জমেছে জঞ্জাল। কৃষ্ণনগরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে। নিজস্ব চিত্র
স্কুলের পাশেই রাস্তার ধারে জমে রয়েছে আবর্জনার স্তূপ। নিয়মিত সাফ হয় না। দুর্গন্ধে ক্লাসে বসতে পারে না পড়ুয়ারা। অগত্যা এক দিন রাস্তায় নেমে অবরোধ করেছিল হেলেন কেলার স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা। পুরসভার তরফে আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলে সে দিনের মতো অবরোধ ওঠে।
তার পর থেকে কিছু দিন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের রাজা রোড থেকে নিয়মিত আবর্জনা তুলে নিয়ে গিয়েছেন সাফাইকর্মীরা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আবার সেই পুরনো চিত্রই ফিরে আসতে শুরু করেছে। স্কুলের অধ্যক্ষ স্বপন সরকার বলছেন, “আবার সেই আগের অবস্থা হচ্ছে। দুর্গন্ধে ক্লাস করাই কঠিন হয়ে পড়ছে।”
শুধু রাজা রোড নয়, শহরের বহু রাস্তাতেই এখন এই ছবি। উপচে পড়া আবর্জনা। সেই জঞ্জাল টানাটানি করে চারদিকে ছড়িয়েছে কুকুর-বিড়ালে। কোথাও-কোথাও জঞ্জালের স্তূপ থেকে ছড়ানো দুর্গন্ধের চোটে এলাকায় টেকা কঠিন। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে শক্তিনগর হাইস্কুলের পাশের মাঠেও জঞ্জালের স্তূপ। আবার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ময়লা ফেলার লোহার ডাম্পারের পাশেই উপচে পড়ে থাকে আবর্জনা। একই ছবি করিমপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশের রাস্তায় বা ১৩ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের রায়পাড়া এলাকায়।
শহরের বেশির ভাগ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে নিয়মিত আবর্জনা সংগ্রহ করা হয় না। গৃহস্থালির আবর্জনা রাস্তায় ফেলে দিয়ে যান অনেকে। কোনও-কোনও জায়গায় পুরসভার পক্ষ থেকে পাড়ার ভিতরে ময়লা ফেলার একটি নির্দিষ্ট জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেকে সেখানে গিয়ে ময়লা ফেলার কষ্ট করতে রাজি নন। তাঁরা তাই বাড়ির সামনেই রাস্তায় আবর্জনা ছুঁড়ে ফেলেন।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের শক্তিনগর পাঁচমাথা মোড় এলাকার বাসিন্দা শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “বছর দুয়েক আগে ময়লা জমিয়ে রাখার জন্য প্লাস্টিকের বালতি দেওয়া হয়েছিল। সেটা কবেই ভেঙে গিয়েছে। তার পরে আর বালতি দেওয়া হয়নি।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘ময়লা নেওয়ার গাড়িও নিয়মিত আসে না। তা হলে এ সব ফেলব কোথায়?” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহ প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। তার পর একে-একে ১৪, ১৫ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে শুরু হয়েছে। সেখানেও দু’এক দিন অন্তর গাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহ করে। বাকি ওয়ার্ডগুলিতে তা-ও হয় না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
রাস্তার ধারে আবর্জনা স্তূপীকৃত হয়ে থাকার একটা বড় কারণ, সব ওয়ার্ডে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করে আনা আবর্জনা জড়ো করার মতো আঁস্তাকুড় বা ভ্যাট নেই। সাফাইকর্মীরা রাস্তার কোন চওড়া জায়গায় আবর্জনা জমিয়ে রাখেন। কিন্তু সে সব নিয়মিত সংগ্রহ করে নিয়ে যায় না পুরসভার গাড়ি। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে রাধানগরের লাহিড়ি পুকুরের পাড়ে জমিয়ে রাখা হয় আবর্জনা। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সেই জায়গাটুকুও নেই। সেখানে রাস্তার উপরেই জঞ্জাল জমিয়ে রাখা হয়। কোনও-কোনও ওয়ার্ডে লোহার বা সিমেন্টের ভ্যাট রাখা হয়েছে। তবে তা হাতে-গোনা। বাজার এলাকাগুলিতে তেমন সমস্যা না থাকলেও পাড়া বা গলির ভিতরে কিন্ত জঞ্জাল সাফাইয়ের সমস্যা এখনও প্রকট।
কেন এই দুরবস্থা?
কাউন্সিলরদের একাংশের দাবি, পর্যাপ্ত সাফাইকর্মীর অভাবই প্রধান কারণ। বর্তমানে পুরসভার স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশো। আছে আবর্জনা সংগ্রহের জন্য ১১টি গাড়ি। সারা শহর ঘুরে ওই গাড়িগুলি আবর্জনা তুলে গোদাডাঙার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলে আসে। বাড়ি বাড়ি ময়লা সংগ্রহের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে আছেন ৬ জন করে কর্মী। প্রতিটি গাড়িতেও থাকেন ছ’জন করে। বাকি কর্মীদের অন্য জায়গায় কাজ করতে হয়। কিন্তু মাত্র ছ’জনের পক্ষে প্রতি দিন এত বড় বড় ওয়ার্ডের প্রতিটি এলাকার প্রতিটি বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। আবার গাড়িতে মাত্র ছ’জন থাকায় তাঁদের পক্ষেও রোজ প্রতিটি এলাকা থেকে জমে থাকা আবর্জনা সংগ্রহ করে আনা সম্ভব হয় না। তার উপরে শহরের পরিধি বাড়ছে, বাড়ছে পরিবারের সংখ্যাও। কিন্তু সাফাইকর্মী বাড়ছে না।
এক সময়ে পুর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, দিনে দু’বার করে জঞ্জাল সংগ্রহ করা হবে। কিন্তু কর্মীর অভাবে দিনে এক বারও সেই কাজটা করা যাচ্ছে না। কিন্তু সমস্যা যাই থাক, তা সমাধান করার দায়িত্ব পুর কর্তৃপক্ষের। তার দায় নেবে কে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy