প্রতীকী ছবি।
একা হাতেই গোটা সংসার সামলাতেন তিনি। দৌলতাবাদ থানার নওদাপাড়া গ্রামের ফুদনের তবুও সংসার-স্বামী টেকেনি। খেতমজুর জমিরুদ্দিনের বড় মেয়ে ফুদনকে বিয়ে করেছিলেন ছয়ঘরি গ্রামের বসিরুদ্দিন মোড়ল। কিন্তু সে বিয়ে টিকল না। শাশুড়িকে না বলে কোলের ছেলের মাথায় সরষের তেল মাখিয়েছিলেন ফুদন। আর সেই ‘অপরাধে’ শাশুড়ি-বৌমার ঝগড়া। তার জেরেই ‘তালাক! তালাক! তিন তালাক’-এর রোষ চাপে স্বামীর মাথায়।
শিশু কোলে চিরদিনের জন্য তাঁকে স্বামীর বাড়ি ছাড়তে হয়। তালাক দিলেও স্বামী বসিরুদ্দিন মোড়ল কিন্তু দেনমোহরের টাকা ফেরত দেননি। ফুদনেরা চার বোন। ফুদন সম্প্রতি মারা গিয়েছেন। বাকি তিন বোন— সায়রা, ফেলু ও সারভানু বেঁচে আছেন। এক লহমায় তাঁদেরও শুনতে হয়েছে ‘তালাক! তালাক! তিন তালাক’। হতদরিদ্র ফুদনদের বাড়িটি তাই ‘তালাকের বাড়ি’ বলে অনেকে দেগে দিয়েছেন। সেই সব তালাকগুলোর কারণও বড় কিম্ভূত।
সায়রার বিয়ে হয়েছিল ছয়ঘরিতে। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকে অতিরিক্ত পণের জন্য ক্রমাগত চাপ বাড়তে থাকে। সায়রার বিধবা মা চাহাতনের সংসার চলে লাট কেটে (মটকার সুতো)। ফলে পণের টাকা মেটাতে পারেননি তিনি। বিছানায় ছারপোকা কেন? এই অজুহাত তুলে এক দিন তাঁর স্বামী বলেন, ‘‘তালাক! তালাক! তিন তালাক’’। এমন তাৎক্ষণিক তালাক হাদিসসম্মত নয় বলে প্রচার করা হলেও গ্রামসমাজের নিদানে সায়রার মতো বহু মহিলাকেই চিরতরে স্বামীর ঘর ছাড়তে হয়।
সায়রা বিদায় হলেও তাঁর স্বামীর ঠোঁটে কিন্তু ঝুলে থাকে ‘‘তালাক! তালাক! তিন তালাক’- এর বাণ। সেই বাণ দিয়ে আরও তিন মহিলার জীবন বিদ্ধ করেন তিনি। সায়রার পর তকতিপুরে, তারপর সরসাবাদে, তারপর উলাসপুর-ডাঙাপাড়ায় বিয়ে করেন তিনি। তার পরে মর্জি মতো তাৎক্ষণিক তিন তালাক দিয়ে স্ত্রীদের চিরদিনের জন্য বিদায় করেন। সায়রার বোন ফেলুর বিয়ে হয়েছিল নওদাপাড়ায়। ফেলুকে তালাক দেওয়ার পরে তিনি আরও তিন বার তিন মহিলাকে বিয়ে করেন।
ওই তিন স্ত্রীকেও তিনি ফেলুর মতোই তাৎক্ষণিক তিন তালাক দিয়ে বিদায় করেছেন। মুর্শিদাবাদ জেলায় ফুদন, ফেলু সায়রা, সারভানুদের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাবে। কয়েক বছর আগে ফেলুর দিদি ফুদন তাঁদের চার বোনের তালাক ভাগ্য নিয়ে নিষ্ফল আর্জি জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘বিয়ের সময় কনের সম্মতি নিতে হয়। আর তালাক দেওয়ার সময় কনের কথার কানাকড়িও দাম নেই কেন? তালাকের এই বিধান বাতিল করলে মেয়েরা একটু শান্তি পায়!’’
ফুদন পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও তাঁর আর্জি আজ সফল। তাৎক্ষণিক তিন তালাক বাতিল করতে গত মঙ্গলবার বিল পাশ হয়েছে। সেই বিলে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলেই আইনে পরিণত হবে। সে শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
তার পরে তাৎক্ষণিক তিন তালাক ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। তখন তাৎক্ষণিক তিন তালাক দিলে স্বামীর তিন বছর পর্যন্ত জেল হবে। তালাক পাওয়া মহিলাদের নিয়ে তিন তালাকের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ‘রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতি’র নেত্রী খাদিজা বানু। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘স্বামীকে জেলে পাঠালে তালাক পাওয়া মহিলা ও তাঁর সন্তানদের খোরপোষ কে দেবে? নয়া আইনে তার কোনও সংস্থান নেই কেন? ফলে এই আইন মুসলিম মহিলাদের ক্ষমতায়নের পথ সুগম করবে না। ওই আইন হবে মহিলাদের ক্ষমতায়নের পথের অন্তরায়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy