বেহাল নিকাশি। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের রথতলায়। নিজস্ব চিত্র
মাত্র আধ ঘণ্টার বৃষ্টি। তা-ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে মিনিট পঁয়তাল্লিশ হল। কিন্তু জল যেন আর নামতেই চায় না।
২০ নম্বর ওয়ার্ডে পোস্ট অফিস মোড় থেকে চ্যালেঞ্জ মোড় পর্যন্ত রাস্তা তখনও জল থইথই অবস্থা। হাঁটু-সমান জল ভেঙে স্কুলে যাচ্ছে পড়ুয়ারা। এই এলাকায় তিনটি হাইস্কুল। বর্ষা নামা ইস্তক এ ভাবেই তাদের যাতায়াত করতে হয়। দিনের পর দিন তো আর স্কুলে অনুপস্থিত থাকা সম্ভব নয়।
এমনটাই চলে আসছে বছরের পর বছর। কৃষ্ণনগরের সবচেয়ে জনবহুল এই এলাকাই শহরের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র। কিন্তু আকাশ কালো করলেই সকলে পড়ি কি মরি করে চম্পট দিতে চান। শহরের অন্যতম নিচু এলাকা এটি। ফলে আশেপাশের এলাকার জল এখানে নেমে আসে। যদিও সম্প্রতি চাষাপাড়ার ভিতর দিয়ে একটা বড় নর্দমা হয়েছে। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বসানো হয়েছে দুটো ২০ হর্স পাওয়ার পাম্প। তাতে আগের চেয়ে দ্রুত জল নামলেও সমস্যা পুরোপুরি মেটেনি।
প্রায় একই দশা ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাঁঠালপোতার সুকান্ত সরণী, বারোয়ারিতলা, সিংহবাড়ির পুকুর এলাকায়। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে তালপুকুর রোডের ছবিটাও কিছু আলাদা নয়। অত্যন্ত নিচু এই এলাকায় আশপাশের এলাকার জল নেমে আসে। এখানেও একটা ২০ হর্স পাওয়ার পাম্প বসানো হয়েছে। তবে সমস্যা মেটেনি। শহরের আর এক নিচু এলাকা ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের পল্লিশ্রীও তথৈবচ। বছর তিন আগে সুষ্ঠু নিকাশির দাবিতে এলাকার মানুষ কৃষ্ণনগর স্টেশনে যাওয়ার রাস্তা রাত পর্যন্ত অবরোধ করে রেখেছিলেন। এখন এখানেও একটা বড় নিকাশি নালা তৈরি করা হয়েছে। বসানো হয়েছে দুটো ২০ হর্স পাওয়ার পাম্প। তাতে সমস্যা আগের থেকে অনেকটাই কমেছে ঠিকই। কিন্তু পুরো রেহাই মেলেনি। শহরের এক প্রান্তে ঘূর্ণী ও রাধানগরের ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় সে ভাবে নিকাশি ব্যবস্থা গড়েই ওঠেনি।
কেন কৃষ্ণনগরের মতো একটা জেলাসদরের নিকাশির এমন হাল?
নিচু এলাকা
প্রাচীন এই শহর দীর্ঘ সময় ধরে গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিত ভাবে। রাস্তাঘাট বা নিকাশির সুষ্ঠু কোনও পরিকল্পনা কোনও দিনই সে ভাবে ছিল না। তার উপরে এই শহরটা অনেকটা বেসিনের মতো। কোনও কোনও এলাকা এতই নিচু যে সেখানে নিকাশি নালা তৈরি করা হলেও তার ঢাল উল্টো দিকে। ফলে বর্ষায় জল বেরিয়ে যাওয়া দূরের কথা, বরং উল্টে চাপ দেয়। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটা বড় নালা তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে অনেকগুলি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প বসানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা যায়নি। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জলঙ্গির জলস্তর বর্ষায় শহরের জলস্তরের চেয়ে উঁচু হয়ে যায়। সেটাও বড় সমস্যা।
অঞ্জনা দখল
আর একটা বড় সমস্যা হল অঞ্জনা নদীর খাত দখল হয়ে যাওয়া। প্রকৃতিই এক সময়ে এখানে নিকাশির ব্যবস্থা করে রেখেছিল। কিন্তু একটা সময় পর্যন্ত পুরসভার উদাসীনতা এবং সেই সঙ্গে শহরের বাসিন্দাদের একাংশের অত্যাচারে সেই প্রাকৃতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। দিনের পর দিন নদীর দুই পার দখল হতে-হতে বর্তমানে তা খালে পরিণত হয়েছে। বর্ষার বিপুল জলরাশি তো দূরের কথা, সারা বছরের স্বাভাবিক জলই বহন করার ক্ষমতা তার নেই। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, এই নদী সংস্কার করার জন্য ‘গ্রিন হাউজ়’ প্রকল্প থেকে ১ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অঞ্জনাকে দখলমুক্ত করতে যাওয়া মাত্র বেশ কিছু লোক হাইকোর্টে মামলা ঠুকে দেওয়ায় সেই প্রকল্পের কাজ বিশ বাঁও জলে।
প্লাস্টিক ও সাফাই
এই ক’দিন আগে পর্যন্ত কৃষ্ণনগরে প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার চলেছে। তা ছাড়া ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৭, ৮, ৯, ১৬, ১৭ ও ২৩ নম্বরের মতো অনেক ওয়ার্ডেই নিয়মিত নর্দমা পরিষ্কার করা হয় না বলে অভিযোগ। যে কারণে ছোট-বড় নর্দমা থাকলেও জল বার হতে
পারে না।
পুরসভার আশ্বাস, কেন্দ্রীয় ভাবে নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজার জন্য পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষার ভিত্তিতে প্রকল্প তৈরি করে ‘স্টেট আরবান ডেভলপমেন্ট অথরিটি’র কাছে পাঠানো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy