আয়ামাসির স্নেহযত্ন আর স্কুলের বায়োলজি ল্যাব— এটাই এখন জুলেখার জগৎ। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
সরস্বতী পুজোর রোদ গায়ে মেখে ছেলেমেয়েরা যখন স্কুলের মাঠটায় হুটোপুটি করছিল, মেয়েটা চুপ করে বসে ছিল দোতলার ঘরে।
ঘর নয় ঠিক, জীবনবিজ্ঞানের পরীক্ষাগার। তারই এক পাশে চৌকি, তোশক, বালিশ। আর বইখাতা।
আট মাস হয়ে গেল, ভিন্ রাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করা পাত্রকে ফিরিয়ে দিয়ে বাড়িসুদ্ধ লোকের চোখের বালি হয়েছে মেয়েটা। কিন্তু সে করেই বা কী? সামনে মাধ্যমিক। এটা কি তার বিয়ে করার সময়?
দিনমজুর বাবা রফিকুল শেখ আর মা সুলেখা বিবি মেয়ের এই জেদ দেখে স্তম্ভিত। গরিবের ঘরে কি এ সব মানায়? কত কষ্টে তাঁরা পাত্র জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু মেয়ে গিয়ে হাজির স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মণ্ডলের কাছে! নবগ্রামের যুগ্ম বিডিও বিপ্লব বসাককে খবর দেন তিনি। রফিকুল-সুলেখাকে ডেকে সমঝে দেওয়া হয়, নাবালিকা ছাত্রীর পড়া বন্ধ করিয়ে বিয়ে দেওয়া বরদাস্ত করা হবে না! মুর্শিদাবাদ থানার হাসনাবাদ টিকটিকি পাড়ায় তাঁদের বাড়িতেও যান পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন।
চাপে পড়ে তখনকার মতো পিছু হটেন জুলেখার বাবা-মা। কিন্তু অন্য বিপত্তি হয়। নবগ্রামের মহরুল গ্রাম পঞ্চায়েতের লইখোর গ্রামে মামার বাড়িতে থেকে স্কুলে পড়ত জুলেখা। গোটা পরিবার খেপে থাকায় সেই ঠাঁই বন্ধ হয়ে যায়। বাড়ি ফিরে গেলে কিছু দিন বাদেই তার বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে বলে ভয় পাচ্ছিল জুলেখা। স্কুল আর প্রশাসন ফের এগিয়ে আসে।
স্কুলে ছাত্রদের হস্টেল থাকলেও ছাত্রীদের থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই। অগত্যা জীবন বিজ্ঞানের পরীক্ষাগারে জুলেখার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। চৌকি, তোষক, বালিশ, মশারি কেনা হয়। দিন-রাতে তার দেখভালের জন্য তিন হাজার টাকা দিয়ে দুই মহিলাকে রাখা হয়েছে। ছাত্রদের হস্টেলে যে রান্না হয়, তা-ই খায় জুলেখা। তেল-সাবান, টুকিটাকি, দু’বেলা টিফিনের খরচ জোগান শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘শান্ত-নরম স্বভাবের হলেও জুলেখার মধ্যে তীব্র জেদ রয়েছে। মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় ভাল ফল করেছে। ও যাতে নির্বিঘ্নে যাতে পড়া চালিয়ে যেতে পারে, তার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা সকলেই সহায়তা করছেন।’’
রফিকুল-সুলেখা কিন্তু এক দিনের জন্যও মেয়ের খোঁজ নেননি। সুলেখা বলেন, ‘‘ওর জন্য পাত্রপক্ষের কাছে আমাদের মুখ পুড়েছে।’’ রফিকুলের দাবি, ‘‘চাইলে ও বিয়ে করেও পড়া চালিয়ে যেতে পারত।’’ জুলেখারা দুই বোন। ক্লাস নাইনে পড়তে দিদির বিয়ে হয়েছিল। সে কিন্তু আর পড়া চালাতে পারেনি। কিন্তু রফিকুল অনড়, ‘‘যে বাবা-মায়ের সম্মানের কথা ভাবে না, সেই মেয়ের সঙ্গে আমরা আর কোনও সম্পর্ক রাখতে চাই না।’’
আলাদা-আলাদা আর্থিক পুরস্কার দিয়ে ইতিমধ্যেই জুলেখার সাহসকে কুর্নিশ জানিয়েছে জেলা ও রাজ্য প্রশাসন। মাধ্যমিকের পরে সে পড়া চালিয়ে যেতে চাইলে বহরমপুরে সরকারি হোমে রেখে তার সমস্ত দায়িত্ব নেওয়া হবে বলেও কর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন।
জুলেখার পাখির চোখ মাধ্যমিক। মেয়ের কথায়, ‘‘এখানেই ভাল আছি। বাড়িতে থাকলে বিয়ের কথা বলে মনোযোগ নষ্ট করে দিত। আমার কারও জন্য মনখারাপ করে না!’’
শেষ কথাটা বলতে গিয়ে গলাটা কি একটু কেঁপে গেল? কে জানে?
জীবনবিজ্ঞান নয়, মরিয়া জুলেখা ঢুকে পড়েছে জীবনেরই পরীক্ষাগারে।
সরস্বতী পুজোর রোদ গায়ে মেখে ছেলেমেয়েরা যখন স্কুলের মাঠটায় হুটোপুটি করছিল, মেয়েটা চুপ করে বসে ছিল দোতলার ঘরে।
ঘর নয় ঠিক, জীবনবিজ্ঞানের পরীক্ষাগার। তারই এক পাশে চৌকি, তোশক, বালিশ। আর বইখাতা।
আট মাস হয়ে গেল, ভিন্ রাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করা পাত্রকে ফিরিয়ে দিয়ে বাড়িসুদ্ধ লোকের চোখের বালি হয়েছে মেয়েটা। কিন্তু সে করেই বা কী? সামনে মাধ্যমিক। এটা কি তার বিয়ে করার সময়?
দিনমজুর বাবা রফিকুল শেখ আর মা সুলেখা বিবি মেয়ের এই জেদ দেখে স্তম্ভিত। গরিবের ঘরে কি এ সব মানায়? কত কষ্টে তাঁরা পাত্র জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু মেয়ে গিয়ে হাজির স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মণ্ডলের কাছে! নবগ্রামের যুগ্ম বিডিও বিপ্লব বসাককে খবর দেন তিনি। রফিকুল-সুলেখাকে ডেকে সমঝে দেওয়া হয়, নাবালিকা ছাত্রীর পড়া বন্ধ করিয়ে বিয়ে দেওয়া বরদাস্ত করা হবে না! মুর্শিদাবাদ থানার হাসনাবাদ টিকটিকি পাড়ায় তাঁদের বাড়িতেও যান পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন।
চাপে পড়ে তখনকার মতো পিছু হটেন জুলেখার বাবা-মা। কিন্তু অন্য বিপত্তি হয়। নবগ্রামের মহরুল গ্রাম পঞ্চায়েতের লইখোর গ্রামে মামার বাড়িতে থেকে স্কুলে পড়ত জুলেখা। গোটা পরিবার খেপে থাকায় সেই ঠাঁই বন্ধ হয়ে যায়। বাড়ি ফিরে গেলে কিছু দিন বাদেই তার বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে বলে ভয় পাচ্ছিল জুলেখা। স্কুল আর প্রশাসন ফের এগিয়ে আসে।
স্কুলে ছাত্রদের হস্টেল থাকলেও ছাত্রীদের থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই। অগত্যা জীবন বিজ্ঞানের পরীক্ষাগারে জুলেখার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। চৌকি, তোষক, বালিশ, মশারি কেনা হয়। দিন-রাতে তার দেখভালের জন্য তিন হাজার টাকা দিয়ে দুই মহিলাকে রাখা হয়েছে। ছাত্রদের হস্টেলে যে রান্না হয়, তা-ই খায় জুলেখা। তেল-সাবান, টুকিটাকি, দু’বেলা টিফিনের খরচ জোগান শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘শান্ত-নরম স্বভাবের হলেও জুলেখার মধ্যে তীব্র জেদ রয়েছে। মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় ভাল ফল করেছে। ও যাতে নির্বিঘ্নে যাতে পড়া চালিয়ে যেতে পারে, তার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা সকলেই সহায়তা করছেন।’’
রফিকুল-সুলেখা কিন্তু এক দিনের জন্যও মেয়ের খোঁজ নেননি। সুলেখা বলেন, ‘‘ওর জন্য পাত্রপক্ষের কাছে আমাদের মুখ পুড়েছে।’’ রফিকুলের দাবি, ‘‘চাইলে ও বিয়ে করেও পড়া চালিয়ে যেতে পারত।’’ জুলেখারা দুই বোন। ক্লাস নাইনে পড়তে দিদির বিয়ে হয়েছিল। সে কিন্তু আর পড়া চালাতে পারেনি। কিন্তু রফিকুল অনড়, ‘‘যে বাবা-মায়ের সম্মানের কথা ভাবে না, সেই মেয়ের সঙ্গে আমরা আর কোনও সম্পর্ক রাখতে চাই না।’’
আলাদা-আলাদা আর্থিক পুরস্কার দিয়ে ইতিমধ্যেই জুলেখার সাহসকে কুর্নিশ জানিয়েছে জেলা ও রাজ্য প্রশাসন। মাধ্যমিকের পরে সে পড়া চালিয়ে যেতে চাইলে বহরমপুরে সরকারি হোমে রেখে তার সমস্ত দায়িত্ব নেওয়া হবে বলেও কর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন।
জুলেখার পাখির চোখ মাধ্যমিক। মেয়ের কথায়, ‘‘এখানেই ভাল আছি। বাড়িতে থাকলে বিয়ের কথা বলে মনোযোগ নষ্ট করে দিত। আমার কারও জন্য মনখারাপ করে না!’’
শেষ কথাটা বলতে গিয়ে গলাটা কি একটু কেঁপে গেল? কে জানে?
জীবনবিজ্ঞান নয়, মরিয়া জুলেখা ঢুকে পড়েছে জীবনেরই পরীক্ষাগারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy