প্রতীকী চিত্র।
চার দিন ভিড় সামলে বিক্রিবাটা চালানোর পর রবিবার রাতে মালপত্র গুছিয়ে, পয়সাকড়ির হিসেব মিলিয়ে সবে শুতে গিয়েছিলেন দোকানিরা।তখনই হল হামলা!
দশ-বারো জন দুষ্কৃতী অনেকটা সিনেমার কায়দায় মুখে গামছা বেঁধে মেলায় ঢুকে শূন্যে গুলি চালাতে লাগল। বোমাও পড়ল কয়েকটা। রবিবার রাত বারোটায় চাপড়ার হাতিশালা গ্রামে লালন-বাউল মেলা শেষ হয়েছিল। তার পর রাত প্রায় তিনটে পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা হিসেবপত্র মিলিয়ে শুতে গিয়েছিলেন। আচমকা হামলায় তাঁরা প্রাণভয়ে দিশেহারা হয়ে পালাতে লাগলেন। যে যেখানে পারলেন লুকিয়ে পড়লেন।
গত ন’ বছর ধরে হাতিশালা গ্রামে এই মেলা হয়ে আসছে। এমন অভিজ্ঞতা গ্রামবাসী বা ব্যবসায়ীদের হয়নি। অভিযোগ, রাত সাড়ে চারটে নাগাদ দুষ্কৃতীরা মেলা প্রাঙ্গনে ঢুকে বোমা-গুলি চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা মেলা চত্বরে ঢুকেই দু-তিনটি দলে ভাগ হয়ে যায়। তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র-র পাশাপাশি দা, লোহার রডও ছিল। তারা একের পর এক দোকানে ঢুকে জিনিসপত্র, ব্যবসায়ীদের মোবাইল, ও জিনিসপত্র বিক্রির টাকা লুট করতে থাকে। যাঁরা টাকা দিতে অস্বীকার করেন তাঁদের বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। প্রায় তিরিশ মিনিট তাণ্ডব চালিয়ে তারা চলে যায়। যাতে কেউ তাদের পিছু ধাওয়া না করতে পারে তার জন্য যাওয়ার সময় তারা আবার কয়েকটি বোমা ফাটায় বলে অভিযোগ।
নিরাপত্তার জন্য মেলায় ১৬টি সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। মেলা শেষ হয়ে যাওয়ায় সেগুলো খুলে ফেলা হয়েছিল বলে মেলা কর্তৃপক্ষের দাবি। মেলা কমিটির সভাপতি ইউনিস শেখ বলেন, “আসলে কেউ ভাবতেই পারেনি যে, এমন হতে পারে।” তবে হামলার গতিপ্রকৃতি দেখে অনেকেরই মনে হয়েছে, দুষ্কৃতীরা আশপাশের লোক। মেলার খুঁটিনাটি তারা জানে। মেলা কমিটির সম্পাদক পৃথ্বীশ সিংহরায় বলছেন, “বাইরের কেউ গ্রামে ঢুকে এমন করার সাহস দেখাবে বলে মনে হয় না। আমাদের ধারণা, গ্রামেরই কেউ বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।” হাতিশালা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের মাসুদুল মণ্ডল বলছেন, “আমরা পুলিশকে বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব দুষ্কৃতীদের খুঁজে বের করতে হবে।”
মেলার ডেকরেটিংয়ের দায়িত্বে থাকা ইজারুল শেখ তাঁর ছেলে রাকেশ শেখকে মেলায় রেখে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। মাইকম্যানের কাছ থেকে হামলার ব্যাপারে ফোন পেয়ে তিনি আবার মোটরবাইক চালিয়ে মেলা প্রাঙ্গনে এলে তাঁকে লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীরা গুলি চালায় বলে অভিযোগ। তার ছেলে রাকেশকেও মারে। রাকেশের দাবি, “আমি আর এক জন প্রতিবন্ধী বাদাম বিক্রেতা মণ্ডপের নীচে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ বোমার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। দেখি, তিন জন মুখে গামছা বাঁধা লোক আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে। হাতে দা আর পিস্তল। আমার আর ওই বাদামওয়ালার কাছ থেকে ওরা টাকা ছিনিয়ে নেয়।”
ইজারুল শেখ বলেন, “আমার মাইক ম্যান স্টেজের নীচে লুকিয়ে পড়েন। সেখান থেকেই কোনওমতে আমাকে ফোন করে খবর দেন। আমি এসে দেখি, মেলাচত্বর পুরো ফাঁকা। আমি ছেলের কাছে যেতেই ওরা আমাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আমি পাঁচিল টপকে এক জনের বাড়ির ভিতরে লুকিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy