Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Shantipur

বর্জ্যের স্তূপে মলিন ঐতিহ্যের শহর

দুয়ারে পুরভোট। কী চেয়েছি আর কী পাইনি, তার হিসেব মেলানোর পালা। কোথাও রাস্তা বেহাল, কোথাও ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে জল থইথই, কোথাও বিরোধী দলের এলাকা উপেক্ষিত। সব মিলিয়ে কেমন আছে শহর? ঘুরে দেখছে আনন্দবাজার।বাসিন্দাদের একাংশ জানান, জঞ্জাল স্তূপের আকার নিলেও কোথাও তা দিনের পর দিন পরিষ্কার করা হয় না।

রাস্তার উপরে জমেছে জঞ্জাল। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। নিজস্ব চিত্র

রাস্তার উপরে জমেছে জঞ্জাল। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। নিজস্ব চিত্র

শান্তিপুর
সম্রাট চন্দ শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২০ ০০:০৪
Share: Save:

জঞ্জাল অপসারণে রয়েছে ম্যাটাডোর, ট্রাক্টর। সরু গলিতে জঞ্জাল তুলতে রয়েছে ব্যাটারিচালিত গাড়িও। রয়েছে দু’টি কম্প্যাক্টর। স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে রয়েছে দেড়শো সাফাই কর্মী। পুরবাসীদের একাংশের অভিযোগ, এত আয়োজনের পরেও ঐতিহ্যবাহী শহর শান্তিপুরে জঞ্জালের সমস্যায় ইতি টানা যায়নি। সমস্যার কথা মানছে পুরসভাও। তাদের দাবি, মূলত সাফাই কর্মী এবং জঞ্জাল ফেলার জায়গার অপ্রতুলতা এর জন্য দায়ী।

বাসিন্দাদের একাংশ জানান, জঞ্জাল স্তূপের আকার নিলেও কোথাও তা দিনের পর দিন পরিষ্কার করা হয় না। কোথাও আবার আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা নেই। কখনও রাস্তার ধারে বা নিকাশি নালায় জমা হয় জঞ্জাল। শহরের বুক চিরে চলে যাওয়া কেসি দাস রোড শান্তিপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। তা একাধিক ওয়ার্ডের মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে। সেই রাস্তার দু’ধারেও জঞ্জাল পড়ে থাকে। উচ্ছিষ্ট খাবার থেকে শুরু করে গেরস্থালির পরিত্যক্ত জিনিস— বাদ নেই কিছুই। সোমবার মুসলিম হাইস্কুলের সামনে দেখা গেল জঞ্জালের স্তূপ সেখানেও।

পুরবাসীদের একাংশের অভিযোগ, মোতিগঞ্জ মোড় থেকে কিছুটা এগিয়ে নৃসিংহপুর ঘাটের দিকে যে পথ চলে গিয়েছে, সেই রাস্তার পাশে, নিকাশি নালায় জঞ্জাল পড়ে থাকে। এমনকি, জঞ্জাল জমা হয় নিকাশি নালাতেও। ডাবরেপাড়া, খাঁপাড়ার মতো এলাকাতেও রাস্তার ধারে জঞ্জাল জমে। উপায়ান্তর না দেখে অনেক সময়ে সেই জঞ্জালের স্তূপে আগুন ধরিয়ে দেন কেউ কেউ। তাতে ধোঁয়ার পাশাপাশি দূষণ ছড়ায়।

লঙ্কাপুকুর লেন, তোপখানাপাড়া লেনের বাসিন্দা অনিল দেবনাথ, সুরজিৎ প্রামাণিকেরা বলছেন, “দিনের পর দিন চলে যায়। রাস্তার ধারে জঞ্জাল পড়ে থাকে। পুরকর্মীরা তা তুলে নিয়ে যান বটে, তবে তা নিয়মিত নয়।” তাঁদের কথায়, ‘‘শান্তিপুর এক ঐতিহ্যবাহী শহর। তার টানে দেশে-বিদেশ থেকে অনেকে এ শহরে আসেন। বিশেষ করে রাসের সময়েয় কিন্তু এমন জঞ্জাল কিছুটা হলেও শহরের ঐতিহ্যকে মলিন করছে।’’

শহরের একাধিক এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্জ্য তুলে তা নিকাশি নালার পাশেই ফেলে রাখা হয়। অনেক সময় তা ফের নালায় গিয়ে পড়ে। ময়লা নেওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি বালতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাফাইয়ের কাজ অনিয়মিত হওয়ায় বালতিতে বর্জ্য উপচে পড়ে।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর এলাকায় জঞ্জাল অপসারণের জন্য ম্যাটাডোর, ট্রাক্টরের পাশাপাশি সরু গলিতে জঞ্জাল তুলতে কেনা হয়েছে ছয়টি ব্যাটারিচালিত গাড়ি। একটি পশুপাখির শবদেহ নিয়ে যাওয়ার এবং বাকিগুলি জঞ্জাল অপসারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। রয়েছে দু’টি কম্প্যাক্টরও। পুর এলাকার ২৪টি ওয়ার্ড থেকে জঞ্জাল তুলে নিয়ে গিয়ে তা শহরের প্রান্তে ময়লাপোতায় গিয়ে ফেলার ব্যবস্থা রয়েছে। ২৪টি ওয়ার্ডের জন্য শ’দেড়েক সাফাই কর্মীর মধ্যে স্থায়ী রয়েছেন জনা তিরিশেক।

এত ব্যবস্থার পরেও শহরে জঞ্জাল সমস্যায় কেন ভুগছে শহর?

পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, ২৪টি ওয়ার্ডে আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য যত জন সাফাই কর্মী দরকার তত জন নেই। তার উপরে সমস্যা রয়েছে ময়লা ফেলার জায়গা নিয়েও। তবে জঞ্জালের সমস্যা রাশ টানতে মাইক্রো প্ল্যানের জন্য পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। তার জন্য এজেন্সি নিয়োগ করা হয়েছে। জৈব বর্জ্য ‘রিসাইক্লিং’ করে সার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই মতো শহরের ছয়টি জায়গাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে মাইক্রো প্ল্যান হবে। একটিতে পচনশীল এবং বাকিগুলিতে জৈব সার তৈরি করা হবে। এর জন্য মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আবারও বাড়ি বাড়ি বালতি দেওয়া হবে। ১৪ থেকে ২১ মার্চ আবার এই কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। বালতি দেওয়ার পাশাপাশি জঞ্জাল পৃথকীকরণের জন্যও বলা হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy