগামীদের বিরোধ চলছে। বার বার এই বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। দলের ব্লক সভাপতি মহম্মদ আলির উপস্থিতিতে প্রকাশ্য সভায় সুব্রতবাবুর কুশপুতুলও পুড়িয়েছে বিক্ষুব্ধরা। একাধিক স্কুল নির্বাচনে আলাদা ভাবে প্রার্থী দিয়েছেন তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীই। সম্প্রতি সুব্রত অনুগামী সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন দলের ১৬ জন সদস্যের মধ্যে ১১ জন বিক্ষুব্ধ সদস্য। তাঁদের সিপিএম ও কংগ্রেসের ১১ জন সদস্য সমর্থন জানিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে কৌশলে এখনও টিকিয়ে রাখা হয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড। ইতিমধ্যেই সুব্রতবিরোধী মহম্মদ আলিকে ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নয়া সভাপতির পদে বসানো হয়েছে সুব্রত অনুগামী মতিউর রহমানকে। ফলে বিক্ষুব্ধরা আরও বেপরোয়া হয়ে প্রকাশ্যে তৃণমূলের পতাকা নিয়েই সাগরদিঘিতে পথে নেমেছেন সুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে। এমনকী বিক্ষুব্ধরা জেলা সভাপতি মান্নান হোসেনের সমর্থনে মিছিলে স্লোগান তোলায় দলের মধ্যে অস্বস্তি আরও বেড়েছে।
তৃণমূলের নয়া ব্লক সভাপতি সুব্রতপন্থী মতিউর রহমান বলেন, “এই বিক্ষুব্ধরা একসময় কংগ্রেসে ছিলেন। তখন অধীর চৌধুরীও তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এখন ওরা তৃণমূলকে শেষ করতে চাইছে। তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়ে এরা দলের বিধায়কের বিরুদ্ধে রাস্তায় মিছিল করবে, দলের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে বিরোধী দলের হাত শক্ত করবেতা চলতে দেওয়া হবে না। জেলা কমিটিকে বলা হয়েছে এদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নিতে। জেলা কমিটি যদি এদের বহিষ্কার না করে তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর ব্লক কমিটিই বহিষ্কার করবে।” সুব্রতপন্থী দলের যুব সংগঠনের সভাপতি মেহেবুব আলম , ব্লকের কার্যকরী সভাপতি মোদাশ্বর হোসেনও বিক্ষুব্ধদের বহিষ্কার করার পক্ষে সওয়াল করেছেন।
তবে, দলের মধ্যে তাঁকে ঘিরে ক্ষোভের কথা মেনে নিলেও এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিধায়ক সুব্রত সাহা। তিনি বলেন, “সাগরদিঘির মানুষ সব দেখছে। আমি এখানে বিধায়ক। ৫ বছর কাজ করার জন্য দায়বদ্ধ আমি। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে সাগরদিঘির মানুষই শেষ কথা বলবেন।”
এ দিকে, সাগরদিঘিতে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতা সামশুল হুদা তাঁদের বহিষ্কারের হুমকি শুনে আকাশ থেকে পড়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা দলের কোনও পদেই নেই। তাহলে কিসের বহিষ্কার? পঞ্চায়েত সমিতির ১১ জন সদস্য তৃণমূল থেকে আগেই পদত্যাগ করেছেন। তাঁদেরও বহিষ্কার অবান্তর। আর কে কাকে বহিষ্কার করে তা বলবে সাগরদিঘির মানুষ। দলের ব্লক কমিটির একটি সভাতেও গত সাড়ে তিন বছরে সুব্রতবাবু কখনও হাজির হননি। মন্ত্রীত্ব খুইয়ে পঞ্চায়েত সমিতিকে ঢাল করে তোলাবাজি চালাতে চাইছেন উনি। জেলা সভাপতি মান্নান হোসেনকে সব জানিয়েছি। তাঁকে নেতা মেনেই সাগরদিঘিতে তৃণমূলের পতাকা বইব আমরা।” জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতি গঠনের পর থেকেই সাগরদিঘিতে দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ চলছে। ব্লক সভাপতি পরিবর্তনের পর বিরোধ আরও বেড়েছে। দল থেকে বহিষ্কার কাজের কথা নয়। যাঁরা ক্ষুব্ধ তাঁরাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালবেসেই দল করছেন। তাঁদের কথাও শুনতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy