Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ইদে বিপাকে জলবন্দি ধুলিয়ান

পরবের দিনটাই বুঝি জলে গেল! আশঙ্কাটা ভাসছিল কয়েকদিন ধরেই। ইদ যত এগিয়ে এসেছে সত্যি হয়েছে সেই আশঙ্কাটাই। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জল জমেছে ধুলিয়ানের বিস্তীর্ণ এলাকায়। উৎসবের দিনে এমন ঘটনায় রীতিমতো বিপাকে সংখ্যালঘু মহল্লা।

জলে ভাসছে ধুলিয়ানের হিজলতলা। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

জলে ভাসছে ধুলিয়ানের হিজলতলা। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০২:১১
Share: Save:

পরবের দিনটাই বুঝি জলে গেল!

আশঙ্কাটা ভাসছিল কয়েকদিন ধরেই। ইদ যত এগিয়ে এসেছে সত্যি হয়েছে সেই আশঙ্কাটাই। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জল জমেছে ধুলিয়ানের বিস্তীর্ণ এলাকায়। উৎসবের দিনে এমন ঘটনায় রীতিমতো বিপাকে সংখ্যালঘু মহল্লা।

ধুলিয়ানের প্রায় ৭৯ শতাংশ মানুষই সংখ্যালঘু। ইদের বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই নাগাড়ে বৃষ্টি দেখে উদ্বিগ্ন ছিল শহর। নিকাশি ব্যবস্থা মজবুত না থাকায় স্বাভাবিক কারণেই শহরের বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকটি রাস্তাতেও জল জমেছে। জলমগ্ন এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে ৬, ৮, ১১, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড। বৃষ্টির এই জমা জল সরিয়ে ফেলার ব্যাপারে কোনও আশ্বাস দিতে পারেননি তৃণমুল নিয়ন্ত্রিত ধুলিয়ানের পুরকর্তারা।

তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে ধুলিয়ানের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সবে তো বর্ষা শুরু। গত চার দিনের বৃষ্টিতেই যদি শহরের এই হাল হয় তবে ভরা বর্ষায় জমা জলের দুর্ভোগ যে আরও বাড়বে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বাসিন্দাদের মতো উদ্বিগ্ন পুরকর্তারাও। সমস্যার কথা কবুল করে ধুলিয়ানের পুরপ্রধান সুবল সাহা বলছেন, ‘‘জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা সে ভাবে না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমছে। জলমগ্ন ওয়ার্ডগুলিতে বাস্তবে এখনও পর্যন্ত কোনও নিকাশি নালাই নেই। ভরা বর্ষায় সমস্যা আরও বাড়বে।”

তিনি জানান, গত বছর বর্ষার সময় ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি নিকাশি নালা সাফাই করে জমা জল গঙ্গা দিয়ে বের করার চেষ্টা হয়। দেখা যায় সামনের একটি চর তাতে ধসে পড়ে। তাই শেষ পর্যন্ত সে নালাও বন্ধ করে দিতে হয়। শহরে সামগ্রিক নিকাশি নালা না হলে জমা জল বের করা যাবে না। পাঁচ-দশ লক্ষ টাকার কাজ হলে পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে করা যেত। কিন্তু অস্থায়ী ভাবে সে কাজ করতেও কম করে ২ কোটি টাকা দরকার। এ ব্যাপারে পুরমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। সুবলবাবুর কথায়, ‘‘ধুলিয়ান শহরটা কচ্ছপের ঠিক উল্টো পিঠের মতো। চার দিকটা উঁচু। আর মাঝখানটা নিচু। কাজেই শহরের জল নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে গেলে ১০০ কোটি টাকাতেও কুলোবে না। কাজেই এর চটজলদি সমাধান সম্ভব নয়।

ধুলিয়ান শহরে এমন ঘটনা নতুন নয়। ফি বর্ষায় এমন জলছবিতে অভ্যস্থ শহর। কিন্তু সেই সমস্যাটা ছিল ক্ষণস্থায়ী। শহরের আশপাশের এলাকা ছিল ফাঁকা। ফলে বৃষ্টির বাড়তি জল মাঠ দিয়ে নেমে যেত। এখন শহর লাগোয়া সেই সব জায়গায় ঘনবসতি গড়ে উঠেছে। শহরের জল বেরোতে পারছে না। এ বারে রমজান মাসে এমন ঘটনায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে।

৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমিন শেখ বলেন, “রোজার দিন। কেউ একবারও খোঁজ পর্যন্ত নিল না গো।” জল জমে রয়েছে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি প্রাথমিক স্কুলেও। সেই জল পেরিয়ে স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে পড়ুয়ারা। ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি নুরুল খান অবশ্য বলছেন, “বর্ষায় বৃষ্টি তো হবেই। তাই পুরকর্তাদের আগে থেকেই সতর্ক থাকা উচিত ছিল। জমা জল সরাতে পাম্প বসানো দরকার। কিন্তু এখনও সে পাম্প চালু করা হয়নি। বৃষ্টি বাড়লে বাড়বে দুর্ভোগও। বহু ইদগাহ জলের তলায়। তাই নমাজ নিয়ে সমস্যা হবে বহু এলাকাতেই।”

শহরের হাতিচিত্রা মসজিদের ইমাম মৌলানা কারি আব্দুর রহিম বলেন, “অনেক ইদগাহে জমা জল ও কাদার জন্য নমাজ পড়া সম্ভব হবে না। তাছাড়া বৃষ্টি যদি চলতেই থাকে তবে বহু এলাকাতেই মসজিদেই নমাজের ব্যবস্থা করতে হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

eid distress water logged
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE