প্রতীকী ছবি
ধুলিয়ানের অনেক স্বর্ণকার আছে যারা মুম্বাইয়ে সোনার অলঙ্কার তৈরি করে। অনেকে নিজেই সোনার অলঙ্কারের ব্যবসা করে। বেশিরভাগ স্বর্ণকার শেঠের কাজ করে। অনেকে বংশ পরম্পরায় সোনার অলঙ্কার তৈরি করে আসছেন। নতুন প্রজন্ম নতুন ডিজাইন করে বাজার ধরার চেষ্টা করছে। আমার পুর্ব পুরুষ সবাই স্বর্ণকার। আমাদের নিজের দোকান ছিল না। বাবা ধুলিয়ানে এক সোনার দোকানে অলঙ্কার তৈরি করতেন। আমরা দুই ভাই পড়াশোনা করতাম। চার জনের সংসার ভলোই চলছিল। আমি মাধ্যমিক পরীক্ষা দেব তার আগে মা অসুস্থ হয়ে মারা যায়। আমাদের সংসার যেন দমকা হাওয়ায় ভেঙে পড়ল।
মাধ্যমিক পরীক্ষা চলে এল। পরীক্ষা দিলাম। বাড়িতে একজন মহিলার প্রয়োজন তাই বাবা কে আবার বিয়ে করতে হল। আমাদের পাড়ার এক দাদার সঙ্গে আমাকে ও ভাইকে মুম্বই পাঠিয়ে দিল। ভাই আমার চেয়ে চার বছরের ছোট। আমি মুম্বই যখন যাই তখন আমার বয়স ১৬ বছর, ভাইয়ের ১২ বছর। সোনার অলঙ্কার তৈরির কাজ শিখতে লাগলাম। এই কাজ শিখতে গিয়ে আমাকে অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। তবুও কাজ শিখেছি। মুম্বইয়ের এক শেঠের দোকানে কাজে চলে যাই। আমি যার আশ্রয়ে ছিলাম সে আমার পাড়ার আমাকে তার দোকান ঘর পরিস্কার করার ছাড়া অন্য কাজ কোনও দিন করতে দিত না। রাতে আমি স্বর্ণকারদের পাশে থেকে কাজ শিখেছি। শেঠ আমাকে প্রথমে ছোট ছোট কাজ দিয়ে পথ দেখিয়েছে।
এখন আমি আর ভাই দুজনেই শেঠের কাছে থাকি। সেখানে সোনার কাজ করি। বাড়িতে বাবা অসুস্থ। তার জন্য টাকা পাঠাই। চার বছর মুম্বাইয়ে আছি বাড়ি যাইনি।
লকডাউনের কারণে বাড়ি এলাম। প্রথম লকডাউন শুরু হতেই শেঠ বলল, ‘‘তোরা বাড়ি চলে যা, কারণ এখানে করোনা থেকে বাঁচতে পারবি না।’’ নিজের কেউ নেই। দুই ভাই এক সঙ্গে থাকতাম। নিজেরাই রান্না করতাম। লকডাউনে শেঠ খাবার পাঠিয়ে দিতেন। খাবার অসুবিধে হয়নি। শেঠ কে আমরা শ্রদ্ধা করি। তিনি যখন বলল ‘‘বাড়ি যা সব ঠিক হলে আমি তোদের ডেকে নেব’’ তখন চোখে জল এসেছিল। তার কথায় মার কথা মনে পড়ে গেল।
কিন্ত বাড়ি যাব কী করে। শেঠ বলল তার ব্যবস্থা তিনিই করবেন। দ্বিতীয় লকডাউন শেষে আমাকে ও ভাইকে একটি বাসে মুম্বই থেকে তুলে দিল। যে বাসে মেদিনীপুর ও মালদার অনেক শ্রমিক ছিল। রাস্তায় যেন না খেয়ে থাকি তার জন্য রুটি ও লাড্ডু প্যাকেটে দিয়েছিলেন। সেই খেয়ে বাড়ি পৌঁছই। বাড়ি বলতে বাবার সঙ্গে দেখা করে দিদার কাছে থাকছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy