চলছে মাটি কাটা। মহৎপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
টাকাতেই মাটি আসে আর মাটিতেই টাকা। নদী হোক বা খেতি জমি, কুছ পরোয়া নেই। মাটি হলেই হল।
সেই মাটির উপর ভর করেই দুই জেলায় টাকা ঢালে মাফিয়া ও ইটভাটা মালিকদের একাংশ। কবে কোন জমি কিংবা নদীর পাড় থেকে মাটি উঠবে সে তালিকাটাও আগেভাগে তৈরি হয়ে থাকে। তারপর সেই মতো পড়ে কোদালের কোপ কিংবা জেসিবির থাবা।
নদীর পাড়ের মাটি কাটা নিয়ে বহু বার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নদী বিশেষজ্ঞেরা। নদী বাঁচাতে মিছিল, অনুষ্ঠানও বড় কম হয়নি। কিন্তু মাটি মাফিয়াদের থামানো যায়নি। ঘুম ভাঙেনি প্রশাসনেরও। এ দিকে নদীর পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে মাটি কারবারিদের নজরে পড়েছে খেত। সেখানেও আইনের তোয়াক্কা না করে দিব্যি চলছে মাটি লুঠ।
দিন কয়েক আগে নিজের জমিতে গিয়ে চমকে উঠেছিলেন ডোমকল ও পলাশিপাড়ার দুই প্রৌঢ়। তাঁদের দু’জনেরই জমির পাশের জমিকে আর চেনার উপায় নেই। কারণ, সেটা রীতিমতো পুকুর হয়ে গিয়েছে। কারও কোনও অনুমতির পরোয়া না করেই মাটি মাফিয়াদের কাছে জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন পাশের জমির মালিকেরা।
ওই দুই প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘পাশের জমির মালিক জমির মাটি বেচে সহজেই কিছু কাঁচা টাকা হাতে পেয়ে গেলেন। কিন্তু আমাদের জমিগুলো তো শেষ হয়ে গেল। সেচ দিলেই জমির জল, মাটি সবই নেমে যাবে পাশের ওই নীচু জমিতে।’’ ডোমকলের ওই প্রৌঢ় যেমন বলছেন, ‘‘এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে মরতে হবে। আর পুলিশ-প্রশাসন সবই তো ওদের।’’ নদিয়ার পলাশিপাড়ার ওই প্রৌঢ়ের অভিযোগ, ‘‘সাহস করে পুলিশকে জানালেও আর এক বিপদ। কী করে যেন অভিযোগকারীর নাম জেনে যায় মাটির কারবারিরা। এ বার বলুন, কোথায় যাব?’’
চাপড়ার এক মাটি কারবারি কোনও রাখঢাক না রেখেই বলছেন, ‘‘আমরাই বা কী করব বলুন? গাড়ি ভাড়া, জমির মালিক, শ্রমিকদের খরচ কী কম নাকি! তাছাড়া প্রশাসনের বহু বাবু ও পুলিশকেও তো সন্তুষ্ট রাখতে হয়।’’ নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া অবশ্য এমন অভিযোগ মানতে চাননি। তবে তাঁর আশ্বাস, ‘‘নির্দিষ্ট করে কেউ অভিযোগ জানালে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেব।’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy