Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

৮৫ বছর পর পুজো স্কুলে

পাঠ্যক্রমে রয়েছে চৈতন্যের জীবনী। শনি-রবিবারের বদলে এই স্কুলে ছুটি থাকে পঞ্চমী ও একাদশীতে। তেমনই, এই স্কুলে কোনও দিন সরস্বতী পুজো হয়নি।

আলপনা দিতে ব্যস্ত পড়ুয়ারা।— নিজস্ব চিত্র

আলপনা দিতে ব্যস্ত পড়ুয়ারা।— নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৮
Share: Save:

পাঠ্যক্রমে রয়েছে চৈতন্যের জীবনী। শনি-রবিবারের বদলে এই স্কুলে ছুটি থাকে পঞ্চমী ও একাদশীতে। তেমনই, এই স্কুলে কোনও দিন সরস্বতী পুজো হয়নি।

১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠার পরে উচ্চমাধ্যমিক স্কুল মায়াপুর ঠাকুর ভক্তিবিনোদ ইনস্টিটিউটে এই প্রথম বার, আজ, বুধবার, সরস্বতী পুজো হচ্ছে। সেই সরস্বতীও প্রথা মতো বাগ্দেবী নন। তিনি চৈতন্যজায়া বিষ্ণুপ্রিয়া। তাঁকে বৈষ্ণব মতে শুদ্ধ সরস্বতী বলে ধরা হয়। তবে অনেকেরই ধারণা, তন্ত্রের প্রভাবে বিষ্ণুপ্রিয়ার এই রূপ পরে তৈরি হয়েছে।

মায়াপুর শ্রীচৈতন্যমঠের সাধারণ সম্পাদক তথা ওই স্কুলের প্রাক্তন ভক্তিস্বরূপ সন্ন্যাসী মহারাজ জানান, বাগ্দেবী বা বিদ্যার দেবী হিসাবে সাধারণ ভাবে পূজিত সরস্বতীর পুজো বৈষ্ণবেরা করেন না। জড়বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী বলে দেবী সরস্বতী বৈষ্ণবদের অর্চনীয় নন। পরিবর্তে তাঁরা পুজো করেন পরাবিদ্যার দেবী শুদ্ধা সরস্বতীর। তিনি বলেন, ‘‘গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের কাছে চৈতন্যজায়া বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীই হলেন সেই শুদ্ধা সরস্বতী।” প্রসঙ্গত ১৯১৮ সালে স্থাপিত শ্রীচৈতন্যমঠ গঙ্গার পূর্ব তীরের প্রাচীনতম বৈষ্ণবমন্দির। সেই চৈতন্যমঠের প্রতিষ্ঠাতা ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী মহারাজ স্কুলেরও প্রতিষ্ঠাতা।

সন্ন্যাসী মহারাজ বলেন, “বৈষ্ণবীয় ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত ওই স্কুলে কোনও দিনই প্রথাগত সরস্বতী পুজো হয়নি। প্রতিষ্ঠাতা ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী মহারাজ সরস্বতী পুজোর দিনে মঠে শুদ্ধা সরস্বতী হিসাবে বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীরই পুজো করতেন। প্রথম থেকে স্কুলের ছাত্ররা সেই পুজোতেই অংশ নিত। স্কুলে পুজো হত না।” তাই দীর্ঘ পঁচাশি বছরের প্রথা ভেঙে মায়াপুর ঠাকুর ভক্তিবিনোদ ইনস্টিটিউটে অবশেষে পা রাখছেন দেবী সরস্বতী।

স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী মহারাজ। ১৯৩২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এত দিনের প্রথা ভাঙলেন কী ভাবে? স্কুলের প্রধানশিক্ষক সঞ্জন রায় বলেন, “আড়াই বছর হল স্কুলে যোগ দিয়েছি। প্রথম থেকেই একটা অভাব বোধ করতাম। দেখলাম স্কুলের ছাত্র শিক্ষক সকলেই সেই একই কষ্টের শরিক। তখন সবাই মিলে উদ্যোগী হলাম।”

কোনও ব্রাহ্মণ নন, পুজো করবেন চৈতন্যমঠের সন্ন্যাসী অভয়ানন্দ বন মহারাজ। তিনি জানান, “প্রচলিত সরস্বতী ধ্যানে পুজো হবে না। বৈষ্ণবীয় মতে গৌরাঙ্গদেবের পুজো এবং তাঁকে ভোগ দেওয়ার পরে সেই ভোগ নিবেদন করা হবে বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীকে। হবে হোম। অঞ্জলি দেবে পড়ুয়ারা।”

স্কুলে প্রথম সরস্বতী পুজোকে ঘিরে তুমুল উন্মাদনা পড়ুয়া এবং শিক্ষক সকলের মধ্যে। মণ্ডপ সাজিয়ে তুলেছে দশম শ্রেণীর সবনাজ খাতুন, ঐশি হাওলাদার, সুজানা মণ্ডল বা সুদেবী মণ্ডলেরা। দীর্ঘদিনের প্রথা ভেঙ্গে কেমন লাগছে? টিচার্স রুমে সবাই একসঙ্গে বলে উঠলেন “ ইতিহাস ছোঁয়ার রোমাঞ্চ।”

অন্য বিষয়গুলি:

Saraswati puja School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy