Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ওত পেতে নীল তিমি, সতর্ক স্কুল

মেয়েটা অনড়। বহু চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে শেষ ধাপে চলে এসেছে সে। এ বার শেষ চ্যালেঞ্জ, ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারলেই সে জিতে যাবে গেম। চ্যাম্পিয়ন!

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৪৯
Share: Save:

বছর ষোলোর কিশোরী দাঁড়িয়ে বহুতলের ছাদের পাঁচিলে, রাস্তার দিকে পিছন ফিরে।

বহু নীচে রাস্তায় বড় চাদর টানটান করে ধরে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু লোক। তার মধ্যে পুলিশও আছে। মেয়েটার সামনেও বেশ কিছু সাদা পোশাকের পুলিশ। তারা নানা কথায় মেয়েটাকে বোঝাতে চেষ্টা করছে।

কিন্তু মেয়েটা অনড়। বহু চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে শেষ ধাপে চলে এসেছে সে। এ বার শেষ চ্যালেঞ্জ, ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারলেই সে জিতে যাবে গেম। চ্যাম্পিয়ন!

গেমের নাম ‘ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ’। অন্য নানা গেমের মতো স্মার্টফোনে ডাউনলোড করা যায় না এই খেলা। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু গোপন গ্রুপ থেকে খেলাটা চালানো হয়। গ্রুপের নিয়ন্ত্রক, যাকে বলে ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটর’ বা ‘কিউরেটর’, সেই কিছু প্রশ্ন করে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের মধ্যে থেকে বেছে নেয় খেলুড়েদের। তার পর নির্দেশ দিতে থাকে। একের পর এক ৫০টা দুঃসাহসের কাজ করে তার ভিডিও কিউরেটরকে পাঠাতে পারলেই খেলা শেষ। প্রথমে অন্ধকার ঘরে ভূতের সিনেমা দেখার মতো নিরীহ কাজ দিয়ে শুরু। মাঝের একটা কাজ ছুরি বা ব্লেড দিয়ে নিজের হাত চিরে ‘হোয়েল’ অর্থাৎ তিমি আঁকা। শেষ কাজ আত্মহত্যা।

শেষ ধাপে এসে গিয়েছে মেয়েটা। এ বার লাফ সে দেবেই। পাঁচিলের দু’ধার থেকে পুলিশ চেষ্টা করছে যে ভাবেই হোক তার কাছে পৌঁছতে, কিন্তু ভয়ে এগোতে পারছে না। লাফ মারার আগে শেষ এক বার নীচের দিকে চায় মেয়েটা। আর মুহূর্তের সেই অন্যমনস্কতার সুযোগে পাশ থেকে চিতার মতো লাফ দিয়ে পুলিশের এক জন তাকে ধরে ফেলে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সম্প্রতি। কিন্তু সবাই এত ভাগ্যবান হয় না। রাশিয়া থেকে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ভারত, জার্মানির মতো বহু দেশে ছড়িয়ে পড়া গেমে ১৩০ জনের প্রাণ গিয়েছে বলে অনুমান, কোনও প্রমাণ যদিও মেলেনি। গত বছরই রাশিয়া থেকে গ্রেফতার হয়েছে গেমের স্রষ্টা, বছর বাইশের ফিলিপ বুদেকিন। জুনে মস্কো থেকে ধরা পড়ে ইলিয়া সিদোরোভ নামে ২৬ বছরের যুবক। দিন দুই আগে ফের রাশিয়া থেকেই গ্রেফতার হয়েছে ১৭ বছরের কিশোরী, যে ‘ব্লু হোয়েল’ খেলতে-খেলতে মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে নিজেই কিউরেটর হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

তার পরেও খেলা চলছে।

ছাত্রছাত্রীদের এই মারণ-খেলা থেকে বাঁচাতে সতর্ক করতে শুরু করেছে স্কুল। বৃহস্পতিবার ধুবুলিয়ার কামারহাটি চিত্তরঞ্জন হাইস্কুলের একাদশ-দ্বাদশের পড়ুয়াদের নিয়ে শিবির হয়েছে। বহরমপুরের হিকমপুর হাইস্কুলে এক সপ্তাহ আগে পড়ুয়াদের ডেকে বলা হয়েছে, তারা যেন কোনও অপরিচিত গ্রুপে না ঢোকে, ঢুকলেও যেন তাদের ভাবগতিক আগে বুঝে নেয়। কৃষ্ণনগরের দোগাছি হাইস্কুলেও বোঝানো হয়েছে ছাত্রদের। বহরমপুরে জেএন অ্যাকাডেমি বা লালবাগের নবাব বাহাদূর ইনস্টিটিউশন শিগগির শিবির করবে ভাবছে। শিক্ষকেরা বলছেন, বাড়িতেও বোঝাতে হবে। না হলে কিন্তু ঝুঁকিটা থেকেই যাবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Blue Whale Suicide Game School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE