ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। হন্যে হয়ে নেটের খোঁজে শহর ছেড়ে কিশোর-তরুণেরা পাড়ি দিচ্ছে ঝাড়খণ্ডের চাঁচকি মাঠে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
মোবাইলের স্ক্রিনে একেবারে সেঁদিয়ে গিয়েছে ছেলেটি— ‘‘তোর নেট চলছে?’’ অস্ফুট উত্তর ফেরে, —ঝক্কাস, কেন তোরটা?
প্রথম পৌষের হুহু হাওয়া ফুঁড়ে গ্রাম থেকে পাক্কা পাঁচ কিলোমিটার সাইকেল ঠেঙিয়ে পড়শি জেলার খোলা মাঠে পাশাপাশি বসে প্রায় নিশ্চুপ বন্ধুত্বে ডুবে রয়েছে ওরা।
স্কুল থেকে পাওয়া সাইকেলে ঝড় তুলে শওকত যখন চাঁচকির মাঠে পৌঁছল ততক্ষণে সেখানে ভিড় করেছে আরও অন্তত জনা সাত। মাঠ, বন-বাদাড়, গ্রাম এমনকি রাজ্য ভুলে ওরা এসেছে ঝাড়খণ্ডের চাঁচকি ময়দানে।
হাতে মোবাইল, কানে হেড ফোন, পাটকাঠির স্তূপের উপরে বসে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি কিংবা প্রথম বর্ষ— নেট দুনিয়ার চেনা উঠোনে ফিরে ওদের স্বস্তি যেন রোদ্দুর হয়ে ঝরছে!
নয়া নাগরিকত্ব আইনের ধাক্কায় তাদের চেনা ভিটেয় আপাতত নেট বন্ধ। তা হোক, ইন্টারনেটের খোঁজে পথ ভাঙতে হবে না! ছবি, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জারের দুনিয়ায় পাড়ি দিতে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া মুর্শিদাবাদের গ্রাম থেকে ছেলেপুলেরা এখন নিয়মিত পাড়ি দিচ্ছে ভিন রাজ্যে।
ধুলিয়ানের প্রাথমিক শিক্ষক জামিরুল হোসেন বলছেন, ‘‘এ হল নেট চুরির নেশা! জেলায় যখন বন্ধ হল ইন্টারনেট, দেখি পাড়া ফাঁকা করে দলে দলে ছেলেরা সব উধাও। কোথায় গেল? খোঁজ নিয়ে জানলাম, সব ছুটেছে চাঁচকির মাঠে। ঝাড়খণ্ডে তো তো ইন্টারনেটের অবাধ ভূমি!’’
ধুলিয়ানের কলেজ পড়ুয়া আজমাউল শেখ বলছেন, ‘‘পাঁচ দিন কেটে গেল। কত দিন ধৈর্য্য ধরা যায় বলুন তো? নেট না পেলে কি সমস্যা হয় প্রশাসনের তো তা জানা উচিত!’’
তাঁর গলায় দগদগে উষ্মা। রবিবার, থেকে নেট বন্ধ মুর্শিদাবাদে। বুধবার পর্যন্ত ছবিটা বদলায়নি। তাই নেটের সংযোগ পেতে দলে দলে স্কুল কলেজের পড়ুয়ারা ছুটেছে ঝাড়খণ্ড।
বিক্ষোভের আঁচ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য এ ক’দিন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করেছিল জেলা প্রশাসন। শওকতদের কপাল পুড়েছিল। পাখির মতো তাই উড়ে উড়ে নেট দুনিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করেছে তারা।
শওকত বলছে, ‘‘শেষে চাঁচকির মাঠের কথা কানে এল। সাইকেল উড়িয়ে গিয়ে দেখলাম খবরটা এক্কেবারে খাঁটি, মোবাইল খুললেই নেমে আসছে সব কিছু!’’
ধুলিয়ান থেকে ঝাড়খণ্ড মেরেকেটে চার-পাঁচ কিলোমিটারের দূরত্ব। শমসেরগঞ্জের ভাসাই পাইকর থেকে সাকুল্যে আড়াই কিলোমিটার দূরে ঝাড়খণ্ডের চাঁচকি মাঠ।
ভাসাই পাইকরের দশম শ্রেণির ছাত্র তোফাজুল শেখের শখ ইন্টারনেটে বিভিন্ন গেম খেলা। উঠোনে গুম হয়ে বসে বলছে, ‘‘পরীক্ষা শেষ। মা বলেছিল পরীক্ষার পরে খেলতে দেবে। এখন কী করব, আমাকে তো চাঁচকির মাঠেও যেতে দেয় না বাড়ির লোক!’’
দোষ তোফাজুলকে দিয়ে লাভ কী, লালপুরের রাজমিস্ত্রি সেন্টু শেখের শখ সিনেমা দেখা। তার কথায়, “চারদিকে অশান্তির জন্য ট্রেন, বাস বন্ধ। কাজ নেই। একটু যে নেট ঘাঁটব তারও উপায় নেই।’’
চাঁচকির মাঠ যেন রূপকথা হয়ে হাতছানি দিচ্ছে তাদের!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy