—প্রতীকী ছবি।
শীতের দুপুর। কোথা দিয়ে হুশ করে দিন কেটে যায়। দুপুরবেলা। বৃদ্ধ সঞ্জয় রায় বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে হাঁক পাড়ছেন, ‘‘গোপীনাথ, ভোলা, পটল কোথায় গেলি সব। খাবার সময় হয়েছে, তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়।’’
ওই এলাকায় সদ্য পা রেখেছেন এমন কেউ ছাড়া পড়শিরা সকলেই জানেন, গোপীনাথ, ভোলা আসলে সঞ্জয়বাবুর পোষ্যদের নাম। কয়েক পুরুষ ধরে রায় বাড়িতেই বেড়ে উঠছে ওইসব পথ কুকুর। কলকাতায় দুই নার্সিং ছাত্রীর ১৬টি কুকুর ছানাকে পিটিয়ে মারার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর রাগে ফুঁসছেন পেশায় গ্রামীণ চিকিৎসক সঞ্জয়বাবু। রানিনগর সীমান্তের গ্রামে তাঁর বাড়ি। টানাটানির সংসার হলেও কুকুরদের প্রতি তাঁর ভালবাসায় কখনও ঘাটতি নেই। মোহনগঞ্জ গ্রামের ওই গ্রামীণ চিকিৎসকের ঘরে তিনবেলা পাত পড়ে প্রায় ডজনখানেক কুকুর আর ২২টি বিড়ালের জন্য।
জীবজন্তুর প্রতি এমন ভালবাসা সঞ্জয়বাবুর পরিবারেই অবশ্য আটকে নেই। ঘটনাচক্রে, তাঁর মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গেলেও একই দৃশ্য চোখে পড়বে। নবীপুরে সঞ্জয়বাবুর জামাই বাপি সাহার বাড়িতেও আটখানা কুকুর। প্রতিদিন তাদের জন্য মাছ-দুধ বরাদ্দ থাকে। কুকুরদের খাওয়ানোর পরই মুখে ভাত তোলেন দুই পরিবারের সদস্যরা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, বাজারঘাট, রাস্তায় জখম হয়ে ঘুরছে কুকুর। মাছি বসছে ক্ষতস্থানে। এমন কুকুর রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে খবর পেলেই মনোহারি দোকানের ঝাঁপ নামিয়ে সেখানে হাজির হয়ে যান বাপি। টোটো বা ভ্যানে করে ওই কুকুরকেই বাড়িতে নিয়ে গিয়ে শুশ্রুষা করে সারিয়ে তোলেন তিনি। তারপর সেই কুকুরের পাকাপাকি আস্তানা গড়ে ওঠে তাঁর বাড়িতেই।
রানিনগর সীমান্তের এই দু’টি পরিবার কেবল আত্মীয়তার সূত্রেই বাঁধা পড়েনি। বাঁধা পড়েছে পশুপ্রেমের সূত্রেও। ৬২ বছরের সঞ্জয়বাবু বললেন, ‘‘ছোট থেকেই দেখে এসেছি, আমাদের বাড়িতে কুকুর বেড়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে। গোটা তিনেক কুকুর ছিল প্রথমে। আস্তে আস্তে সংখ্যাটা বাড়ে। এখন ১১টা কুকুর আর ২২ টি বিড়াল। ওদের সন্তানস্নেহেই পালন করছি।’’ আর বাপিবাবুর কথায়, ‘‘আমরা অবোলা প্রাণীগুলোর কষ্ট যদি একটু বুঝতাম, তাহলে ওদের এত কষ্ট পেতে হত না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy