ঘরময় ছোট-বড় চাঙাড়ি-চুবড়িতে শাড়ির নৌকা, ধুতির প্রজাপতি, মশলার ঘরবাড়ি। আর এ সবের মাঝে দিব্যি জায়গা করে নিয়েছে সদ্য কেনা ইঁদুর ধরার কল!
আজ্ঞে হ্যাঁ, দিন কয়েক আগে এক মাত্র ছেলের বিয়েতে ইঁদুরের দুষ্টুমি ঠেকাতে কোনও ঝুঁকি নেননি বেলডাঙার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী বিমল ঘোষ। নেবেনই বা কী করে! হালে ইঁদুরের দৌরাত্ম্য যা বেড়েছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখা গেল, বিছানার চাদরটা নিপুণ ভাবে কাটা। রাতে ঘুমোনোর সময় মশারির কোণাটা হাওয়া! আর যে কি না এই কাটাকুটি খেলছে সেই মুষিক বাবাজির নাগাল পাওয়া আরও কঠিন।
এ অবস্থায় দিন পড়েছে বিয়ের। তত্ত্বের হাজারও জিনিস কেনাকাটা করে বাড়িতে রাখা হচ্ছে। ছেলের শ্বশুরবাড়ির লোকজন যদি তত্ত্ব খুলে দেখেন, সেগুলো ইঁদুরে কাটা? নাহ্, আর ভাবতে পারেননি বিমলবাবু। তার পরেই বাজার থেকে কেনা হয়েছে ইঁদুর ধরার কল। রাখা হয় তত্ত্বের মাঝখানে। যেন সেটাও আর একটা তত্ত্ব!
বিমলবাবু বলছেন, ‘‘এমন মোক্ষম প্যাঁচে বিয়ের তত্ত্বে দাঁত ফোটাতে পারেনি তারা। দু’একটা ধেড়ে ধরাও পড়েছে। কিন্তু কাটাকুটি খেলা এখনও একেবারে বন্ধ হয়নি।’’
বিষ্যুদবার সকাল সকাল স্নান সেরে ঠাকুর ঘরে ঢুকেছিলেন বেলডাঙার গীতা মুখোপাধ্যায়। প্রসাদের থালায় নকুলদানা দিয়ে তিনি প্রণাম করছিলেন। কিন্তু চোখ খুলতেই তিনি দেখেন, প্রসাদের থালা থেকে নকুলদানা উধাও। বৃদ্ধা গীতাদেবী আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন, ‘‘এত দিন বাদে বুঝি মুখ তুলে চাইলে ঠাকুর?’’ কিন্তু ভুল ভাঙল দু’দিন পরে। পুজোয় বসার আসন, সলতে, ঝুড়িতে রাখা কলা এমনকী ঘরের অন্য জিনিসপত্রও কুটিকুটি করে কাটা। গীতাদেবী বুঝতে পারেন, এ কাজ গণেশ নয় তার বাহনের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সম্প্রতি বেলডাঙা ও লাগোয়া এলাকায় ইঁদুরের দৌরাত্ম্য অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। কাটাকুটি তো বটেই, বাড়ির আলুটা, কলাটা পর্যন্ত উধাও হয়ে যাচ্ছে। আর সেই মুষিক কুলকে রুখতে নানা রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন লোকজন। বিক্রি বেড়েছে শুধু ইঁদুর-কল, ইঁদুর মারা বিষের। চাহিদা বেড়েছে কাঠের মিস্ত্রিরও। কিন্তু এমন বাড়-বৃদ্ধি হল কী করে তাদের?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘‘এ নতুন কোনও ঘটনা নয়। শীত শেষে ইঁদুর একটু বাড়ে। এটা তাদের বংশ বৃদ্ধির চক্রের মধ্যে পড়ে।’’ তাঁরা জানাচ্ছেন, শীতে, মাঠের ধান সুড়ঙ্গে তুলে ছানাপোনাদের খাইয়ে ভাঁড়ার প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে এ সময়ে। বাধ্য হয়েই শীত শেষে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে লোকালয়ে। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে বলেই অনুমান তাঁদের।
ইঁদুর সামাল দিতে বেড়েছে কাঠের কারবারিদের ব্যস্ততাও।
বেলডাঙা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা তপতী চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে যেমন বেশ কয়েক দিন ধরে কাজ করছেন এলাকার দু’জন কাঠমিস্ত্রি। তপতীদেবী বলছেন, ‘‘দু’বছর আগে বাড়ি তৈরি হয়েছে। এখনই মিস্ত্রির দরকার ছিল না। কিন্তু ইঁদুর যে ভাবে চৌকাঠ কেটে ঘরে ঢুকে তাণ্ডব চালাচ্ছে, সেখানে মিস্ত্রি না ডেকে উপায় ছিল না। তাঁরাই এখন বাড়ির নানা জায়গার ফাঁক ফোকড় বন্ধ করছেন। ইঁদুর রুখতে এখন প্রতিদিন সাড়ে সাতশো টাকা করে মিস্ত্রিদের মজুরি দিতে হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy