Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
১৮-১৮০ টাকা, দেদার বিক্রি জেলা জুড়ে

ফুল-পাথর, ডোরেমনে বদলাচ্ছে রাখি

তবে সম্প্রীতির বন্ধন রাখি এখন শুধুমাত্র একটুকরো হলুদ সুতো নয়। তার গড়নে যেমন আমূল পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। তেমনই বিস্তার ঘটেছে রাখির বাণিজ্যিক দিকেরও। বছরভর রাখি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষ।

কারিগর: রবিবারের জন্য তৈরি হচ্ছে ফুলের রাখি। নিজস্ব চিত্র

কারিগর: রবিবারের জন্য তৈরি হচ্ছে ফুলের রাখি। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০২:৪৫
Share: Save:

হলুদ রঙে ছোপানো এক টুকরো সুতো। তারই জোরে এক কবি বেঁধে ফেলতে চেয়েছিলেন দু’টি জাতিসত্তাকে। রুখতে চেয়ে ছিলেন দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের চক্রান্তকে। ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ রাখিবন্ধনকে দিয়েছিলেন অন্য মাত্রা। তার পর থেকে সময় যত গড়িয়েছে, উৎসবপ্রিয় বাঙালি রাখিবন্ধনকে ঘিরে ততই মেতে উঠেছেন। বাঙালির তেরো পার্বণের একটি হয়ে গিয়েছে রাখিবন্ধন। মঠ-মন্দিরের বৈষ্ণবীয় পরিমণ্ডল ছেড়ে রাখিপূর্ণিমা হয়ে উঠেছে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্প্রীতির পবিত্র তিথি।

তবে সম্প্রীতির বন্ধন রাখি এখন শুধুমাত্র একটুকরো হলুদ সুতো নয়। তার গড়নে যেমন আমূল পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। তেমনই বিস্তার ঘটেছে রাখির বাণিজ্যিক দিকেরও। বছরভর রাখি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষ। নদিয়াও ব্যতিক্রম নয়। নানা রঙের, নানা ঢঙের রাখির বিকিকিনি ঘিরে ব্যস্ত নদিয়ার সদর থেকে মফস্সল। বিক্রেতারা বলছেন, কয়েক বছরের মধ্যে রাখির ডিজাইনে বিপ্লব ঘটে গিয়েছে।

নবদ্বীপের রাখি ব্যবসায়ী অশোক চক্রবর্তী জানান, কমপক্ষে একশো রকমের ডিজাইন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তাতেও একটা বড় অংশের ডিজাইন বাদ রয়ে গিয়েছে। সোনার রিস্টলেটের অনুকরণে পাথর বসানো একশো-দেড়শো টাকা দামি রাখি থেকে পঞ্চাশ পয়সার তুলোর রাখি— সবই বিকোচ্ছে বাজারে।

এ বারের রাখির বাজার ছেয়ে গিয়েছে সস্তার চিনে রাখির সম্ভারে। সেখানে ডোরেমন, পোকেমন, ছোটা ভিম থেকে অ্যাংরি বার্ড— কী নেই! স্থায়ী অস্থায়ী মিলিয়ে কম-বেশি শতাধিক রাখির দোকানে নানা ধরনের রাখির বিকিকিনি চলেছে গত রবিবার থেকে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাওয়া রাখির ডিজাইন ঘিরে উঠতি প্রজন্মের আগ্রহও চোখে পড়ার মতো। স্টোন দিয়ে তৈরি ব্রেসলেট রাখি কয়েক বছর ধরেই বাজারে হিট। সেই সঙ্গে এ বার মাটি-কাঠ ইত্যাদি দিয়ে তৈরি নিত্যনতুন রাখির চাহিদা বাড়ছে।

পাইকার নন্দ রায় বলেন, “একটা সময় রানাঘাটেই রাখি তৈরি হত। কিন্তু এখন সব রাখি কালনায় বেশি রাখি হয়।’’ তিনি জানান, কালনার রাখি প্রস্তুতকারকেরা এখন নবদ্বীপের বিভিন্ন এলাকার বাড়ি-বাড়ি রাখির তৈরির বরাত দিচ্ছেন। ফলে, বাড়ির মেয়েদের বিকল্প উপার্জনের পথ তৈরি হয়েছে।

নবদ্বীপ এই এলাকার অন্যতম বড় রাখি বিক্রয় কেন্দ্র। সমুদ্রগড় থেকে সালার। নদিয়া ছাড়িয়ে বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ জুড়ে নবদ্বীপের রাখির বাজার ছড়ানো। শুক্রবার ভিড়ে ঠাসা দোকানে খরিদ্দার সামলাতে হিমসিম খাচ্ছিলেন অশোক চক্রবর্তী এবং তাঁর তিন কর্মচারী। কেমন দামে রাখি বিক্রি হচ্ছে এ বার? উত্তরে তিনি জানান, “পাইকারি ১৮ টাকা থেকে ১৮০ টাকা ডজন দরের রাখির চাহিদাই বেশি।’’

রবিবারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফুলের রাখির নির্মাতারা। কয়েক বছর যাবৎ গোলাপ, রজনীগন্ধা, সূর্যমুখী ইত্যাদি ফুল দিয়ে টাটকা ফুলের তৈরি রাখির ভীষণ চাহিদা। দশ থেকে পঞ্চাশ টাকার মধ্যে ওই রাখি দিনের দিন তৈরি করে বিক্রি করেন রাজু সরকার, কুশ দেবনাথেরা। ধর্ম সরকার বলেন, “ফুলের রাখি চাহিদা বাড়ছে। গত বছরের চেয়েও এ বার ভাল কেনাবেচা হবে, মনে হচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Doraemon Raksha Bandhan Festival
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE