আবু তাহের খান, জেলা তৃণমূল সভাপতি।
দিন বদলায় কখনও কখনও রাজাও বদলে যায়। দলের উপরতলায় তেমনই কখনও বা বদলে যায় নেতা। তাতে কেউ বা হতাশ কারও বা উল্লাস, বদলে যাওয়া পরিস্থিতির সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে কেউ বা তড়িঘড়ি শিবির বদলের মরিয়া চেষ্টা করেন।
মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষকের পদ থেকে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর ছায়া সরে যাওয়ার পরে সেই ছবিটাই ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। দলীয় কার্যালয়গুলি থেকে শুভেন্দুর ছবি সরিয়ে নেওয়া, হোর্ডিং-ব্যানারে টানটান দলীয় প্রচারে পরিবহণমন্ত্রীর চেনা মুখের অপসারণ, দলীয় সভা-সমাবেশের স্লোগান থেকে ফিকে হয়ে আসা জেলা পর্যবেক্ষকের নাম কিংবা শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ বলে জেলায় গেরামভারি চলাফেরা করা মেজ-সেজ নেতাদের শিবির বদলের মরিয়া চেষ্টা— ‘নেতা’ বদলের সেই ছবিটা সামনে এনে দিয়েছে।
জেলা পর্যবেক্ষক পদ অপসারণের আগে, মর্শিদাবাদের হাল ছিল শুভেন্দু অধিকারী হাতে। সেই সময় তাঁর ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন তৃণমূলের জেলা নেতাদের অনেকেই। তাঁদের অনেকেরই সাধারণ কথাবার্তায় অকারণেই উঠে আসত শুভেন্দুর নাম। তৃণমূলে সাংগঠনিক রদবদলের পর পর্যবেক্ষণের পদটি বিলুপ্ত হয়েছে। দলের অন্দরের খবর, জেলায় পরিবহণমন্ত্রীর গুরুত্ব আবছা হয়ে আসারা পাশাপাশি দলে ফের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব মাথা চাড়া দেওয়ায় শিবির বদলের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের এক দাপুটে জেলা নেতা বলছেন, ‘‘এত দিন যাঁরা শুভেন্দুর কাছাকাছি ছিলেন এই অবস্থায় তাঁরা দু’চারবার শুভেন্দু অধিকারীকে যে ফোন করেননি এমন নয়। কিন্তু অন্য প্রান্তে ফোন অবিরাম বেজে গিয়েছে। ফলে মানসিক চাপে পড়ে শিবির বদলের চেষ্টা শুরু হয়েছে।’’ এই অবস্থায়, এত দিন আড়ালে থাকা বেশ কয়েক জন সামনের সারির নেতা সরাসরিই শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠদের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছেন।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন বরাবরই শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। শুভেন্দু-অপসারণের পরে মোশারফ স্পষ্টই বলেছিলেন, “শুভেন্দু অধিকারী যাওয়ার পর জেলায় তাঁর অভাব বোধ করছি।” সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সেই শুভেন্দু শিবিরের মোশারফের দিকেই এ বার আঙুল তুললেন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রাজীব হোসেন। সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগে তোপ দেগে রাজীবের অভিযোগ, “সভাধিপতি স্বাধীন ভাবে জেলাপরিষদ চালাতে গিয়ে আমাদের গুরুত্বহীন করে ফেলেছেন। কিছু বললেই এত দিন তিনি পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর নাম নিয়েছেন। আমরা এর প্রতিবাদ করছি।’’ পরে অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি বলেন, ‘‘শুভেন্দুদার বিরুদ্ধে বদনাম করা হচ্ছে বোঝাতেই ওঁর নাম নিয়েছি।’’ নেতা বদলের পরিপ্রেক্ষিতে এই আকচাআকচির আবহে জেলা সভাপতি আবু তাহের খান বলছেন, “জেলা পর্যবেক্ষক হিসাবে শুভেন্দু অধিকারী ভাল কাজ করেছেন। এখন তিনি দায়িত্বে নেই। তা নিয়ে অনেকে হতাশ। তবে সেটা এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়। দল সংঘবদ্ধ ভাবেই কাজ করছে।”
তবে ‘নেতা’ বদলের দিন কয়েকের মধ্যেই দলীয় কার্যালয় থেকে জেলার নানা প্রান্তে টাঙানো ফেস্টুন কিংবা ব্যানারে শুভেন্দু অধিকারীর বদলে তুলনায় বড় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি জায়গা করে নিয়েছে। দলনেত্রী ছাড়া অন্য অন্য কারও ছবি ব্যানার-কাটআউটে ব্যবহার করা যাবে না, দলের এমন নির্দেশ সত্ত্বেও অভিষেক এবং সুব্রত বক্সীর ছবি নতুন করে ফুটে উঠতে শুরু করেছে মুর্শিদাবাদের পথেঘাটে। বহরমপুর শহরে এমন ছবির নীচে এ যাবত লেখা থাকত— সৌজন্য, টাউন তৃণমূল সভাপতি নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়। দলীয় পদের অদলবদলের চিঠি তৃণমূল ভবনে যাওয়ার পরে, এখন ছবির মুখ বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছে দলীয় পদ লেখার রেওয়াজও। নাড়ুগোপাল বলছেন, “আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল করি। জোড়া ফুল চিহ্ন আমাদের প্রতীক। জেলায় এখন কোন পর্যবেক্ষক নেই। তাই শুভেন্দুদার ছবির বদলে যুবনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আর মূল দলের নেতা সুব্রত বক্সর ছবি টাঙানো হয়েছে সেই বার্তা দিতেই।’’ তবে ছবির নিচে এখন আর পদ নয়। উল্লেখ রয়েছে নিছক সৌজন্য, নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়! শুভেন্দুর ছবি ইতিমধ্যেই সরে যেতে শুরু করেছে দলীয় কার্যালয়, রাস্তার মোড় এমনকি জেলা নেতাদের বাড়ি থেকেও।
মহিলা তৃণমূল সভানেত্রী তথা কৃষি কর্মাধ্যক্ষ শাহনাওয়াজ বেগম অবশ্য কোন শিবির ভাগ দেখছেন না এর মধ্যে, তিনি বলছেন, “দল বদল করে যে দিন তৃণমূলে এসেছিলাম সে দিন শুভেন্দুদা পর্যবেক্ষক ছিলেন তাই তাঁর হাত থেকে দলীয় পতাকা নিয়েছিলাম। সে দিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থাকলে তাঁর হাত থেকেই নিতাম!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy