Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

পাড়া গড়তে ঝাঁপালেন সবাই

ভাঙনে বাড়ি তলিয়ে গিয়েছিল কবেই। তার পরেও বার ছয়েক ঠাঁই নড়েছে নবীন রাজোয়ারের।

ভাঙছে নদীর পাড়। দেখাচ্ছেন স্থানীয়েরা। নিজস্ব চিত্র

ভাঙছে নদীর পাড়। দেখাচ্ছেন স্থানীয়েরা। নিজস্ব চিত্র

সন্দীপ পাল
শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৯ ০২:৪৮
Share: Save:

ভিটেমাটির তবু কাগজপত্র থাকে, কিন্তু নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের? অথচ যেখানে এক সময় বাড়ি ছিল সেখানে জেগে উঠেছে চর। মাঝখানে তির তির করে বইছে ভাগীরথী। তাই দেখে বুক ফাটে নবীনের।

ভাঙনে বাড়ি তলিয়ে গিয়েছিল কবেই। তার পরেও বার ছয়েক ঠাঁই নড়েছে নবীন রাজোয়ারের। তলিয়ে যাওয়া বাড়িঘরের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন। এখন চর জেগে ওঠায় পুরনো স্মৃতিগুলো মনে পড়ছে বারবার।

নবীনের বয়স প্রায় ষাট ছুঁই ছুঁই। কালীগঞ্জের বসন্তপুর গ্রামে ধাওয়ারা পাড়ায় বসতবাড়ি গড়েছেন। ২০০০ সালে কালীগঞ্জে জগৎখালি বাঁধ ভেঙে গেলে ভিটেমাটি হারিয়েছিল প্রায় ১০০টি পরিবার। নবীন রাজোয়ারের পরিবারও ছিল সেই দলে।

স্থানীয়েরা জানান, ১৯৮৫ সাল নাগাদ কালীগঞ্জের বসন্তপুরে ভাঙন শুরু হয়। ১৯৯৯ ও ২০০০ সালে ভয়াবহ বন্যা হয়। নদীর গর্ভে হারিয়ে যায় প্রায় গোটা গ্রাম। ভিটেমাটি হারান নবীন রাজোয়ারেরা। তিনি জানান, ভাঙনে চাষের জমি তো বটেই, তলিয়ে যায় প্রাথমিক স্কুল। গ্রামের মন্দির। এখন সেই সব জায়গায় জেগে উঠেছে চর।

নবীন বলেন, ‘‘চর এখন মাঠ জমি। পড়ছে মুর্শিদাবাদ জেলায়। বলতে গেলে ওই চরে আমাদের জমি রয়েছে। কিন্তু, হাতে তো কোনও নথি নেই। ফলে ওই জমিতে আমাদের কোনও অধিকার নেই।’’

ভাঙনে ভিটেমাটি হারানোর কথা এখনও স্পষ্ট মনে পড়ে ওই গ্রামেরই আর এক বাসিন্দা সুশীল রাজোয়ারে। তিনি জানান, ভাদ্র মাসের সংক্রান্তির দিন থেকেই অঝোরে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছিল। দু’দিন পর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকল। হাতের কাছে যা ছিল তা-ই নিয়ে সকলে বাঁধে ঠাঁই নিয়েছিলেন। কিন্তু জলের তোড়ে ভেসে গেল সব। সুশীল বলেন, ‘‘প্রথম চার দিন পেটে কিছুই পড়েনি। পরে প্রশাসনের দেওয়া চিঁড়ে-মুড়ি খেয়ে দিন কেটেছে।’’

তিনি জানান, ভাঙনে ভিটেমাটি হারানোর পর কোথায় যাবেন সেই চিন্তায় পড়েছিলেন স্থানীয়েরা। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন, বাঁধের এ পারে এসে নতুন পাড়া গড়বেন। কিন্তু সবই তো সুগার মিলের জায়গা। তাই সকলে আখ কাটার অপেক্ষায় রইলেন। আখ কাটা হতে এক টুকরো জমি পেতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তাঁরা। তা করতে গিয়ে মিলের পেয়াদা ও প্রশাসনের তাড়া খেতে হয়েছে। জুটেছে মারধরও। কিন্তু তারাঁও বা যাবেন কোথায়। শেষে মিলের লোকজন হাল ছেড়ে দিল। দুঃখের কিস্সা অবশ্য সেখানে শেষ হয়নি। ২০০৬ সালে ফের বন্যা হয়। সে বারেও বাড়িঘরে ঢুকে পড়ে জল।

গ্রামবাসীদের একাংশ জানান, বন্যার পর প্রশাসন মাটি বাঁধ অনেক উঁচু করেছে। তবে গত বছর নদী পাড় ভাঙতে দেখা গিয়েছিল। তবে এখনও ভারী বর্ষার দেখা মেলেনি। তাই শঙ্কার জমাট বেঁধে আছে মনে।

অন্য বিষয়গুলি:

River Monsoon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy