Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

গ্রামে বিক্ষোভের মুখে অভিজিৎ

প্রচারে বেরিয়ে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে হুডখোলা গাড়িতে চেপে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকের সাদিকপুরে প্রচারে গিয়েছিলেন অভিজিৎবাবু। ওই এলাকায় জলের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। রাস্তাঘাটও বিশেষ ভাল নয়। ভিআইপি সাংসদের কাছে সেই অভাব-অভিযোগ জানাতে জমায়েত করেন গ্রামবাসীরা। অভিযোগ, সাংসদকে দাঁড় করাতে রাস্তা আটকে একটা রিকশা রেখে দেন গ্রামবাসী। অভিজিৎবাবুর গাড়ি সেখানে আটকে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা নেমে হইচই শুরু করেন।

গাড়ি ঘিরে গ্রামবাসীরা। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

গাড়ি ঘিরে গ্রামবাসীরা। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৫০
Share: Save:

প্রচারে বেরিয়ে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার দুপুরে হুডখোলা গাড়িতে চেপে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকের সাদিকপুরে প্রচারে গিয়েছিলেন অভিজিৎবাবু। ওই এলাকায় জলের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। রাস্তাঘাটও বিশেষ ভাল নয়। ভিআইপি সাংসদের কাছে সেই অভাব-অভিযোগ জানাতে জমায়েত করেন গ্রামবাসীরা। অভিযোগ, সাংসদকে দাঁড় করাতে রাস্তা আটকে একটা রিকশা রেখে দেন গ্রামবাসী। অভিজিৎবাবুর গাড়ি সেখানে আটকে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা নেমে হইচই শুরু করেন। রিকশাচালককে দু’চার ঘা থাপ্পড়ও কষান দুই নিরাপত্তারক্ষী। এরপরেই উত্তেজিত গ্রামবাসী বিক্ষোভ শুরু করেন। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকায় শেষ পর্যন্ত রোড-শো বন্ধ রেখেই অভিজিৎবাবু ফিরে যান। কংগ্রেসের দাবি, তৃণমূল পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তৃণমূলের দাবি, সাংসদকে কাছে পেয়ে গ্রামবাসীরা জড়ো হয়েছিল ঠিক। তবে, এর সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই।

অভিজিৎবাবু দুপুর থেকেই ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। তাঁর একান্ত সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানান, প্রচারে বেরিয়েছেন বলে বন্ধ রয়েছে ফোন। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত রোড-শো করেন অভিজিৎবাবু। পরে তিনি ব্লক কংগ্রেস সভাপতির মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন এই নিয়ে কোনও কথা বলবেন না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মির্জাপুরে জলের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। পূর্বতন সাংসদ প্রণব মুখোপাধ্যায় রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকের সমস্ত গ্রামে আর্সেনিক মুক্ত জল দেওয়ার একটি প্রকল্প চালু করেন। সেই জলের পাইপলাইন ব্লকের প্রায় সবর্ত্র গেলেও মির্জাপুরের বেশিরভাগ গ্রামে এখনও পৌঁছয়নি। গরম পড়তেই মির্জাপুর পঞ্চায়েতের বোধপুর, সাদিকপুর, জগন্নাথপুর, বাইন্ধাপাড়া, বিজয়পুর, আমগাছি, বাছুরাইল, নওদা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গ্রামের নলকূপেও জল উঠছে না। এলাকায় রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল সরবরাহের পাইপলাইন বসানো হলেও তা থেকে মির্জাপুরের একটি অংশের মানুষ ছাড়া কেউ জল পাচ্ছেন না। জল না পাওয়ার ক্ষোভে কয়েকশো গ্রামবাসী গত ৩ এপ্রিল গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস দিনভর তালা ঝুলিয়ে অবরোধ করে রাখেন। সাদিকপুরের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের সুপ্রিয়া খাতুন বলেন, “গ্রামের নলকূপে জল উঠছে না। পাইপলাইনে জল আসছে না সর্বত্র। এলাকার সাংসদকে সেই সব দুঃখের কথা জানাতেই জড়ো হয়েছিলাম আমরা।” মির্জাপুরের তৃণমূল নেতা মোমিন শেখ বলেন, “অভিজিৎবাবু আমাদের কোনও কথাই শুনতে চাননি। তার উপর গ্রামের নিরীহ রিকশা চালককে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা মারধর করে। এতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন গ্রামের মানুষ।”

রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি হাসানুজ্জামান বাপ্পা অবশ্য দাবি করেন, “রিকশা দিয়ে ওরা রাস্তা এমন ভাবে আটকে দেয়, অভিজিৎবাবুর গাড়ি আটকে যায়। তখন দুই নিরাপত্তারক্ষী গাড়ি থেকে নেমে ওই ভ্যান চালককে ভ্যান সরিয়ে নিতে বলে। মদ্যপ ভ্যানচালক না শোনায় তাকে রাস্তা থেকে ভ্যান-সহ সরিয়ে দিয়ে গাড়িটি পার করানো হয়। নিরাপত্তারক্ষীরা মারধর করেনি। পুরোটাই তৃণমূলের পূর্ব পরিকল্পিত।”

ভ্যান চালক সোনু শেখের অবশ্য দাবি, “পূর্ব পরিকল্পনার কোনও ব্যাপার নেই। আমি ভ্যান নিয়ে যাচ্ছিলাম। তাতে ওদের বড় গাড়ি আটকে যায়। ওরা গালাগালি করলে আমি বলি দু’দুবার ভোটে জিতেছেন, তবু গ্রামের রাস্তা মেরামত করেননি কেন? এরপরই দু’জন সাদা পোশাকের পুলিশ গাড়ি থেকে নেমে আমাকে চড় থাপ্পড় মারতে শুরু করে।”

দু’দলের রাজনৈতিক তরজায় চাপা পড়েছে জলের সমস্যা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE