অবহেলিত গাংনাপুর হাসপাতাল। সোমবার। ছবি: সুদেব দাস
বছরের পর বছর পড়ে নষ্ট হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার যন্ত্রাংশ। রয়েছে শয্যা, ইকো-কার্ডিয়োগ্রাফের যন্ত্র, ফ্রিজ, আলমারি সব কিছুই। নেই শুধু চিকিৎসক। ভোট এসেছে, ভোট গিয়েছে। অথচ প্রতিশ্রুতি মতো গাংনাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি আজও ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নীত হয়নি। প্রায় এক যুগ পর রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের দখল নিয়েছে তৃণমূল। বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী নিজে চিকিৎসক। এ বার কি লাল সুতোর ফাঁস খুলবে— প্রশ্ন তুলছেন গাংনাপুরের মানুষ।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে প্রায় এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। সেই টাকায় হাসপাতালের পরিকাঠামো ঢেলে সাজা হয়। হাসপাতাল চত্বরেই তৈরি হয় চিকিৎসক ও নার্সিং স্টাফদের জন্য আবাসন। সীমানা প্রাচীর। বিদ্যুৎ পরিষবা অবিচ্ছিন্ন রাখতে ব্যবস্থা করা হয় জেনারেটরের। ২০১৩ সাল নাগাদ জেলা পরিষদ সমস্ত কাজ সম্পূর্ণ করে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু তার পর অজানা কারণে হাসপাতালে রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসার কাজ আর শুরু হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রানাঘাট-২ ব্লকের দেবগ্রাম, মাঝেরগ্রাম, আঁইশমালি, বৈদ্যপুর-১ ইত্যাদি এলাকার প্রায় চার লক্ষের বেশি বাসিন্দা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। বছর কয়েক আগে গাংনাপুর, বিরহী ও ফুলিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নীত করার কথা জানিয়ে নির্দেশিকা বেরিয়েছিল। সেই মতো বিরহী ও ফুলিয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র হয়ে গেলেও গাংনাপুরের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। বর্তমানে মাত্র এক জন চিকিৎসক সেখানে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সোম, বুধ ও শুক্রবার বহির্বিভাগে তাঁকে পাওয়া গেলেও অন্যান্য দিন তিনি আবার অন্য হাসপাতালের দায়িত্বে থাকেন। ফলে তখন এক ফার্মাসিস্ট ও এক নার্সিং স্টাফকেই হাসপাতালের দায়িত্ব সামলাতে হয়।
হাসপাতালে অভ্যন্তরীণ ও ২৪ ঘণ্টার পরিষেবা চালু রাখার দাবিতে গড়ে উঠেছিল ‘গাংনাপুর হাসপাতাল উন্নয়ন কমিটি’। তাদের তরফে কলকাতা হাই কোর্টে একটি মামলাও রুজু করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও সমস্যা মেটেনি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশকে হাসপাতালের জন্য প্রায় ছয় বিঘা জমি দান করেছিলেন এলাকার ঘোষাল পরিবারের সদস্যেরা। সেই পরিবারের বর্তমান সদস্য প্রিয়ব্রত ঘোষাল বলেন, "এলাকার মানুষের স্বার্থে হাসপাতাল গড়ার জন্য জমি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যে উদ্দেশ্য নিয়ে হাসপাতাল তৈরি হয়েছে তা এত বছর পরেও বাস্তবায়িত হয়নি। এর চেয়ে বড় আক্ষেপের আর কিছু হতে পারে না।"
হাসপাতাল উন্নয়ন কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, "হাজার হাজার মানুষকে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে যেতে হয়। অথচ নব্বইয়ের দশকেও এই হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে সন্তান প্রসবের পরিষেবা মিলত। সময় যত গড়িয়েছে, ততই বেহাল হয়েছে দশা।" কেন এমন অবস্থা? এই প্রশ্নের উত্তর জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকেরাও দিতে পারেননি। চিকিৎসক-বিধায়ক মুকুটমণি বলেন, "উপনির্বাচনের নির্বাচনী ইস্তাহারেও গাংনাপুর হাসপাতালের বিষয়টি ছিল। দ্রুত যাতে সার্বিক পরিকাঠামো উন্নত করে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি মিটিয়ে পরিষেবা স্বাভাবিক করা যায়, সেই চেষ্টা করছি।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy