Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

স্কুলের পড়ুয়ারা বাসে ব্রাত্য, প্রশাসন দর্শক

শুধু বড় আন্দুলিয়া হাইস্কুল নয়, জেলার প্রায় সর্বত্রই একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় পড়ুয়াদের। তাদের দোষ, স্কুলপড়ুয়া হিসেবে তারা ছাড় পায়। তাদের ভাড়া অন্যদের ভাড়ার তিন ভাগের এক ভাগ। তাদের বাসে নিলে লোকসান। সেই কারণে বেশির ভাগ সময়েই কন্ডাক্টরেরা তাদের বাসে নিতে চান না বলে অভিযোগ। 

বাস ধরে বাড়ি ফেরা। নিজস্ব চিত্র

বাস ধরে বাড়ি ফেরা। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৯ ০২:৪২
Share: Save:

স্কুল ছুটি হয়েছে। বড় আন্দুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে পড়ুয়ারা। সঙ্গে কয়েক জন শিক্ষক।

কৃষ্ণনগরের বাস এসে দাঁড়াতেই ছুটে যায় সকলে। কন্ডাক্টার পড়ুয়াদের উঠতে দেয় না। শিক্ষকেরা বাসে উঠে যান। পড়ুয়ারা অপেক্ষায় থাকে পরের বাসের জন্য, যদি তাদের উঠতে দেয়!

শুধু বড় আন্দুলিয়া হাইস্কুল নয়, জেলার প্রায় সর্বত্রই একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় পড়ুয়াদের। তাদের দোষ, স্কুলপড়ুয়া হিসেবে তারা ছাড় পায়। তাদের ভাড়া অন্যদের ভাড়ার তিন ভাগের এক ভাগ। তাদের বাসে নিলে লোকসান। সেই কারণে বেশির ভাগ সময়েই কন্ডাক্টরেরা তাদের বাসে নিতে চান না বলে অভিযোগ।

বছর দুয়েক আগে নাকাশিপাড়ার মুড়গাছায় স্কুল ছুটির পরে পড়ুয়াদের না-নিয়ে বাস চলে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা কৃষ্ণনগর-ধর্মদা রুটের বাস চলাচল তিন দিন বন্ধ করে রেখেছিল। শেষে প্রশাসনের কর্তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। যদিও তার পরেও মাঝে-মাঝেই ওই রুটেও একই অভিযোগ উঠেছে। অর্থাৎ পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি।

বড় আন্দুলিয়া হাইস্কুলের শিক্ষক অরূপ সরকার বলেন, “মাঝে-মাঝে আমাদেরই খুব অস্বস্তি হয়। কারণ আমরা বাসে উঠে চলে আসি আর ছেলেমেয়েগুলো দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু প্রতি দিন এক সঙ্গে এত পড়ুয়ার বাস ভাড়া দেওয়ায় সম্ভব হয় না।” তাঁদের আক্ষেপ, এ নিয়ে কথা বলতে গেলে বাসকর্মীরা অসহিষ্ণু হয়ে ওঠেন। তাঁরা ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কথা বলেন, কথা বলেন ‘বাসকার্ড’ নিয়ে।

হাঁটরা থেকে বড় আন্দুলিয়া হাইস্কুলে পড়তে আসে নবম শ্রেণির ছাত্র সালাম মণ্ডল। সে বলে, “বেশির ভাগ সময়েই পকেট রুটের বাস ছাড়া অন্য বাস আমাদের নিতে চায় না। বলে, ‘পুরো ভাড়া দিতে হবে’। আমরা কী করে পুরো ভাড়া দেব? স্কুল ছুটির পরে তাই পকেট রুটের বাসের জন্য বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।” একই অভিযোগ বাহাদুরপুর থেকে কৃষ্ণনগরে পড়তে আসা দশম শ্রেণির ছাত্র মিহির ঘোষেরও। তার আক্ষেপ, “আমাদের দেখলেই বাসগুলো যেন দাঁড়াতেই চায় না। জোর করে উঠলে কন্ডাক্টররা অপমানজনক কথা বলে।”

এমনটা যে হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে, সকলেই জানেন। কিন্তু কেউ কিছু জেনেও জানেন না। যখনই কোথাও বিষয়টি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়, তখনই কিছুটা নড়েচড়ে বসেন প্রশাসন থেকে বাস মালিকেরা। তাতে পরিস্থিতি কয়েক দিন স্বাভাবিক থাকে। তার পরে আবার যে-কে-সেই।

বাস মালিকদের একটা অংশের দাবি, পড়ুয়াদের ‘বাসকার্ড’ দেওয়া হয় কৃষ্ণনগরের বাস মালিক সংগঠনের দফতর থেকে। সেই কার্ড দেখালে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু দূরদূরান্ত থেকে পড়ুয়াদের ছ’মাস অন্তর কৃষ্ণনগরে এসে কার্ড পুনর্নবীকরণ করানো সম্ভব হয় না। পড়ুয়াদের দাবি, স্কুলের মাধ্যমে ‘বাসকার্ড’ করতে দেওয়া হোক।

প্রশ্ন হল, ‘বাসকার্ড’ না থাকলে কি পড়ুয়াদের বাসে নেওয়া যাবে না? বা এক-তৃতীয়াংশ ভাড়া নেওয়া হবে না? নদিয়া জেলা বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমিতকুমার সিংহ রায় বলেন, “এটা কখনই হওয়া উচিত নয়। বাসকার্ড থাক বা না থাক পড়ুয়াদের নিতেই হবে।” তাঁর দাবি, “আমরা যখনই এই ধরনের অভিযোগ পাই, সেই বাসের মালিক ও কর্মীদের ডেকে ব্যবস্থা নিই।”

মালিক সমিতি থেকে তো বলেই খালাস। কিন্তু বাস্তবের মুখোমুখি হতে হয় বাসকর্মীদের। কী বলছেন তাঁরা? ধর্মদা রুটের বাসের কন্ডাক্টর হাজিব শেখের বক্তব্য, “পড়ুয়ারা স্কুলের সময়ে এক সঙ্গে অনেকে ওঠে। বাস ভরে যায়। সাধারণ যাত্রী নেওয়া যায় না। তাতে লোকসান হয়। তবে আমরা পড়ুয়াদের নিতে আপত্তি করি না।” প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও কন্ডাক্টরেরা বলছেন, দিনের শেষে মালিকের হাতে লাভের টাকা গুনে দিতে হয়। কম ভাড়ায় পড়ুয়াদের নিলে সেটা তাঁরা দেবেন কী করে! এক কন্ডাক্টরের কথায়, “এমনিতে লছিমন, টোটো, অটোর কারণে বাসে যাত্রী হয় না। খরচ তোলাই কঠিন হয়ে পড়ছে। তার উপরে অত কম ভাড়ায় পড়ুয়াদের নিলে বাস চালাব কী করে?”

দীর্ঘদিন ধরে চলা এই সমস্যার সমাধান কী? কর্তারা কী বলছেন?

যাঁর বলার কথা, নদিয়ার সেই আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক আশিসকুমার কুণ্ডু এ নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি।

অন্য বিষয়গুলি:

students publictransport
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy