প্রতীকী ছবি।
দিদির বাড়িতে নিয়ে না গিয়ে ঘরের কাজ করতে বলে গিয়েছিলেন মা। দুপুরে মাঠ থেকে ফিরে বাবা দেখেন, ওড়নার ফাঁসে মেয়ে ঝুলছে। তাকে নামিয়ে চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে ও পরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার রাতে সেখানেই কিশোরীর মৃত্যু হয়।
চাপড়ার বাঙালঝি গ্রামের ওই মেয়েটির নাম নুরনেসা খাতুন (১৫)। ইসলামগঞ্জের হাইমাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে পড়ত সে। বাবা নওসর আলি শেখ খেতমজুর। দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ঘটনায় স্তম্ভিত মা সালেহার বিবি। তিনি বলছেন, “তেমন কিছুই বলিনি। কেন যে এমনটা করে বসল!”
মোবাইলে ফোনে গেম খেলা নিয়ে বাবা-মার বকুনির জেরে মঙ্গলবারই নবদ্বীপে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয় পানশিলা স্কুলমাঠপাড়ার অপূর্ব দাশ ওরফে পিকু। নবম শ্রেণির নতুন বই ফেরত দিতে বুধবার ভাগীরথী বিদ্যাপীঠে ঢুকে কেঁদে ফেলেন তার বাবা বলরাম দাশ। এক সপ্তাহ আগে তাঁর সঙ্গে এসেই পিকু বই নিয়ে যায়।
এ দিন স্মরণসভায় প্রধান শিক্ষক নিখিলকুমার নাথ পড়ুয়াদের বলেন, “শুধু নিজের চাহিদার কথা ভাবলেই চলবে না। বুঝতে হবে, বাবা-মায়ের তা পূরণ করার ক্ষমতা আছে কি না।” অঙ্ক দিদিমণি রূম্পা ভট্টাচার্য বলেন, “বেশির ভাগেরই দেখছি, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। সবাই ভাবছে ভুল আমি নয়, করেছে অন্যেরা। সামান্য বকুনিতে যদি সন্তান এই কাণ্ড করে, আমরা কোন ভরসায় ছাত্রদের ভুল শোধরাতে যাব?”
কিশোর-কিশোরীদের মনের নানা অন্ধিসন্ধি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে মঙ্গলবার লালবাগের কুতুবপুর নব-আদর্শ হাইস্কুলের কর্মশালাতেও। অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের নিয়ে ওই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের কাউন্সেলর বর্ষা ভারতী সেখানে জানান, সরকারি ক্লিনিকে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসছে। প্রেমে পড়া, নেশাসক্তি থেকে মোবাইলের টান, সবই আছে তার মধ্যে।
এর আগে কলকাতায় মৌলালি যুবকেন্দ্র, পরে বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে এ ধরনের সভা হয়। মনোবিদ সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বাবা-মায়ের উচিত, ৬ থেকে সাড়ে ১১ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়েকে শাসনে রাখা, সমাজ ও পরিবারের রীতিনীতি শেখানো। বয়স ১২-১৩ বছর হলে বন্ধুর মতো মিশতে হবে। তা না করায় ফল হয় মারাত্মক।’’ নদিয়া জেলা শিশুকল্যাণ আধিকারিক রিনা মুখোপাধ্যায়ও মনে করেন, “বয়ঃসন্ধিকালীন আবেগ ও চাহিদার পাশাপাশি অভিভাবকদেরও শাসন ও প্রশ্রয়ে সামঞ্জস্য থাকছে না। ফলে সন্তানের চারিত্রিক দৃঢ়তা তৈরি হচ্ছে না। তারই পরিণতি সামান্য আঘাতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy