Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বয়ঃসন্ধির মুশকিল আসান করছে অন্বেষা

শুকনো মুখে বড়ঞা-র এক নবম শ্রেণির ছাত্রী বেশ কিছু ক্ষণ ইতস্তত করার পর মহিলা কাউন্সেলারকে নীচু গলায় বলেছিল, ‘‘এ বারে শরীর খারাপের সময় বেখেয়ালে ঋতুকালীন কাপড়টা আমার চুলে লেগেছিল। মা বলেছে, এ বার আমার সব চুল উঠে যাবে। আর গজাবে না। চিন্তায় আমি ঘুমোতে পারছি না। কী করবো দিদিমনি?’’

ক্লিনিকে ব্যস্ত দিদিমনি। নিজস্ব চিত্র

ক্লিনিকে ব্যস্ত দিদিমনি। নিজস্ব চিত্র

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮ ০১:৪৬
Share: Save:

শুকনো মুখে বড়ঞা-র এক নবম শ্রেণির ছাত্রী বেশ কিছু ক্ষণ ইতস্তত করার পর মহিলা কাউন্সেলারকে নীচু গলায় বলেছিল, ‘‘এ বারে শরীর খারাপের সময় বেখেয়ালে ঋতুকালীন কাপড়টা আমার চুলে লেগেছিল। মা বলেছে, এ বার আমার সব চুল উঠে যাবে। আর গজাবে না। চিন্তায় আমি ঘুমোতে পারছি না। কী করবো দিদিমনি?’’

হরিহরপাড়ার এক কিশোর ক্লিনিকে এসে স্বীকার করেছিল, পাড়ার দুই কিশোরীকে সে নিজের স্মার্ট ফোন থেকে অশ্লীল ভিডিও পাঠিয়েছে। বছর ষোলোর এক কিশোরীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ক্লিনিকের কাউন্সেলাররা জানতে পারেন, তার নিজের বাবা-মা টাকার লোভে তাকে বিক্রি করে দিয়েছিল। দিল্লির এক যৌনপল্লি থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

হরিহরপাড়ার একটি মেয়ের ১০ বছর বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন বাবা-মা। তখন সে ঋতুমতীও হয়নি। স্বামী কিছু দিন পরেই তাকে ত্যাগ করে। অন্বেষা ক্লিনিকে দীর্ঘদিন তার কাউন্সেলিং চলে। তার পর আবার পড়াশোনা শুরু করেছে সে।

বয়ঃসন্ধিতে পা রাখা ছেলেমেয়েদের শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং তাদের মনে এই সময়ে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন জিজ্ঞাসার উত্তর দেওয়ার জন্য অন্বেষা ক্লিনিক চালু করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু মুর্শিদাবাদে ছড়িয়ে থাকা এই ক্লিনিকের একাধিক কাউন্সেলার জানাচ্ছেন, গ্রামীণ সমাজকে কত রকম কুসংস্কার, কুঅভ্যাস এখনও আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে তার প্রমাণ প্রায় প্রতিদিন উঠে আসছে কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে কথা বলে। তাই ছাত্রছাত্রীদের দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সমাজ সংষ্কারমূলক প্রচার চালাতে হচ্ছে তাঁদের। সেখানে সামিল করতে হচ্ছে অভিভাবকদেরও।

হরিহরপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্বেষা ক্লিনিকের কাউন্সেলার সুবাইয়া পারভিন বলছিলেন, ‘‘একটি মেয়ে এসে জানাল, তার ঠাকুমা বলেছেন, ঋতুকালীন সময়ে ব্যবহৃত কাপড়ের উপর দিয়ে যদি কোনওভাবে কোনও বেড়াল লাফ দিয়ে যায় তা হলে সে কোনও দিন সন্তান ধারণ করতে পারবে না। এটা যে সম্পূর্ণ ভুল তা মেয়েটির বাড়ির মহিলাদের ডেকে বোঝাতে হয়েছিল।’’ অষ্টম শ্রেণির একটি মেয়ে বলেছিল, তার মা-মাসীরা বিশ্বাস করেন, ন্যাপকিন ব্যবহার করলে মাথার চুল বেশি উঠবে। সেই মহিলাদেরও কাউন্সেলিং হয়েছিল।’’

বড়ঞার একটি অন্বেষা ক্লিনিকের কাউন্সেলার সম্বিত সিংহের অভিজ্ঞতায়, ‘‘স্মার্ট ফোনে কিশোর-কিশোরীরা নানা ভাবে বিপদে পড়ছে। বাড়ি থেকে পালানো, পাচার হয়ে যাওয়া, স্কুল ছুট হওয়ার পিছনে অনেকাংশে দায়ী স্মার্টফোন। অশ্লীল ভিডিও দেখতে অভ্যস্ত হচ্ছে অনেকে। আমরা ক্লিনিকে ডেকে সকলকেই বোঝাচ্ছি, স্মার্ট ফোন নয়, পড়ুয়াদের হাতে দেওয়া হোক সাধারণ ফোন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Clinic Anwesha Clinic Patients Human Trafficking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE