সাহিত্য থেকে ভূগোল, সর্বত্র বাংলা তথা পশ্চিমবঙ্গের পরিচয় গঙ্গাবিধৌত সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা রাজ্য হিসাবে। তাই নতুন বছরের মুখেই যখন এ খবর পাওয়া গেল যে, গত সাত বছরে পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গা-তীরবর্তী অঞ্চলে ২১১৫ হেক্টর জায়গা জুড়ে মোট ২২,১৮,৪৪৯টি গাছ লাগানো হয়েছে, তখন মনে যুগপৎ গর্ব ও তৃপ্তি জাগা স্বাভাবিক, সবুজের অভিযান তো চমৎকার হচ্ছে! কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’ (এনএমসিজি)-র ‘ফরেস্ট্রি ইন্টারভেনশন প্রোজেক্ট’-এর অধীনে পশ্চিমবঙ্গ-সহ গঙ্গা অববাহিকা অঞ্চলের পাঁচটি রাজ্যের সরকারকে ২০১৬-১৭ থেকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সবুজায়নের। প্রচুর অর্থ বরাদ্দও হয়েছিল কেন্দ্রের তরফে। এনএমসিজি-রই সাম্প্রতিক রিপোর্টে এ বার জানা গেল, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বন দফতর এই সাত বছরে প্রায় ২৯.৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২২ লক্ষেরও বেশি গাছ লাগিয়েছে।
সরকারের কাছে নাগরিকের হিসাব চাওয়া কোনও অন্যায় নয়। বরং এ ভাবে ভাবা ভাল— সরকারই যদি তার নানা কাজের খতিয়ান, ব্যয়-বরাদ্দ’সহ তাবৎ হিসাব স্বচ্ছ স্পষ্ট ভাবে নাগরিকদের জানায়, তা হলেই আর আঙুল তুলতে হয় না। সেটাই কি প্রত্যাশিতও নয়? এখন পরিবেশবিদ-সহ বিশেষজ্ঞ মহলে এই প্রশ্নটি ঘোরাফেরা করছে, নদীতীরবর্তী অঞ্চলে রাজ্য সরকারের ২২ লক্ষাধিক গাছ লাগানোর তথ্যটি চমৎকার সন্দেহ নেই, কিন্তু তার পূর্ণাঙ্গ হিসাবটি কোথায়, কার কাছে আছে? সংশয়বাদী কেউ যদি আরও একটু চাঁছাছোলা ভঙ্গিতে এই প্রশ্ন করে বসেন যে, গোনাগুনতি ২২,১৮,৪৪৯টি গাছই যদি বা লাগানো হয়েও থাকে, এত গাছ গুনল কে?— সরকারের তরফে ঢোঁক না গিলে সেই উত্তরটি পাওয়া যাবে কি? অথচ এ খুব কঠিন কাজ নয়, সরকার কত গাছের চারা কিনেছিল তার হিসাব সরকারি ভাবেই থাকার কথা, কেননা কেন্দ্রের অর্থ বরাদ্দও সেই অনুযায়ীই হয়েছে। এনএমসিজি-র রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য যদি রাজ্য সরকারই জুগিয়ে থাকে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যাও তার কাছে থাকবে নিশ্চয়ই!
সমগ্র ব্যাপারটিতে নিহিত যে নাগরিক সংশয়, তা অমূলক নয়। কারণ প্রচলকথার গল্পের মতোই পশ্চিমবঙ্গ সরকারও ‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই’। গত বছরই চারা রোপণের খরচে আর্থিক দুর্নীতির সন্দেহে বিদ্ধ হয়েছিল খোদ কলকাতা পুরসভা, পরে তারা শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। এমনকি আমপান বা ইয়াসের জেরে শহরে কত গাছ উপড়ে পড়েছে, তার ক্ষতিপূরণেই বা নতুন কত গাছ লাগানো হল, তথ্যের অধিকার আইনে তার ওয়র্ডভিত্তিক হিসাব চাওয়া হলেও পুরসভার সদুত্তর মেলেনি, তাদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনও তথ্যই ছিল না। নদীতীরে সবুজায়ন যদিও কলকাতা পুরসভার নয়, সার্বিক ভাবে রাজ্য সরকারের ব্যাপার, তবু এ ক্ষেত্রে ২২,১৮,৪৪৯-এর মতো সংখ্যাটি দেখে ধন্দ জাগা স্বাভাবিক, এ বার এত নিখুঁত তথ্যটি পাওয়া গেল কী ভাবে? আর যদি ধরে নেওয়া যায় যে সত্যিই খুব পেশাদার কাজ হয়েছে, তবে নিশ্চয়ই এমন আশা করা অনুচিত হবে না যে, এত বিপুলসংখ্যক গাছের কতগুলি বেঁচে থাকল কি মরে গেল, সেই হিসাবটিও রাজ্য সরকার রাখছে? এই সবই হিসাবেরও ঊর্ধ্বে একটি মানসিকতার ব্যাপার, দায়বদ্ধতার মানসিকতা। নতুন বছরের শুরু থেকে রাজ্য সরকার এই মানসিকতা নবোদ্যমে অভ্যাস করুক, তাতে অনিয়ম ও বেহিসাব দুই-ই কমবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy