কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। — ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী জেলা ছাড়তে না ছাড়তে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে জেলা তৃণমূলের ভিতরে।
কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র তাঁর সাংসদের প্যাড ব্যবহার করে ‘কো-অর্ডিনেশন কমিটি’-র প্রথম বৈঠক ডেকেছেন। সেই বৈঠকে দলের বিধায়ক, ব্লক ও শহর সভাপতিরে পাশাপাশি বিধানসভা ভোটে পরাজিত প্রার্থীদেরও ডাকা হয়েছে। একে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। অভিযোগ উঠছে মহুয়া কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করেই বৈঠক ডেকেছেন। তিনি একার সিদ্ধান্তে এ ভাবে বৈঠক ডাকতে পারেন কিনা, সেই প্রশ্নও অনেকে তুলছেন। সেই সঙ্গে সাংসদের প্যাড এই ধরনের দলীয় কাজে আদৌ ব্যবহার করা যায় কিনা, বিরোধীরা তুলেছেন সেই প্রশ্নও।
সম্প্রতি জেলা সফরে এসে জনসভার মঞ্চ থেকে দলের বিধায়কদের নিজেদের মধ্যে বিবাদ করতে নিষেধ করে গিয়েছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে জেলায় দল পরিচালনা করতে একটি কো-অর্ডিনেশন কমিটি তৈরি করে দিয়ে যান তিনি। সেখানে দুই সাংগঠনিক জেলার সভাপতির পাশাপাশি জেলা পরিষদের সভাধিপতি, কৃষ্ণনগরের সাংসদ ও বিধায়কদের থাকার নির্দেশ দেন। জেলার নেতাদের দাবি, এই কমিটির সকলেই সদস্য। আলাদা করে তিনি কাউকে কমিটির প্রধান বা অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে যাননি বা আহ্বায়ক করে যাননি। তাই কমিটির ভিতরে আলোচনা না করে একা কেউ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না বা বৈঠক ডাকতে পারেন না। জেলার এক প্রবীণ বিধায়কের কথায়, “মহুয়া এই বৈঠক ডাকায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কার সঙ্গে আলোচনা করে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। একার সিদ্ধান্তে কো-অর্ডিনেশন কমিটির কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করা যায় না।”
নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা নাকাশিপাড়ার দীর্ঘ দিনের বিধায়ত কল্লোল খাঁ বলছেন, “হোয়াটসঅ্যাপে এই বৈঠকের চিঠি পেয়েছি। এই ধরণের কোন বৈঠক বা অ্যাজেন্ডা নিয়ে আমার সঙ্গে কারও কোনও কথা হয়নি। সাংসদ কী কারণে বৈঠক ডেকেছেন, বলতে পারব না।” একই কথা বলছেন নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে এই বৈঠক ডাকা নিয়ে আগে কোনও আলোচনা হয়নি। কী নিয়ে বৈঠক, জানি না।”
নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান তথা কালীগঞ্জের বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদের কথায়, “আমাকে সাংসদ একবার মুখে বলেছিলেন। তবে এখনও বৈঠকের কোনও চিঠি হাতে পাইনি। কী নিয়ে বৈঠক তা স্পষ্ট করে জানা নেই। হয়ত ভোটার তালিকা সংক্রান্ত বিষয় হতে পারে।” কৃষ্ণনগর দক্ষিণ বিধাসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের মন্তব্য, “এটা কো-অর্ডিনেশন কমিটির বৈঠক নয়, এই বৈঠক সাংসদ ডেকেছেন। তবে দলের ভালর জন্য কেউ বৈঠক ডাকলে ভালই তো।” চাপড়ার বিধায়ক রুকবানুর রহমান আবার বলেন, “আমি হোয়াটসঅ্যাপে একটা চিঠি পেয়েছি। তবে এই বৈঠক নিয়ে কো-অর্ডিনেশন কমিটিতে কোনও আলোচনা হয়নি।”
প্রথমে নিজের সাংসদ প্যাড ব্যবহার করে চিঠি দিয়ে সোমবার জেলা পরিষদের সভাকক্ষে বৈঠক ডাকেন মহুয়া। পরে এসএমএস করে দিন বদলে মঙ্গলবার করেন। এতেই দলের ভিতরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এই বৈঠক ডাকার মধ্যে দিয়েই প্রমাণিত হচ্ছে, নেত্রী বলা সত্বেও দলের ভিতরে ‘কে-অর্ডিনেশন’ বা সমন্বয়ের অভাব। নেত্রী যতই চেষ্টা করুন না কেন, শাসক দলের অন্তরের কোন্দল মেটার নয়।
মহুয়া তাঁর সাংসদ প্যাড ব্যবহার করে দলীয় বৈঠক ডাকা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার বলছেন, “মহুয়া মৈত্র ভুলে গিয়েছেন যে উনি দলের নন, মানুষের সাংসদ। এক জন সাংসদ নিজের প্যাড ব্যবহার করে দলীয় বৈঠকের চিঠি করতে পারেন না।” এ ব্যাপারে একাধিক বার ফোন করে, এসএমএস ও হোয়্যাটস-অ্যাপে বার্তা পাঠিয়েও মহুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি কোনও উত্তর দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy