Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ভেজা সাঁঝেও শব্দের হুঙ্কার

অনেকের ধারণা হয়েছিল, এ বার দেদার ফানুস বিক্রি হওয়ায় রাত হবে আকাশ জুড়ে উড়ন্ত প্রদীপের। কিন্তু এলোমেলো ভিজে হাওয়া সে আশায় জল ঢেলে দেয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২৪
Share: Save:

বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়াও দমাতে পারল না। পুলিশের হুঁশিয়ারিকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শব্দবাজি জানান দিল, তারা ময়দানে আছে।

হয়তো আগের বছরের চেয়ে একটু কম। কিন্তু পুলিশ যেমন ধরপাকড়ের হিসেব দিচ্ছিল, তাতে যতটা নিঃশব্দ দীপাবলি হবে বলে মনে করা হচ্ছিল, তা একেবারেই অসার প্রমাণ হল। রাত ঘন হতেই দুমদাম-ফট। শেলের আওয়াজের আড়ালেই চকোলেট আর পটকার উঁকিঝুঁকি।

অনেকের ধারণা হয়েছিল, এ বার দেদার ফানুস বিক্রি হওয়ায় রাত হবে আকাশ জুড়ে উড়ন্ত প্রদীপের। কিন্তু এলোমেলো ভিজে হাওয়া সে আশায় জল ঢেলে দেয়। বেসামাল হয়ে গিয়ে, আগুন ধরে বহু ফানুস আর বাতাসে ভাসতেই পারেনি। বৃষ্টিকে চ্যালেঞ্জ করে সাঁই-সাঁই উঠেছে বেপরোয়া কিছু রকেট, তুবড়ি জ্বলেছে দুলে-দুলে হাওয়ার আঁচলে উচ্ছল ফুলকি উড়িয়ে। ঘুরেছে চরকিও। সবই কম অন্য বারের চেয়ে। আর আড়ালে-আবডালে, পড়শির ছাদে হঠাৎ-হঠাৎ ধমকে উঠে চকোলেট বোমা জানান দিয়েছে, কিছুরই পরোয়া সে করে না। না বৃষ্টির, না পুলিশের।

বহরমপুরে এক দোকানের সামনে টেবিল পেতে বিক্রি হচ্ছিল রঙমশাল, চরকি, ফুলঝুরি। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই দোকানের মালিক বের করে দিলেন চকোলেট বোমার প্যাকেট। পাশেই মিষ্টির দোকানের সামনের বেঞ্চে অন্য কিছু বাক্সের মধ্যে ওগুলো রেখে দিয়েছেন তিনি। সাইজ অনুয়ায়ী এক ডজন চকোলেটের দাম পড়েছে ১৫০-২৫০ টাকা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই তার মহিমার নমুনা মিলছিল, শুক্রবার কালীপুজোর রাতে হাঁকডাঁক শোনা গেল যথারীতি।

কল্যাণীতে এমনিতে বোমা-পটকা ফাটে মহালয়ায়। কালীপুজোর রাতে সেখানেও শোনা গেল বোমার শব্দ। চাকদহ, রানাঘাট, নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর — কোনও জায়গা বাদ নেই। যদিও নবদ্বীপের পাইকারি বাজি ব্যবসায়ী নন্দ রায় থেকে কৃষ্ণনগরের প্রবীণ স্বদেশ রায় সকলেই বলছেন, শব্দের দাপট এ বার অন্য বারের চেয়ে কম। সেটা কালীপুজোর ঠিক আগে পুলিশি ধরপাকড়ের কারণে হোক বা বৃষ্টিতে সন্ধে মাটি হওয়ার কারণেই হোক।

গোলমালও হয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বহরমপুরের বানজেটিয়া এলাকার ১ নম্বর ভাটাপাড়ায় এক যুবকের মাথায় চকোলেট বোমা ছুড়ে মারে পড়শি কয়েক জন যুবক। তাতে তাঁর খানিকটা চুল পুড়ে গিয়েছে। এই দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক মারপিটও হয়। তবে কাউকে শ্রীঘরে যেতে হয়নি।

বোমা-পটকার উৎপাতে বাড়ির পোষ্যদের কষ্টের কথা উঠে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টেও। কেউ লিখেছেন, ‘আমার ব্ল্যাকি শব্দবাজির আওয়াজে ভয়ে খাটের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। ভয়ে বের হতে চাইছে না।’ কারও দেওয়াল বলছে, ‘সকাল থেকে আমার পোষ্য ঠিকই ছিল। সন্ধ্যার পর থেকে বাজির তাণ্ডবে একদম নেতিয়ে পড়েছে আর কেঁপে কেঁপে উঠছে।’’

পুলিশ অবশ্য বলছে, কোথাও নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটেনি। কোনও লিখিত অভিযোগ তো হয়ইনি, থানায় কেউ ফোনও করেননি। মোদ্দা কথা, শব্দবাজি ফাটার কথা পুলিশ মানতে রাজি নয়। কবেই বা মানে?

অন্য বিষয়গুলি:

sound crackers rain evening
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE