স্টাফ ট্রেনে যাত্রা। কৃষ্ণনগর-শিয়ালদহ লাইনে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।
সোমবার সকাল সাড়ে সাতটা।
কৃষ্ণনগর থেকে ছাড়ল শিয়ালদহগামী স্টাফ ট্রেন। খুব একটা ভিড় নেই। তবে রেলের কর্মচারী ছাড়াও অনেকেই ট্রেনে উঠেছেন। কেউ দু’-একটা দূরের স্টেশনে যাবেন। কেউ বা আরেকটু দূরে। যাত্রীরা জানাচ্ছেন, সকালের ট্রেনে খুব একটা ভিড় থাকছে না। দেখা গেল, বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন থামতেই নানা পেশার লোকজন উঠে পড়ছেন ট্রেনে। রেলের কর্মী ছাড়া বাকি যাঁরা এই ট্রেনে যাতায়াত করছেন, বেশির ভাগই নিম্নবিত্ত মানুষজন।
তাহেরপুর থেকে ঝুড়ি ভর্তি আনাজ নিয়ে ট্রেনে উঠলেন সবিতা মণ্ডল। ফাঁকা ট্রেন, তবুও দাঁড়ালেন দরজায়। কোথায় যাবেন জিগ্যেস করতে জানালেন— রানাঘাট। ওখানে কয়েকটা বাড়িতে রোজ শাক-আনাজপত্র দিতে যান। সবিতার স্বামী আগে লোকাল ট্রেনে হকারি করতেন। ট্রেন বন্ধ থাকায় এখন দু’জনেই মাঠ থেকে আনাজ কিনে এনে, এই ভাবে আনাজ বিক্রি করছেন।
বীরনগর থেকে স্টাফ ট্রেনে উঠলেন সৌম্য রায়। এখন রোজ চাকদহ যান ওই ট্রেনে। আগে বাইকে যাতায়াত করতেন। স্টাফ ট্রেন ফাঁকা থাকায় এখন ট্রেনেই যাতায়াত করেন। চাকদহে কয়েক জনকে প্রাইভেটে পড়ান। আগে অনেক জন পড়ত। এখন করোনার কারণে অনেকেই পড়ছে না। তাই সকালে স্টাফ ট্রেনে গিয়ে দুপুরে বাড়ি ফিরে আসেন।
হাতে বেশ কিছু ব্যাগ নিয়ে, ট্রেনের আপাত ফাঁকা সিটে বসেছিলেন মাঝবয়সি এক ভদ্রলোক। গন্তব্য জিগ্যেস করতে বললেন, ‘‘করোনা হয়েছিল। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে দমদমে শ্বশুরবাড়িতে আছে। অনেক দিন পর দেখা হবে বাড়ির লোকের সঙ্গে। তাই কিছু আম কিনে নিয়ে আর নিজের জামাকাপড় সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি।’’
কিন্তু এখন তো প্রশাসনিক নির্দেশে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরনো বারণ। আর এই ট্রেন শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মচারীদের জন্য চালু। ভদ্রলোকের জবাব— ‘‘জানি, এমনিতে এখন যাওয়া যাচ্ছে না। এটা স্টাফ ট্রেন হলেও বাধ্য হয়ে এই ট্রেনেই যাচ্ছি।’’
দেখা গেল, সকালের বেশিরভাগ ট্রেন যাত্রীরাই নানা পেশার সঙ্গে যুক্ত। জিনিসপত্র নিয়ে যাতায়াত করছেন ওই স্টাফ ট্রেনে।
রানাঘাট থেকে কলকাতা নিয়মিত স্টাফ ট্রেনে যাতায়াত করেন অর্ণব বাগচী। তিনি বলেন, ‘‘কোনও কোনও সময়ে রেল রক্ষীরা অনেককেই ট্রেন থেকে নামিয়ে দেন। কড়াকড়ি কম থাকায় ছোটখাট কাজ করা লোকজন ট্রেনে যাতায়াত করেন। তাঁরা কিছু রোজগার করতে পারেন।’’
শান্তিপুরগামী ট্রেনে মনমরা হয়ে বসে আছেন একজন। নাম রবিন দাস। পেশায় হকার। লোকাল ট্রেনে কখনও খেলনা, আবার কখনও খাবার বিক্রি করতেন। এখন প্রায় বেকার। সাংবাদিককে ছবি তুলতে দেখে জানতে চাইলেন— ‘‘দাদা সাংবাদিক নাকি! বলতে পারেন কবে ট্রেন চালু হবে? আর পারছি না দাদা!’’
তাঁর হাতে এক ব্যাগ বাদাম। সে দিকে দেখিয়ে বলেন, ‘‘ট্রেনে লোক নেই। এই বাদাম বিক্রি করে সংসার চলছে না। করোনায় মরব কিনা জানি না। কিন্তু এ ভাবে চললে না খেয়ে মরে যাব, এটা নিশ্চিত। আপনারা তো কত খবর করেন, আমাদের কথাও একটু লিখুন!’’ তিনি জানালেন, রেলের কর্মচারী ও স্টাফ ছাড়া অচেনা কাউকে উঠতে দেখলে মানা করেন রেলরক্ষীরা। তবে মানবিকতার খাতিরে অনেক সময় অনেককে ছেড়েও দেন।
পেটের খিদে যে সবার চেনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy